নিউজ ডেস্ক : আইনি জটিলতায় মায়ের লাশ আগলে রেখে ভারতীয় সীমান্তে কাটাতে হচ্ছে এক বাংলাদেশি যুবককে। মায়ের মৃত্যুর পর চার দিন কেটে গেলেও এখনও পর্যন্ত দেশে ফেরানোর কোন সুরাহা করতে পারেননি বাংলাদেশের দিনাজপুরের বাসিন্দা টোকন চন্দ্র সরকার।
মা কনিকা রানি সরকার(৫৫)-এর চিকিৎসা করাতে গত ১০ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন টোকন। মাকে নিয়ে ওঠেন পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলায় মাসির বাড়িতে। কিন্তু হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন কনিকা সরকার। এরপর আত্মীয়ের পরামর্শে গত ১২ ফেব্রুয়ারি মালদা জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় কনিকা সরকারকে। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি করানোর সময় হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে বাংলাদেশের স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ না করে সেখানে মালদার আত্মীয়ের ঠিকানা উল্লেখ করেন টোকেন সরকার। আর সমস্যার শুরু সেখান থেকেই। পরদিন ১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে মারা যান কনিকা সরকার। মায়ের মৃত্যুর পর হাসপাতাল থেকে ডেথ সার্টিফিকেটও ইস্যু করা হয় কনিকা সরকারের নামে। স্বাভাবিকভাবেই মৃত্যুর সার্টিফিকেটেও ভারতের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়। এরপর ১৩ ফেব্রুয়ারি হিলি সীমান্ত দিয়ে মায়ের সেই লাশ নিয়ে নিজের দেশে ফিরে যেতেই গভীর সমস্যায় পড়েন টোকন। ভারতীয় কাস্টমস দফতরের নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় টোকন চন্দ্র সরকারকে।
এরপর থেকেই মায়ের লাশ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন সরকারি দফতরে ঘুরতে থাকেন টোকন। কিন্তু কোন উপায় বের না হওয়া শেষ পর্য্যন্ত স্থানীয় মানুষের সহযোহিতায় সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামেই কাঠের বাক্সের মধ্যে কাঠের গুড়া, আইস দিয়ে মায়ের লাশ সংরক্ষণের প্রাথমিক ব্যবস্থা করেন তিনি। এরই মধ্যে চলতে থাকে মায়ের লাশ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টাও। শেষে সংবাদ মাধ্যম ও শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন সহায়তায় দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার জেলাশাসক সঞ্জয় বসুর দ্বারস্থ হন টোকন। সেখান থেকে যোগাযোগ করা হয় কলকাতাস্থ বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন এবং মালদা জেলা হাসপাতালের সঙ্গে। জেলাশাসকের পক্ষ থেকে ওই পরিবারকে যাবতীয় সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়। পাশাপাশি লাশের পচন আটকাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা হাসপাতালের মর্গে লাশ রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মালাদা জেলা হাসপাতাল থেকে সংশোধিত নতুন ডেথ সার্টিফিকেট ও বাংলাদেশ হাইকমিশনের অনুমতি আনতে আরও দুই থেকে তিন দিন সময় লাগতে পারে বলেও প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
টোকেন সরকার জানান ‘মায়ের চিকিৎসা করাতে আমরা বৈধ পাসপোর্টেই পশ্চিমবঙ্গে মালদায় মাসির বাড়িতে আসি। এখানে আসার পর হঠাৎ করেই মা একদিন অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর মালদা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় এবং মাসির বাড়ির ঠিকানা দিয়েই সেখানে মাকে ভর্তি করাই। কিন্তু ১৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ৬টার দিকে মায়ের মৃত্যু হয়। এরপর মায়ের মৃত্যুর সার্টিফিকেটও নিয়ে আসি, কিন্তু মাকে নিয়ে বাংলাদেশে ফেরত যাওয়ার সময়ই ভারতীয় কাস্টমস বলে ঠিকানায় ভুল আছে, নতুন করে সার্টিফিকেট আনতে হবে। এর মধ্যে মায়ের লাশে পঁচন ধরেছে, এখন কি করে মাকে দেশে নিয়ে যাবো বুঝতে পারছি না। আমি স্থানীয় থানায় যোগাযোগ করেছি। বাংলাদেশ হাইকমশিনকেও অনুরোধ জানাচ্ছি তারা যে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখে’। -বিডি প্রতিদিন।
১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম