শরিফুজ্জামান : দাদা-নানাদের খবর কেউ রাখলেন না। কোনো পত্রিকায় আমাদের খবর পেলাম না। যাঁরা চাকরিতে আছেন এবং যাঁরা অবসরে যাবেন, সবার কথা তুলে ধরা হলো। কিন্তু আমরা যাঁরা অবসরে চলে গেছি, তাঁরা এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কিছুই জানি না।
অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী সমিতির বগুড়া শাখার মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গে বললেন কথাগুলো। গত সোমবার মন্ত্রিসভায় জাতীয় বেতন স্কেল অনুমোদন হওয়ার পর তাঁর মতো বেশ কয়েকজন প্রবীণ নাগরিক তাঁদের পেনশন কতটা বেড়েছে, তা নিয়ে প্রতিবেদন করার অনুরোধ জানান।
অর্থ মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে এখন পেনশনভোগীর সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ ২০ হাজার। নতুন জাতীয় বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার পর তাঁদের জন্য সরকারের অতিরিক্ত খরচ হবে ৩ হাজার ৬৯১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। কিন্তু কার, কতটুকু ভাতা বেড়েছে, তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে পারবেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন জারির পর। তবে গত ১ জুলাই থেকে তাঁদেরও পেনশন বেড়ে গেছে, যা তাঁরা পাবেন মাস খানেকের মধ্যে।
গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে অবসরে থাকা প্রবীণ নারী-পুরুষের পেনশন বৃদ্ধির হার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত পেনশন বাড়বে ৪০ শতাংশ। আর ৬৫ বছরের বেশি হলে বাড়বে ৫০ শতাংশ। তবে মহার্ঘ ভাতা হিসেবে পেয়ে আসা ২০ শতাংশ সমন্বয় হয়ে যাবে। এ ছাড়া অবসরভোগীদের সর্বনিম্ন পেনশন হবে দুই হাজার টাকা।
অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিকিৎসা ভাতাও বেড়েছে। ৬৫ বছর পর্যন্ত চিকিৎসা ভাতা ছিল ৭০০ টাকা, যা বেড়ে হবে দেড় হাজার টাকা। ৬৫ বছরের বেশি বয়সীরা এখন পান এক হাজার, যা বেড়ে হবে আড়াই হাজার টাকা।
একজন প্রবীণ নাগরিকের পেনশন বৃদ্ধির হিসাব জানতে চাওয়া হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তার কাছে।
ওই কর্মকর্তা হিসাব দিলেন, তাঁর এক নিকটাত্মীয় এখন ৪ হাজার ১০০ টাকা পেনশন এবং চিকিৎসা ভাতা পান ১ হাজার টাকা। বয়স ৬৫ বছরের ওপরে, তাই পেনশন বাড়বে ৫০ শতাংশ। আর চিকিৎসা ভাতা বেড়ে হবে আড়াই হাজার টাকা। সব মিলিয়ে তিনি এখন পাবেন ৮ হাজার ৬৫০ টাকা। এর বাইরে তিনি মূল পেনশনের (৬১৫০) ২০ শতাংশ বাংলা নববর্ষ ভাতা পাবেন। আর বছরে দুটি উৎসব ভাতা পাবেন, প্রতিটি মূল পেনশনের সমপরিমাণ।
সরকারি চাকরিজীবীদের মতো তাঁদের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হবে কি না, সে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নতুন পে কমিশন গঠন না হলে অবসরপ্রাপ্তদের পেনশন কোন নিয়মে বাড়বে, তা-ও এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয়।
নতুন জাতীয় বেতন স্কেল ঘোষণা হলে পেনশনভোগীদেরও পেনশন বাড়ে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেছেন, আর বেতন কমিশন গঠন করার প্রয়োজন হবে না। এখন থেকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হবে নির্দিষ্ট হারে, যা গ্রেড ভিত্তিতে ৩ দশমিক ৭৫ থেকে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা প্রতিবেদককে বলেন, এই খুঁটিনাটি বিষয়ের ব্যাখ্যাসহ অর্থ মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করবে। তখন সব বিষয় আরও স্পষ্ট হবে।
অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী সমিতির ওই আঞ্চলিক নেতা জানান, প্রতিবেদন তৈরির আগে বেতন কমিশন তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছিল। কমিশন পেনশনের হার মূল বেতনের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল। কিন্তু তা ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বাড়ানোটা বিবেচনাপ্রসূত হয়নি। তা ছাড়া মহার্ঘ ভাতা সমন্বয় হওয়ার পর তাঁদের পেনশন খুব একটা বাড়ছে না।
তবে ওই সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাবেক সচিব মাহে আলম এই প্রতিবেদককে বলেন, দেশে পেনশনভোগীর সংখ্যা অনেক। তারপরও সরকার যেটুকু বাড়িয়েছে, তা খুব কম নয় বলে মনে হচ্ছে।-প্রথমআলো
১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে