সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৫, ০১:৪৭:৩৭

পাল্টা কৌশলের সিদ্ধান্ত বিএনপির

পাল্টা কৌশলের সিদ্ধান্ত বিএনপির

হাসান মোল্লা : হঠাৎ করে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ঘোষণায় বিএনপিতে কিছুটা অস্বস্তি সৃষ্টি হলেও আস্তে আস্তে তা ইতিবাচক মোড় নিতে শুরু করেছে। আন্দোলনে ব্যর্থতার পর চিঠি দিয়েও পুনর্গঠন কার্যক্রম বেগবান করতে পারেনি বিএনপি। এ ক্ষেত্রে তৃণমূল সাড়া দেয়নি। এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে তৃণমূল থেকেই পুনর্গঠনে চাপ আসছে। কাটতে শুরু করেছে সাংগঠনিক স্থবিরতা। নেতারাও আত্মগোপন থেকে বেরোতে শুরু করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১২ অক্টোবর স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন দলীয় প্রতীকে করার ঘোষণা আসার পর বিএনপির সব পর্যায়ে শুরু হয় নানা রকম আলোচনা। দল পুনর্গঠন এবং বছর শেষে আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও বিএনপির কোনো কোনো নেতা মত দেন। কিন্তু তৃণমূল নেতাদের চাপ এবং সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়টিকে পাল্টা কৌশল হিসেবে গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন আগামী ডিসেম্বরে পৌরসভা এবং মার্চে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করছে। এ বিষয়ে বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা জানান, বিএনপিকে ফাঁদে ফেলতে স্থানীয় নির্বাচনের জন্য এই সময়টা বেছে নিয়েছে সরকার। কিন্তু সরকারই নিজের পাতা ফাঁদে পড়বে। তার মতে, সরকার ভেবেছিল, এই সময়ে নির্বাচন দিলে বিএনপির পুনর্গঠন কঠিন হবে। কিন্তু এই ঘোষণা বিএনপির জন্য শাপে বর হয়েছে। চিঠি দিয়ে পুনর্গঠনের তাগাদা দেয়া হয়েছিল, কিন্তু তাতে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। অনেকেই জেল-জুলুমের কথা বলে সংগঠনের কার্যক্রম থেকে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন। নতুন করে কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে চাইছিলেন না। তারাই এখন ঝুঁকি নিয়ে হলেও নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে রাজনীতিতে নিজের অবস্থানও সুসংহত করার চেষ্টা করছেন। আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরাও বেরিয়ে আসতে শুরু করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। জানাচ্ছেন নির্বাচনে অংশগ্রহণের আগ্রহের কথা। বলছেন, নির্বাচনে অবশ্যই অংশ নেয়া উচিত। কারণ, নির্বাচনে অংশ না নিলে তৃণমূল পর্যায়েও সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে পড়বে। বিএনপির সূত্রমতে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ঘোষণা আসার পর থেকে পুনর্গঠনের গতি বেড়েছে। যারা গ্রেপ্তারের আশঙ্কার কথা জানিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে দূরে ছিলেন, তারা পুনর্গঠন কার্যক্রম বেগবান করতে ভূমিকা রাখতে শুরু করেছেন। সূত্রটি বলছে, গত ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাউন্সিলরের মাধ্যমে তৃণমূলের সব কমিটি পুনর্গঠনের জন্য গত ৯ আগস্ট কেন্দ্র থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তৃণমূল নেতারা কেন্দ্রের ডাকে সাড়া দেননি। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে জেলার সম্মেলন হয়নি একটিতেও। আর কোনো ধরনের কর্মকা-ই শুরু করেননি ৪০টি জেলায়। সঙ্গত কারণেই ওই ৪০টি জেলায় ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু ১২ অক্টোবর স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ঘোষণা আসার পর ২০টি জেলা ছাড়া প্রায় সব জেলায় ছোট পরিসরে হলেও শুরু হয়েছে পুনর্গঠন কার্যক্রম। চলতি মাসে ৭৫টির মধ্যে ৩২টি সাংগঠনিক জেলার কাউন্সিল করার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে পাবনা, খুলনা মহানগর, মেহেরপুর, বান্দরবান, চট্টগ্রাম উত্তর, সিলেট জেলা ও মহানগর, সুনামগঞ্জ, পিরোজপুর, চুয়াডাঙ্গা, রংপুর জেলা ও মহানগর, গাইবান্ধা এবং বরগুনা জেলার কাউন্সিল করার প্রস্তুতি প্রায় শেষ। তবে গত ৮ অক্টোবর রাঙামাটি জেলার কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে। পুনর্গঠন সংশ্লিষ্ট একজন সিনিয়র নেতা জানান, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ঘোষণা আসার পর থেকে একেবারে কাজ না হওয়া জেলাগুলোতেও কাজ শুরু হয়েছে। ২০টি জেলা ছাড়া অন্যসব জেলায় পুনর্গঠনের কাজ চলছে। নভেম্বর মাসের মধ্যেই প্রায় ৫০টি জেলা কমিটি গঠন সম্ভব হবে দাবি করে তিনি বলেন, এরপরও যেসব জেলার কমিটি গঠন সম্ভব হবে না, সেসব কমিটি কেন্দ্র থেকেই করে দেয়া হবে। দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশে সারাদেশে ত্যাগী নেতাকর্মীদের একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। মামলা, কারাবরণ এবং আন্দোলনে ভূমিকা রাখা নেতারাই ওই তালিকায় স্থান পাচ্ছেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ঘোষণার পর থেকে ওই তালিকায় নিজের নাম বসাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তৃণমূলের নেতারা। তাদের ধারণা, ওই তালিকায় নাম না থাকলে নির্বাচনে দলীয় সমর্থন পাওয়া যাবে না। নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং পুনর্গঠনের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান জানান, জাতীয় নির্বাচন এখন জনগণের প্রধান দাবি। তবে দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরানোর জন্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তির সময়টিকে বেছে নিয়েছে সরকার। এরপরও বলতে হয়, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। সেই হিসাবে দলীয় ফোরাম সিদ্ধান্ত নেবে, এই নির্বাচনে অংশ করবে কি করবে না। নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে তৃণমূলের চাপ আছে কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তো চাইবেনই জনপ্রতিনিধি হতে। সেজন্য এই চাপ থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। অপর স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর দলীয় ফোরামে আলোচনা করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা হওয়ার ব্যাপারে বলতে গেলে দ্বিমত নেই কারোই। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আহমদ খলিল খান জানান, দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য সময়টা উদ্দেশ্যমূলকভাবে বেছে নেয়া হয়েছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের দ্বিতীয় বছরপূর্তিকে ঘিরে যাতে বিএনপি কোনো কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামতে না পারে, সেজন্য স্থানীয় নির্বাচনের মধ্যমে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ব্যস্ত রাখার কৌশল নেয়া হয়েছে। কিন্তু এবার তাতে লাভ হবে না। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া আরো জোরেশোরে শুরু হচ্ছে। নেতাকর্মীরাও হচ্ছেন আরো সক্রিয়।-যাযাদিন ১৯ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে