মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৭, ১১:৩৯:০৭

কিভাবে দিন কাটছে সেই ‘আসল বিএনপি’নেতা নাসিমের, কি করছেন তিনি?

কিভাবে দিন কাটছে সেই ‘আসল বিএনপি’নেতা নাসিমের, কি করছেন তিনি?

নিউজ ডেস্ক: মাঝেমধ্যেই তিনি সংবাদ সম্মেলনের নামে গণমাধ্যমে হাজির হন। পল্টনে ‘সাঙ্গপাঙ্গ’ নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখল করতে যান। প্রতিদ্বন্দ্বী নেতাকর্মীদের হাতে মার খান, পিছু হটেন। ইনি ‘আসল বিএনপি’ নেতা কামরুল হাসান নাসিম।

কিভাবে দিন কাটছে সেই ‘আসল বিএনপি’নেতা নাসিমের, কি করছেন তিনি? কিন্তু কামরুলের নির্ধারিত কোনো জীবিকা নেই।

তিনি কয়েকজন লোক নিয়ে একটা অনলাইন নিউজ পোর্টাল চালান। মাঝে মধ্যে দুই এক জায়গায় লেখালেখি করেন। নির্ধারিত কোনো বেতন না থাকলেও কামরুলের মাসিক আয় ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা। এক সাক্ষাৎকারে নিজের মাসিক উপার্জনের কথা জানিয়েছেন কামরুল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়— ওয়ান ইলেভেনের প্রেক্ষাপটে প্রয়াত মান্নান ভূইয়ার বিতর্কিত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ৩ বারের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা বিএনপিকে (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) বিধ্বস্ত করে দেয়।

‘সংস্কারপন্থী’ পরিচয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় পর্যায়ের একটি অংশ দলের মনোনীত ১১৬ জন এমপি নিয়ে তখন দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি অনাস্থা জানিয়ে নতুন পথে হাঁটতে শুরু করে।  সেই থেকে  বিএনপি নেতাদের বিশ্বাস-অবিশ্বাস, পক্ষে-বিপক্ষ পরিস্থিতিতে চলতে চলতে আগের অবস্থায় ফিরতে পারেনি।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের এই দুর্বলতার সুযোগে মহল বিশেষের সহযোগিতায় কামরুল হাসান নাসিম  সংস্থারপন্থী হিসেবে পরিচিত নেতাদের মাধ্যমে বিএনপিতে বিভাজনের প্রচেষ্টা চালায়। কামরুল হাসান নাসিম কখনও বিএনপির কেন্দ্রীয় পর্যায় বা অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেননি। বিএনপির মতো একটা বৃহৎ রাজনৈতিক দলের সংস্কার বা দলটির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে বিএনপি পুনর্গঠনের যে ঘোষণা তিনি মাইক্রোফোনে দিয়েছেন তা প্রতিধ্বনি হয়েই ফিরে গেছে।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘জনতার আদালত’ কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠে নামলেও ভাড়াটিয়া কর্মী দিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিস দখলের চেষ্টায় বারবার ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। সেই থেকে মাঠ হোক আর ঘর হোকরাজনীতি থেকে দূরে রয়েছেন।

বিএনপির সংস্থাকারপন্থী নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকের পর নাসিম ঢাকার অভিজাত হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে স্থায়ী কমিটিসহ দলের একটা বৃহৎ অংশ তার সঙ্গে রয়েছে দাবি করলেও তার প্রমাণ তিনি দিতে পারেননি। তবে বিগত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নাসিম বিএনপির এক নেতার নাম ঘোষণা করলে অন্য নেতারা নাসিমের ব্যাপারে সতর্ক হন। অনেকের মধ্যে কৌতুহল তৈরি হয় নাসিমের বারিধারা ডিওএইচএস এর মতো জায়গায় তার বিশাল অফিস আর উত্তরার বাসা মেইনটেন্সের আর্থিক বিষয় নিয়ে।

দীর্ঘদিন বিএনপি পুনর্গঠনের কথা বললেও এ পর্যন্ত তিনি একজন বিএনপি নেতাকেও তার পাশে নিতে পারেননি। বিএনপি পুনর্গঠনের উদ্দীপনায় নাসিমকে যারা উৎসাহ দিয়েছেন ক্লান্তির সময়ে তারা এখন ছুড়ে ফেলেছেন। পল্টনে বিএনপি কার্যালয় এলাকায় আসল বিএনপির সঙ্গে বিএনপি-ছাত্রদল কর্মীদের সংঘর্ষ

সম্প্রতি পরিবর্তন প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় কামরুল হাসান নাসিমের। তার দৈনন্দিন জীবন কীভাবে কাটছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি পেশায়  সম্পাদক।

আমি গণমাধ্যমকর্মী। এটা পাক্ষিক বের হয়। প্রিন্ট ভার্সনের জন্য মতিঝিলের ইত্তেফাক ভবনে ৬ দিন অফিস করি, আর অনলাইন ভার্সন যেটা সেটা ২৪ ঘণ্টা-ই আমাকে দেখতে হয়। বাকি সময় এ জায়গাতে (বারিধারার অফিস) বাংলাদেশ ও রাজনীতির সাথে সস্পৃক্ত ৫১ টি বিষয়ের উপর অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে গবেষণা করছি।

এছাড়া বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক পোর্টাল আছে। বাংলাদেশের  খেলার সংবাদে আমরা অলরেডি শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে ফেলেছি। আমাদের হিউজ পাঠক আছে। পাশাপাশি আরেকটি অনলাইন পোর্টালে কন্ট্রিবিউটিং এডিটর হিসেবে কাজ করি। সেটার নাম না হয় বললাম।

আসলে যেহেতু পর্দার আড়ালে থেকে ওটার কাজ করছি। কবিতা লিখি, এছাড়া এ বছরে আমার একটি উপন্যাস বের হবে। এরইনামে নেতৃত্ব নামে একটি বই বের হয়েছে। সেটার ইংলিশ ভার্সন নিয়ে কাজ করছি। কবিতা আবৃত্তির কাজ চলছে। কাব্যগ্রন্থ বইমেলায় বের হওয়ার কথা। তবে বইমেলায় নাও বের করতে পারি।

এই এক চেয়ারের ওপর আছি ২০০৯ সাল থেকে। আমি বছওে বের হই ৮০ থেকে ৮৫ দিন। এটা সমসাময়িক দিন। কিন্তু একটা সময় এরকম ছিল যে এক চেয়ার থেকে আমি উঠিও নাই। সেটা ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। আমি চেয়ার থেকে নিচে নামিনি। এই ডিওএইচএস এর বারিধারাতেই ছিলাম।’

নিজের সম্পর্কে কামরুল হাসান নাসিম আরো জানান, ‘আমার বাবা মারা  গেছেন। আমার এক কন্যা, এক স্ত্রী। তারা আমার মায়ের সাথে গুলশানে থাকেন।’
পল্টনে বিএনপি কার্যালয় এলাকায় আসল বিএনপির সঙ্গে বিএনপি-ছাত্রদল কর্মীদের সংঘর্ষ

আয়ের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে তাতে শর্ত জুড়ে দিয়ে নাসিম বলেন, ‘আমি ক্রীড়ালোক থেকে সম্মানী পাই। আমার অন্যান্য অনলাইন পোর্টাল  থেকে বিজ্ঞাপন বাবদ কিছু পয়সা আসে। পাশাপাশি আমি কিছু সৃজনশীল কাজ করি। আমি মানুষের জন্য প্রচণ্ড পরিশ্রম করি। আমি মানুষের জন্য লিখি।’

আপনি যে চলাচল করেন জীবনধারণ করেন, তারপর এই অফিস ভাড়া। এই আয় দিয়ে সব কিছু করা যায়? এই প্রশ্নে পরিবর্তনকে তিনি বলেন, ‘প্রতি মাসে আমার ইনকাম ১২ থেকে ১৫ লাখ।’

যে সোর্স গুলোর কথা বললেন সেগুলো থেকেই কি এই পরিমাণ টাকা আসে নাকি অন্য কোনো ব্যবসা আছে যা থেকে আরো আয় হয়?

নাসিম বলেন, ‘আমার ব্যাবসা যেটা আছে সেটা আমার ভাই করে। কোনো মাসে আমার আয়টা কম হলে হয়তো আমি তার কাছ থেকে চাইলাম।  কিন্তু আমার মেধা দিয়ে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা আয় করি।  প্রমোশনাল এক্টিভিটিস করি। ইভেন্টের কাজও আমি করি।’

সেটা কী রকম? নাসিমের জবাব, ‘যেমন ধরুন সোশ্যাল প্রোগ্রাম কোনো জায়াগায় অনুষ্ঠিত হলো সেটার টোটাল ইভেন্টটা আমি করে দেই।’
পল্টনে বিএনপি কার্যালয় এলাকায় আসল বিএনপির সঙ্গে বিএনপি-ছাত্রদল কর্মীদের সংঘর্ষ।

তার মানে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ করেন? নাসিমের উত্তর,  ‘সামহাউ, পুরোপুরি এটা বলাও যাবে না। এটা অনেক ক্ষেত্রে সোশ্যাল পার্সনালিটির ক্ষেত্রেও হয়, পলিটিক্যাল পার্সনালিটির ক্ষেত্রেও হয়। এমনও হয় যে ইলেকশন কমিশন হচ্ছে, অনেকের সুপারিশ কামরুল হাসান নাসিম লিখে দিয়েছে। আমি পলিটিক্যাল আর্কিটেক্টের ভূমিকায় আছি। আমাকে বলা হচ্ছে  দুই লাখ টাকা যাচ্ছে, একটা ক্রেডিয়েবল সুপারিশনামা লেখ।

আমি তিনবার বাজেটের প্রস্তাবনা তৈরি করে দিয়েছি। আমি এগুলোর সাথে কাজ করেছি। একটা পলিটিক্যাল পার্টি আসলো যে এটা লিখে দেন, কোনো বিরাট কবি সাহিত্যিক আসলেন যে এটা লিখে দেন, কোনো একটা ব্রুসিয়ার বের হবে, লেখাটা কীরকম হবে লেখাটা লিখে দেই। এইভাবে আমার আয়টা হয়। আমার হালাল আয় দিয়েই চলছি।-পরিবর্তন
৩১ জানুয়ারি ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে