অরণ্য ইমতিয়াজ : আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করায় টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসন শূন্য হয়েছে। এখন এ আসনে উপনির্বাচন হবে। আর সেই সুযোগে কালিহাতী থেকে নির্বাচন করার জন্য মাঠপর্যায়ে গণসংযোগের পাশাপাশি কেন্দ্র থেকে সবুজ সংকেতের আশায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন অনেকে।
লতিফ সিদ্দিকীও স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন-কালিহাতীতে এমন আলোচনার পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকী নির্বাচন করতে পারেন বলেও এলাকায় জোর গুঞ্জন আছে।
এদিকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগপ্রধান বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের টিকিট নিয়ে নির্বাচনে আসছেন বলে কালিহাতীসহ টাঙ্গাইল জেলায় সরব আলোচনা হচ্ছে।
উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী অনেকেই মাঠে নেমে পড়েছেন। কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম তালুকদার, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আবু নাসের, কালিহাতী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মোল্লা, টাঙ্গাইল জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির সভাপতি আলহাজ কুদরত-ই-এলাহি খান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক এপিএস ইব্রাহীম হোসেন খানের স্ত্রী অ্যাডভোকেট সাবিনা ইয়াসমিন ইব্রাহীম-এঁরা সবাই আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। এলাকার লোকজনের সঙ্গে কুশলবিনিময়ের পাশাপাশি তাঁরা দলীয় টিকিট পেতে কেন্দ্রে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। এ ছাড়া দলীয় সবুজ সংকেত পেলে মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক রাষ্ট্রদূত আনোয়ার উল আলম শহীদ নির্বাচন করতে পারেন।
কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচনে অংশ নিলে দলের উপজেলা বা জেলা শাখার নেতাকর্মীদের অবস্থান কী হবে তা নিয়েও আলোচনার শেষ নেই। অনেকে মনে করে, কাদের সিদ্দিকীকে আওয়ামী লীগ সমর্থন দেবে না। তিনি নিজ দলের ব্যানারেই নির্বাচনে আসবেন। তবে যেকোনো দল থেকেই কাদের সিদ্দিকী নির্বাচন করলে মাঠ জমজমাট হয়ে উঠবে এবং তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। অবশ্য কাদের সিদ্দিকীর নির্বাচনে আসা নিয়ে তাঁর দলের পক্ষ থেকে পরিষ্কার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবীর ভারত সফর শেষে দেশে ফিরেছেন। তাঁর সঙ্গে কালিহাতী নির্বাচন নিয়ে এখনো বিস্তারিত কোনো আলোচনা হয়নি। তিনি নির্বাচন করলে 'গামছা' প্রতীক নিয়েই করবেন। কোনো দলের সঙ্গে সমঝোতা হলেও এই প্রতীকই তাঁর থাকবে। অবশ্য তিনি এখনো এ ব্যাপারে দলের নেতাদের কিছু বলেননি।
কাদের সিদ্দিকীর আওয়ামী লীগের টিকিট পাওয়া প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলমগীর খান মেনু বলেন, 'তিনি (কাদের সিদ্দিকী) আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করবেন-এ রকম কোনো তথ্য আমাদের জানা নাই। কেন্দ্র থেকে সে রকম কোনো আভাসও আমরা পাইনি।' লতিফ সিদ্দিকী স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন কি না সে প্রসঙ্গে আলমগীর খান মেনু বলেন, 'তিনি এখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে নেই। তাই তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন কি না সে তথ্যও আমাদের কাছে নেই।'
এদিকে লতিফ সিদ্দিকী নির্বাচন না করলেও তাঁর স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকীকে নির্বাচনে নিয়ে আসতে পারেন বলে জানান কেউ কেউ। এ ব্যাপারে কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজহারুল ইসলাম তালুকদার বলেন, 'লতিফ সিদ্দিকী স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন না এটা নিশ্চিত। তিনিই আমাকে সে কথা জানিয়েছেন। আর লায়লা সিদ্দিকী আসবেন কি না সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে তাঁর আসার সম্ভাবনাও কম।' কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করার আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'সাধারণ মানুষের মধ্যে এ রকম আলোচনা আছে। কেন্দ্রে যোগাযোগ করে দেখেছি, সেখানে এ ব্যাপারে কোনো আলোচনা নেই।'
স্বতন্ত্র হিসেবে তরুণ ব্যবসায়ী আব্দুল আলীম নির্বাচন করবেন বলে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
লতিফ সিদ্দিকীর পদত্যাগে শূন্য হওয়া টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের উপনির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগদলীয় মনোনয়ন কে, এ নিয়ে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও ব্যাপক কৌতূহল রয়েছে। তাদের অধিকাংশের প্রত্যাশা, লতিফ সিদ্দিকী বা তাঁর পরিবারের কেউ যেন এ আসন থেকে আর নির্বাচন করতে না পারেন। কালিহাতী বাসস্ট্যান্ডের ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, লতিফ সিদ্দিকীকে মানুষ আর চায় না। তিনি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে জনগণের বিশ্বাসকে নষ্ট করেছেন। আরো আগেই তাঁর পদত্যাগ করা উচিত ছিল।
লায়লা সিদ্দিকী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, লতিফ সিদ্দিকী না এসে হয়তো তাঁর স্ত্রীকে নির্বাচনে আনতে পারেন। কিন্তু জনগণ তাঁদের কাউকে আর চায় না। উপজেলার ঝকরমান গ্রামের আবুল কাশেম বলেন, আওয়ামী লীগের উচিত বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে নতুন কোনো প্রার্থীকে বেছে নেওয়া।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে নিউ ইয়র্কে গিয়ে গত বছর ২৯ সেপ্টেম্বর প্রবাসীদের এক অনুষ্ঠানে হজরত মুহাম্মদ (সা.), পবিত্র হজ ও তাবলিগ জামাত নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন লতিফ সিদ্দিকী। এতে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে তাঁর নির্বাচনী এলাকা কালিহাতীসহ সারা দেশে। তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার ও সংসদ সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি ওঠে। প্রথমে তাঁকে দল ও মন্ত্রী থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর তাঁর সংসদ সদস্য পদ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হলে গত ১৩ জুলাই প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীনকে চিঠি দেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
গত ২৪ আগস্ট নির্বাচন কমিশনে গিয়ে লতিফ সিদ্দিকী তাঁর এমপি পদে থাকার বৈধতা নিয়ে শুনানি শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি এমপি পদ থেকে নিজেই পদত্যাগের ঘোষণা দেন এবং গত ১ সেপ্টেম্বর বিকেলে সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়ে তিনি তাঁর পদত্যাগপত্রটি স্পিকারের কাছে জমা দেন। পরে স্পিকার গত ৩ সেপ্টেম্বর লতিফ সিদ্দিকীর পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে মর্মে টাঙ্গাইল-৪ আসনটি শূন্য ঘোষণা করেন। আসন শূন্য ঘোষণার গেজেট (গত ৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়েছে) হওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা।-কালের কণ্ঠ
১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে