সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৫, ০১:৪২:২০

দলীয় ও এমপি পদ হারাতে পারেন লিটন

দলীয় ও এমপি পদ হারাতে পারেন লিটন

নিউজ ডেস্ক : শিশু সৌরভকে গুলি করে বর্তমানে কারাগারে আছেন গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সরকারদলীয় আলোচিত এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। এ ঘটনার জেরে দলীয় ও সংসদীয় পদও হারাতে পারেন এই নেতা। দলীয় পদ হারানোও এখন সময়ের ব্যাপার বলে আওয়ামী লীগের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। আর দলীয় পদ হারানোর পর সংসদীয় পদ হারানো দাফতরিক কাজের সমাপ্তির অপেক্ষা মাত্র। গত ২ অক্টোবর ভোরে ১০ বছরের শিশু সৌরভকে গুলি করে আলোচনায় আসেন গাইবান্ধা-১ আসনের এমপি লিটন। আহত সৌরভের বাবা সাজু মিয়া ঘটনার পরদিন লিটনকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন। জনপ্রতিনিধি হয়েও এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর পর দেশব্যাপী নিন্দা, প্রতিবাদ ও লিটনকে গ্রেফতারের দাবিতে ঝড় ওঠে। পরে নানা নাটকীয় ঘটনার অবসান ঘটিয়ে ১৪ অক্টোবর রাতে শিশু সৌরভকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা ও বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনায় দায়ের করা আরও দুটি মামলায় রাজধানীর উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরের এক আত্মীয়র বাসা থেকে এমপি লিটনকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী প্রতিবেদককে বলেন, ‘গাইবান্ধা-১ আসন জামায়াত-বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা। শিশুটি এত সকালে ওখানেই কেন গেল? ঘটনার মূল কারণ উদ্ঘাটন না হওয়া পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। দোষী সাব্যস্ত হলে অবশ্যই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, ১৯৯৬ সালে স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রয়াত আবুল হোসেন খাজার বিরুদ্ধে কুলা মার্কায় বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। ২০০৩ সালের ১৬ জানুয়ারি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন লিটন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ মনোনীত মহাজোট প্রার্থী কর্নেল (অব.) কাদের খান এবং ২০১০ সালের উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জহিরুল হকের প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেন। এতে ক্ষোভে ফুঁসে উঠতে শুরু করেন দলের নেতাকর্মীরা। এরপর ২০১৪ সালে এমপি বনে যাওয়ার পরপরই তাঁর কর্মকাণ্ড আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পরে লিটন ফাঁকা গুলি ছুড়ে উল্লাস করেছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া একাধিক শিক্ষককে চড়-থাপ্পড়, মদ্যপান, নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন, নিয়োগবাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। দলীয় নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে চলাফেরা করেন নিজস্ব বাহিনী নিয়ে। বাহিনীর লোকজনের ভয়ে সব সময় তটস্থ থাকেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। তাঁর সব কাজের যোগানদাতা তাঁর স্ত্রী গাইবান্ধা জেলার মহিলা লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইদা খুরশিদ জাহান স্মৃতি। যার কারণে নানা অপকর্মের প্রতিবাদে বিদ্যমান সুন্দরগঞ্জ উপজেলার আওয়ামী লীগের কমিটির ৬৩ সদস্যেও মধ্যে ৪২ জন তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়ে জেলা ও কেন্দ্রে প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। এ প্রতিবেদনের পর ওই ৪২ নেতাকর্মীকে নানাভাবে হয়রানিসহ দলীয় কর্মকাণ্ডের বাইরে রাখছেন। অনাস্থা প্রতিবেদনের একটি কপি প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে। সূত্র আরও জানায়, মুখে জামায়াত-বিএনপির বিরোধিতা করলেও মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন এমপি নির্বাচিত হওয়ার মূলে জামায়াত-বিএনপির পৃষ্ঠপোষকতা করছে। পুলিশকে মারধর, আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুরসহ ৫ মামলার আসামি সদর ইউপি বিএনপির সভাপতি লুৎফর রহমান মুক্তা, সোনাবাগ ইউপির জামায়াত নেতা তাঁর সেকেন্ডম্যান হিসেবে পুরো সুন্দরগঞ্জ দাবড়ে বেড়ান। অথচ বিগত জোট সরকারের আমলে তাঁদের ভয়ে আ.লীগ নেতারা এলাকাছাড়া ছিলেন বলে জানান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহেদুর রহমান। আওয়ামী লীগ সমর্থিত সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, এমপি লিটনের ক্ষমতার কাছে পুরো সুন্দরগঞ্জ অসহায়। তাঁর গুণ্ডাবাহিনীর অত্যাচারে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতারা কোণঠাসা। কেউ তাঁদের অপকর্মের প্রতিবাদ করলে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এই এমপি পিয়ন পোস্টে চাকরির জন্য ৬৪ জনের কাছ থেকে ২ থেকে ৪ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। তাঁর গ্রেফতারে সুন্দরগঞ্জে আনন্দ মিছিল করেছে সাধারণ মানুষ। ইসি সূত্রমতে, মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন সাত ভাই-বোনের মধ্যে ষষ্ঠ। তিনি আনন্দ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক। ধানমন্ডিতে একটি এবং গাইবান্ধায় ১২ বিঘা জমি নিয়ে রয়েছে বিলাসবহুল বাড়ি। সুন্দরগঞ্জের বিমানদাঙ্গা বাজারে ৬ তলাবিশিষ্ট আশরাফ কোল্ড স্টোরেজ নামে একটি হিমাগার রয়েছে তাঁর। লিটনের মা আলতাফুন নেসা ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ে চাকরি করেন। লিটনের বাবা আশরাফ আলী ১৯৫০ সালে মুসলিম লীগের কর্মী ছিলেন। এর আগে ২০১৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে এক সভায় পবিত্র হজ, তাবলিগ জামাত, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করেন সরকারদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। যা নিয়ে দেশ-বিদেশে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। পরবর্তী সময়ে দলীয়প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর ভূমিকার কারণে প্রথমে মন্ত্রিসভা এবং পরে আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর সদস্য ও প্রাথমিক সদস্যপদ হারাতে হয় এ প্রভাবশালী নেতাকে। এ ধরনের সাহসী সিদ্ধান্তে দেশবাপী বেশ প্রশংসা পেয়েছিল আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এই প্রতিবেদককে বলেন, শিশু লিটন গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে এমপি লিটন এখনও দোষী সাব্যস্ত হননি। তিনি দোষী প্রমাণিত হলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আওয়ামী লীগ কোনো অন্যায়কারীকে প্রশ্রয় দেয় না, তিনি যত বড় নেতাই হন না কেন।-ভোরের পাতা ১৯ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে