নিউজ ডেস্ক : কেন্দ্রের মতো স্বস্তিতে নেই তৃণমূল পর্যায়ের রাজনীতিও। বিশেষ করে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে বিরাজ করছে অস্বাভাবিক অবস্থা। শিখর থেকে শেকড়ে সব স্তরেই রাজনীতি হয়ে পড়েছে অনেকটা ছন্দহারা। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বিরোধী দল বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঠেই দেখা যাচ্ছে না। মামলা-হামলার ভয়ে অনেকেই এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। আবার অনেকে রয়েছেন কারাবন্দি। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী, ময়মনসিংহের গফরগাঁও, নরসিংদীর পলাশ, ফরিদপুরের ভাঙ্গা, মানিকগঞ্জের শিবালয় ও বগুড়ার শেরপুরের চিত্র অনেকটা এমনই।
যাদের প্রকাশ্যে দেখা যায়, তারাও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে এগিয়ে চলেছেন। গফরগাঁওয়ে বিএনপির সঙ্গ ত্যাগ করে নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছেন। কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে দল পুনর্গঠন ও নেতাকর্মীদের আন্দোলন সংগ্রামে নামতে বারবার তাগিদ দেয়া হচ্ছে। তারপরও কাটছে না বিএনপির শনির দশা।
এদিকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বুক ফুলিয়ে চলাফেরা করলেও বেশিরভাগ এলাকায় রয়েছে দলীয় কোন্দল। আধিপত্য ও ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়েছে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে। ফলে লাশ হওয়ার খবরও আসছে হরহামেশা। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিতে গিয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সংঘর্ষ যেন এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। রূপগঞ্জ ও শেরপুর উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে আছে। একে অপরের মুখ দেখাদেখিও বন্ধ। এছাড়া পলাশ, গফরগাঁও ও পাংশা উপজেলায় দল গোছাতে সক্রিয়ভাবে এগিয়েও যাচ্ছে নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়া তৃণমূলে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো তৎপরতার খবর জানা যায়নি। উপজেলা সংবাদদাতাদের খবরে বিস্তারিত-
রূপগঞ্জ : সংবাদদাতা রিয়াজ হোসেন জানান, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের রাজনীতিতে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ রয়েছে দুই ভাগে বিভক্ত। অন্যদিকে আঁতাত আর আত্মগোপনে চলছে উপজেলা বিএনপি। ক্ষমতাসীন দলে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা ব্যাঙের ছাতার মতো নব্য নেতাকর্মীরা ব্যস্ত হালুয়া-রুটির ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে। আর এ হালুয়া-রুটি নিজেদের আয়ত্তে নিতে চলছে নিজেদের মধ্যে হানাহানি ও দ্বন্দ্ব।
এ দ্বন্দ্ব দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হানাহানির মূলে রয়েছে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ ও দখলবাজি প্রতিষ্ঠা। আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জানান, দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। দলে সুবিধাভোগী নেতারা আঁকড়ে আছে। এমপি গাজী গোলাম দস্তগীর (বীরপ্রতীক) বলেন, আমার সঙ্গে শাজাহান ভূইয়ার কোনো দ্বন্দ্ব নেই। আমরা মিলেমিশেই কাজ করছি। ২৩ বছর কাউন্সিল না হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি জানান, জেলা কমিটি না থাকায় উপজেলা কমিটি হচ্ছে না। এছাড়া কোনো অঙ্গ সংগঠন কোনো প্রকার দখল, চাঁদাবাজি কিংবা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত নয় বলে দাবি করেন এমপি।
এদিকে রূপগঞ্জ বিএনপির অবস্থা রাজনীতির মাঠে নেই বললেই চলে। বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের অধিকাংশ নেতাকর্মী আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে চলছে। আরেকটি পক্ষ মামলা-হামলার ভয়ে এলাকা ছেড়ে আছে। রূপগঞ্জ বিএনপি মূলত তিনটি পক্ষ নিয়ন্ত্রণ করছে। ছোট পরিসরের একটি পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। বড় একটি অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কাজী মনির। অপরদিকে তরুণ প্রজন্মের বড় একটি অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-কোষাধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান ভূইয়া দিপু। তবে মাঠের রাজনীতিতে কাজী মনির ও দিপু ভূইয়া এবং তার অনুসারী সমর্থকরা রয়েছে বলে জানা গেছে।
মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলেন, বিএনপির কোনো কার্যক্রম নেই বললেই চলে। যারা কমিটিতে বড় বড় পদ আঁকড়ে আছেন, তাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে চলছেন। দল ক্ষমতায় এলে দেখা যাবে এরাই আবার চাঁদাবাজি, দখলবাজি করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাবে। নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির বলেন, বর্তমানে রূপগঞ্জে কার্যক্রম চালানোর মতো কোনো সুযোগই আমরা পাচ্ছি না। যেখানেই কর্মসূচি, সেখানেই পুলিশ আর ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা হামলা করছে। ব্যক্তিগতভাগে আমার নামেই রয়েছে ১৯টি মামলা। যারা এখনও মামলাগুলোয় জামিন নিতে পারেনি, তারাই আত্মগোপনে আছে। আর আঁতাতকারীরা সবসময় সব দলের দালালি করে বেড়ায়। তারা রাজনীতিবিদ না, তারা রাজনীতি ব্যবসায়ী।
গফরগাঁও : সংবাদদাতা আশরাফ উদ্দিন সিজেল জানান, ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে মাঠ পর্যায়ে সংগঠন গোছাতে ব্যস্ত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। প্রায় প্রতিদিনই উপজেলা বা পৌরসভার কোনো না কোনো ওয়ার্ডে সরাসরি কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠন হচ্ছে। ফলে উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দল গোছাতে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করতে দেখা গেছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আমীর হোসেন জানান, বর্তমানে আওয়ামী লীগে কোনো গ্রুপিং বা কোন্দল নেই। এছাড়া বিএনপি থেকে প্রতিনিয়ত নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছেন। এরই মধ্যে মশাখালী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আলম ও লংগাইর বিএনপির সভাপতি রুবেল কুমার আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল জানান, দলের সিনিয়র নেতা থেকে শুরু করে সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তার নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল। এদিকে দীর্ঘ দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বিএনপির নেতাকর্মীরা মাঠে নেই বললেই চলে। বিএনপির নেতাকর্মীদের দাবি, হামলা, মামলা ও চার্জশিটের ভয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন তারা। সরকারবিরোধী আন্দোলন, সংগ্রাম ও নানা কর্মসূচিতে অংশ না নেয়ায় বিএনপির ভেতর বিরাজ করছে শনির দশা। সংগঠনের কোনো কাজে দেখা নেই কারও; নেই দলীয় কর্মকাণ্ড।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ মোঃ ইছহাক মোবাইলে বলেন, সারা দেশের বিএনপির যে দশা, আমাদের গফরগাঁওয়ের দলীয় অবস্থা ঠিক একই। উপজেলা বিএনপির সভাপতি এ বি সিদ্দিকুর রহমান গ্রেফতারের আশঙ্কায় দীর্ঘ দেড় বছর ধরে গফরগাঁওয়ে আসেন না।
উল্লাপাড়া : সংবাদদাতা নজরুল ইসলাম জানান, এ উপজেলার রাজনৈতিক মাঠ বর্তমানে আওয়ামী লীগের দখলে। অপরদিকে বিএনপি নেতাকর্মীর ওপর ভর করেছে মামলা, হামলা, হয়রানি ও নির্যাতন। তাদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জেলে রয়েছে। অনেকে গ্রেফতার আতঙ্কে গা-ঢাকা দিয়েছেন, পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। রাজনীতির মাঠে তাদের উপস্থিতি নেই। দলীয় কর্মসূচিও পালিত হচ্ছে না। উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মীর শহিদুল ইসলাম বলেন, দলের নেতাকর্মীরা ভিশন-২১ বাস্তবায়ন করে দেশকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করার জন্য তৎপর রয়েছে। উল্লাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগে কোনো দলীয় কোন্দল নেই।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজাদ হোসেন জানান, উপজেলা বিএনপির সব অভ্যন্তরীণ কোন্দল মীমাংসা হয়ে গেছে। বিএনপির সব স্তরের নেতাকর্মীরা এখন ঐক্যবদ্ধ। কিন্তু বর্তমানে দেশে অলিখিত একদলীয় শাসন চলছে। দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই। বিরোধী দলকে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে বাধা দেয়া হচ্ছে। দলীয় অফিস পর্যন্ত খুলতে দেয়া হচ্ছে না। দলের নেতাকর্মীরা অনেকেই জেলে রয়েছেন। তাদের জামিন হচ্ছে না। গ্রেফতার আতঙ্কে তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। নেতাকর্মীরা অচিরেই মাঠে আসবে বলে তিনি জানান।
শেরপুর : সংবাদদাতা আইয়ুব আলী জানান, বগুড়ার শেরপুরে দুই শিবিরে বিভক্ত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এক শিবিরের নেতৃত্বে রয়েছেন সংসদ সদস্য হাবিবর রহমান আর দলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান মজনুর নেতৃত্বে আরেক শিবির। ফলে এ দুই প্রধানের দলাদলিতে বিপর্যস্ত তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এতে দলীয় কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে।
এ অবস্থায় কর্মসূচি পালনে দায়সারা গোছের হয়ে পড়েছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। এদিকে বিএনপির ঘাঁটিতেই বিএনপির অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। বছরখানেক আগে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হলেও সেই কমিটি এখনও পর্যন্ত মাঠ গুছিয়ে আনতে পারেনি। সরকারবিরোধী আন্দোলনেও নেতাকর্মীদের তেমন রাজপথে নামতে দেখা যায় না। দলীয় কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রেও একই চিত্র বিরাজ করে। মাঝে মধ্যে দলীয় কার্যালয়ে অনেকটা ‘ঘরে বন্দি’ থাকার মতো করে কিছু কর্মসূচি পালন করা হয়। এক কথায় বর্তমানে বিএনপির দলীয় কর্মকান্ড একেবারে ভেঙে পড়েছে। এসব কর্মকান্ডে এ দুই দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা চরমভাবে ক্ষুব্ধ। তারা অতিষ্ঠ। পাশাপাশি হতাশ হয়ে পড়েছে। যে কারণে এ দুই দলের তৃণমূলের সিংহভাগ নেতাকর্মী নিজেদের দলীয় কর্মকান্ড থেকে গুটিয়ে রেখেছেন।
শিবালয় : সংবাদদাতা শাহিনুর রহমান জানান, প্রায় ৯ মাস অতিবাহিত হচ্ছে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হলেও এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। এ ব্যাপারে সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউর রহমান খান (জানু) জানান, বিভিন্ন কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা বিলম্ব হচ্ছে। তবে খুব শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। তিনি বলেন, আমাদের সংসদ সদস্য এ এম নাঈমুর রহমান দূর্জয় খুবই সাংগঠনিক। তিনি এ এলাকার ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য রাত-দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, উপজেলা শাখা নতুন করে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় দলীয় কার্যক্রমে ব্যাপক সাড়া জেগেছে। এদিকে বিএনপির শিবালয় উপজেলা শাখায় ১৫ বছর ধরে কমিটি নেই। ১২ বছর আগে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। আজ পর্যন্ত ওই কমিটি বলবৎ আছে; কিন্তু কমিটির কোনো কার্যক্রম নেই। নেতাকর্মীদেরও মাঠে দেখা যায় না। সিনিয়ার যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ আলী জিন্নাহ এ প্রতিবেদককে জানান, প্রায় এক যুগ আগে আমাদের কমিটি গঠিত হয়েছিল। তাই সঙ্গত কারণেই নেতাকর্মীরা আজ মাঠে নেই। তারা আজ হতাশ ও কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
পলাশ : সংবাদদাতা নূরে আলম রনী জানান, নরসিংদীর ‘পলাশের মাটি বিএনপির ঘাঁটি’ এক সময় এ কথার প্রচলন থাকলেও বর্তমানে তা রূপ নিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়রের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো ধরে রাখতে না পারায় অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে উপজেলা বিএনপি। এছাড়া সাংগঠনিক দুর্বলতা ও মামলা-হামলার ভয়ে অনেকটা ঘরোয়া পরিবেশে চলতে হচ্ছে তাদের। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূলকে শক্তিশালী করে শক্ত অবস্থানে চলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
বালিয়াকান্দি : সংবাদদাতা সোহেল মিয়া জানান, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার রাজনৈতিক দলগুলোর তেমন কোনো কর্মসূচি লক্ষ করা যায়নি। বিএনপি এ উপজেলার রাজনৈতিক মাঠকে তেমন উত্তপ্ত করতে পারেনি। দলীয় নেতাকর্মীরা মিথ্যা মামলা ও হয়রানির হাত থেকে বাঁচার জন্য নিজেদের রাজনীতির মাঠ থেকে প্রায় গুটিয়ে নেন বলে জানান একাধিক তৃণমূল নেতা। তবে দীর্ঘদিন পর বিএনপির নেতারা চাঙা হয়ে উঠছেন বলে দাবি করছেন রাজবাড়ী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নাসিরুল হক সাবু ও বালিয়াকান্দি উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান খোন্দকার মশিউল আযম চুন্নু।
পাংশা : সংবাদদাতা এম এ জিন্নাহ জানান, কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির আওতায় পাংশার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীরা কমিটি গঠন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কমিটি গঠনের ভেতরে ভেতরে পৌর নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা জোর লবিং ও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। দুই দলের নেতারাই মনে করছেন, উপজেলা ও পৌর কমিটি গঠনের মধ্যে পৌর মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থিতা পাওয়ার অনেক বিষয় নির্ভর করছে। রাজবাড়ী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, পাংশা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ নাসিরুল হক সাবু বলেন, দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠিত হবে বলে আশা করছি। জেল-জুলুম, মামলা-হামলায় নাকাল বিএনপি নেতাকর্মীদের এখন শুধু ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পথই খোলা আছে। আওয়ামী লীগ পাংশা উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আল মাসুদ বিশ্বাস বলেন, আওয়ামী লীগের উপজেলা ও পৌর কমিটি এবং অঙ্গ-সংগঠনগুলোর কমিটি গঠন প্রক্রিয়া সমাপ্তির পথে।
টঙ্গী : মনির হোসেন জীবন জানান, গাজীপুরের টঙ্গী উপজেলায় নেই ছাত্রদলের দলীয় কার্যক্রম। প্রায় ১৪ বছর ধরে কোনো কমিটি নেই। দীর্ঘদিনের সেই পুরনো কমিটি দিয়ে চলছে। ফলে সাংগঠনিক কার্যক্রম অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে। যার কারণে সংগঠনের ত্যাগী, যোগ্য ও পরীক্ষিত নেতারা সঠিকভাবে দলীয় কর্মকান্ড পরিচালনা এবং মূল্যায়ন থেকে বরাবরই বঞ্চিত রয়েছেন। অসংখ্য ছাত্রনেতা দীর্ঘদিন ধরে পদপ্রত্যাশী হয়ে দলীয় কর্মকান্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখলেও সম্মেলন না হওয়ায় নিয়মিত ছাত্র ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে দলীয় চরম হতাশা বিরাজ করছে। মেয়াদোত্তীর্ণ উপজেলার ছাত্র সংগঠনের বর্তমান কমিটির পদ-পদবিধারী অধিকাংশ নেতারই ছাত্রত্ব নেই। সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদের নেতারাই বিবাহিত। তারা এখন ব্যবসা-বাণিজ্য, ঠিকাদারি, চাকরি, টেন্ডারবাজি, ঝুট ব্যবসা, স্ত্রী, সন্তান ও সংসার নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এর পরও তারা নিজ নিজ পদে বহাল রয়েছেন।
ভাঙ্গা : সংবাদদাতা সাইফুল্লাহ শামীম জানান, ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরে ভাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী কাজী পরিবার আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হলেও নানাবিধ কারণে সে অবস্থানে ভাটা পড়েছে। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান এমপি মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে জোর চেষ্টা চালান। কিন্তু আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাকে মনোনয়ন দেয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। ফলে নিক্সন চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন নিক্সন চৌধুরী।
বিজয়ী হওয়ার পর থেকে তিনি এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে চলেছেন। এদিকে সাবেক এমপি কাজী জাফরউল্লাহ নানাভাবে মানুষের মন জয় করে এ আসনটি পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তার বিগত দিনের কাজের ফিরিস্তি দিয়ে জনগণের কাছে সমর্থন পেতে তিনি এলাকায় কাজ করে যাচ্ছেন। তবে এ প্রতিযোগিতায় মাঝে মধ্যে বর্তমান এবং সাবেক এমপির নেতাকর্মী, সমর্থকদের মাঝে রেষারেষি এবং সংঘর্ষের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। তারপরও এলাকার উন্নয়নের প্রতিযোগিতা চলছে বর্তমান ও সাবেক দুই এমপির মধ্যে। অপরদিকে এ উপজেলায় বিএনপি বর্তমানে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ায় দলটি অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে বিশ্লেষকরা অভিমত প্রকাশ করেছেন।
বানিয়াচং : সংবাদদাতা নজরুল ইসলাম তালুকদার জানান, হবিগঞ্জের এ উপজেলায় আওয়ামী লীগ-বিএনপিই মূলত সাংগঠনিকভাবে এগিয়ে। ১৪ দলীয় মহাজোটের এখানে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি ছাড়া কোনো দলের অস্তিত্ব নেই। বিএনপির কেন্দ্রীয়ভাবে ২০ দলীয় ঐক্যজোট থাকলেও এখানে রয়েছে বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী ঐক্যজোট ও জমিয়তে উলামা ইসলাম নিয়ে পাঁচ দলীয় ঐক্যজোট।
উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, কেন্দ্রীয় নেতা ডা. জীবন ও সভাপতি শাহীনের মধ্যে সমন্বয়হীনতা এবং সেক্রেটারি বকুল, সহ-সভাপতি মারুফ, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদসহ অনেকের বিরুদ্ধে একাধিক নাশকতার মামলার থাকায় দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ব্যাপারে ডা. জীবন জানান, আমার কারও সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। অতীতে কী হয়েছিল, তা এখন দেখার সময় নেই।-আলোকিতবাংলাদেশ
১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে