মেয়েদের বিয়ের বয়স প্রসঙ্গে সেই প্রস্তাবই থাকছে
বিশেষ পরিস্থিতিতে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছরের পরিবর্তে ১৬ বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে এ বিষয়ে একটি আইনের খসড়া তৈরি করেছে। বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৪, নামে আইনের খসড়া ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
রবিবার ঢাকায় 'বাল্যবিবাহ; পরিস্থিতি পর্যালোচনা' শিরোনামে একটি মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এ কথা জানিয়েছেন। 'আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট' এ সভার আয়োজন করে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর থাকছে। তবে ওই আইনের একটি উপ-ধারায় 'বিশেষ পরিস্থিতিতে' মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৬ বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
'বিশেষ পরিস্থিতির' ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ''মেয়ে প্রেমঘটিত কারণে ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গেলে বা মেয়ে ছেলের বাড়িতে চলে যাওয়ার পর নিজের বাড়িতে ফিরে আসতে অস্বীকৃতি জানালে বা বিয়ের আগে গর্ভবতী হলে- এরকম পরিস্থিতিতে ১৬ বছর করা যায় কি না, তা সরকার চিন্তা-ভাবনা করছে। এ খাতে যেসব সংস্থা ও ব্যক্তি কাজ করেন তারাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পরামর্শ করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।''
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ''বাল্য বিবাহ নিরোধ আইনে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছরের একচুলও নড়চড় হবে না। তবে শুধু একটি আইনে বয়স বেঁধে দিয়ে বাল্যবিয়ে রোধ করা যায় না। মেয়েদের শিক্ষিত করতে পারলে তা রোধ করা সম্ভব।''
বক্তব্যের পক্ষে দৃষ্টান্ত দিতে গিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ''ইরানে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৩ বছর হলেও দেশটিতে ১৯ বছরের আগে বিয়ে হয় না।''
এদিকে মেয়েদের বিয়ের বয়স কমানোর একটি কথা বছর খানেক আগে উঠার পর তা নিয়ে ব্যাপক আপত্তি তোলে নারী সংগঠনগুলো।
প্রতিমন্ত্রী চুমকির উপস্থিতিতে একটি সভায় মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম শর্ত সাপেক্ষে বিয়ের বয়স কমানোর বিরোধিতা করে বলেন, ''বিয়ের বয়স ১৮ বছরের নিচে নামানো কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। এর সঙ্গে জড়িত সমস্ত শর্ত অবশ্যই বাদ দিতে হবে।''
এদিকে ব্র্যাকের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের হার ৬৫ শতাংশ, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ এবং পৃথিবীতে চতুর্থ। বাংলাদেশে প্রতি তিনটি বিয়ের দুটিতেই কনের বয়স থাকে ১৮ বছরের নিচে। বাল্যবিয়ের ৮০ শতাংশই ঘটে দরিদ্র্য পরিবারে।
সভায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিক-উল-ইসলাম বলেন, ''এখনও বাল্য বিয়ের প্রধান কারণ স্কুল থেকে ঝরে পড়া। পঞ্চম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ঝরে পড়া মেয়েদের বাল্য বিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু যারা পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের বাল্য বিয়ে হচ্ছে না। তাই মেয়েদের পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে আরও বেশি বরাদ্দ দেওয়া উচিত। বিশেষ করে ঝরে পড়া রোধে আরও বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন।''
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম এই অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন। - বাংলাদেশে প্রতিদিন
১৯ অক্টোবর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/আসিফ/এআর