সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৫, ০২:৫৭:৫৯

সাত সমুদ্রে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ

সাত সমুদ্রে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন : চার দেশীয় স্থল যোগাযোগ (বিবিআইএন) চুক্তির পর এবার সাত দেশীয় সমুদ্র যোগাযোগ গড়ে তোলার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি বাস্তবায়িত হলে ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া এই সাত দেশের সঙ্গে সরাসরি সমুদ্র যোগাযোগ গড়ে উঠবে বাংলাদেশের। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে সরাসরি সমুদ্রপথে চলবে যাত্রী ও পণ্যবাহী জাহাজ। পর্যটনশিল্পের বিকাশে চালু হবে পর্যটকবাহী জাহাজও। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জানায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে এরই মধ্যে ভারতের সঙ্গে উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তি হয়েছে। এ চুক্তির আওতায় এক দেশের জাহাজ অন্য দেশের সমুদ্রপথে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন সুবিধা পাবে। এখন সমুদ্রবেষ্টিত অপর ছয় প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে সাত দেশের সঙ্গে সমুদ্রপথে সরাসরি যুক্ত হবে বাংলাদেশ। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তির উদ্যোগ নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছে বলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান। সূত্রগুলো জানায়, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সমুদ্রপথে যোগাযোগ সম্পর্ক গড়ে তোলার যে নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন, এর পেছনে মূলত দুটি উদ্দেশ্য রয়েছে। (১) এর মাধ্যমে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি করা। (২) ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটন সম্পৃক্ততার মাধ্যমে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করা। এর বাইরে আরও একটি বিষয় রয়েছে বলে সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া সমুদ্র উপকূল ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ মানব পাচারের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকার মনে করছে, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে বৈধভাবে সমুদ্রপথে যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচল চুক্তি করতে পারলে পাচারের ঘটনা কমে আসবে। এতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও পুনরুদ্ধার হবে। কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে স্থল যোগাযোগ চুক্তি কার্যকর হলে দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি আরও বাড়বে। প্রসার ঘটবে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর পর্যটনশিল্পে। তবে প্রধানমন্ত্রী শুধু এখানেই থেমে থাকতে চান না। তিনি স্থলপথের পাশাপাশি সমুদ্রপথেও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোকে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করতে চান। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ‘এশিয়া প্যাসিফিক ওশান ক্রুজ’-এ বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এর ফলে একদিকে যেমন মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের মতো পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সমুদ্রপথে বাণিজ্যিক যোগাযোগ বাড়বে, পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ তিন দেশ ভারত, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের সঙ্গেও সমুদ্র-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। এ ধরনের যোগাযোগ সম্পর্ক পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে বলেই মনে করা হচ্ছে। জানা গেছে, সমুদ্রপথে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে সম্প্রতি একটি বৈঠক করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে তিনটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে-সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে সমুদ্রপথে যোগাযোগ গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; চুক্তি অনুযায়ী পর্যটন ও যাত্রীবাহী জাহাজগুলোকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করে, ওই সব জাহাজের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে, যাত্রী নীতিমালা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক নীতি অনুসরণ করে সমুদ্রপথে চলাচলের জন্য ছাড়পত্র দেবে সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর; এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটনশিল্পের বিকাশে দেশের নৌবন্দরগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে একটি প্রতিবেদন দেবে বিআইডব্লিউটিএ। নৌপরিবহন সচিব শফিক আলম মেহেদী বলেন, বর্তমান সরকারের ঐতিহাসিক অর্জন সমুদ্র বিজয়। এ সাফল্য ধরে রাখার জন্য প্রতিবেশী সমুদ্রবেষ্টিত দেশগুলোর সঙ্গে সমুদ্র ও উপকূলীয় পথে যোগাযোগ সম্পর্কের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ৬ জুন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তি হয়েছে। সাগরবেষ্টিত অপর প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সমুদ্রভিত্তিক যোগাযোগ গড়ে তোলার লক্ষ্যে মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে যাত্রী এবং পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল চুক্তি করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নীতিগত অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও অনুরোধ জানানো হয়েছে।-বিডিপ্রতিদিন ১৯ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে