সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৫, ০৪:২২:০৯

রাজশাহীর পদ্মায় ৫০ বছর পর ইলিশ

রাজশাহীর পদ্মায় ৫০ বছর পর ইলিশ

হারুন আল রশীদ : প্রায় ৫০ বছর পর পুরোনো বিচরণক্ষেত্রে ফিরতে শুরু করেছে ইলিশ। পদ্মা ও মেঘনার যেসব এলাকায় ইলিশের অস্তিত্ব ছিল না, এখন সেখানে ইলিশের সমারোহ। জাটকা নিধন প্রতিরোধ করা সম্ভব হলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশের অধিকাংশ প্রধান নদীতে ইলিশ পাওয়া যাবে। মৎস্য অধিদপ্তর রোববার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ তথ্য জানিয়েছে। অধিদপ্তর বলেছে, পদ্মার উজানে রাজশাহীর পবা, গোদাগাড়ী, বাঘা ও চারঘাট এলাকায় প্রতিদিন দুই টন ইলিশ বাণিজ্যিকভাবে ধরা হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে পদ্মার শাখা নদীতেও ইলিশ দেখা যাচ্ছে। আগামী বছর সেখানে বড় ইলিশ পাওয়া যাবে। সংসদ ভবনে গতকাল মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য মীর শওকাত আলী প্রতিবেদককে বলেন, পদ্মার শরীয়তপুরের অংশ থেকে উজানে গত ৪০-৫০ বছরে ইলিশের বিচরণ দেখা যায়নি। মা ইলিশ ও জাটকা ইলিশ নিধনের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। মানুষ সচেতন হওয়ায় জাটকা নিধন কমেছে। যে কারণে ইলিশ পুরোনো জায়গায় ফিরতে শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, এখনো বাজারে ডিমসহ ইলিশ পাওয়া যায়। এটি কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়, সে বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরকে একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটির বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার আগের ও পরের ১৫ দিনকে ইলিশের প্রজনন মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। এ সময়ে মা ইলিশ সাগরের লোনা পানি ছেড়ে নদীর মিঠাপানিতে এসে ডিম ছাড়ে। ১৯৭০-এর আগে পদ্মা ও মেঘনাসহ দেশের প্রায় সব প্রধান নদীতে ইলিশ পাওয়া যেত। ধীরে ধীরে ইলিশের বিচরণক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে পড়ে। নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে ইলিশ ধরা নিষেধ হলেও জেলেরা জাটকা ইলিশ ধরে তা বাজারে বিক্রি শুরু করেন। ২০০৮ সাল থেকে সরকার চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের সংশ্লিষ্ট নদীতে জাটকা সংরক্ষণ প্রকল্প গ্রহণ করে। এরপর থেকে জাটকা নিধন কমে আসে এবং ইলিশের বিচরণক্ষেত্র বিস্তৃত হতে শুরু করে। যার ফলে পদ্মার শরীয়তপুর ও রাজবাড়ীর অংশে কয়েক বছর থেকে বাণিজ্যিকভাবে ইলিশ ধরার পরিমাণ বাড়ছে। গত বছর রাজশাহীতে ইলিশের পোনা দেখা যায়। এ বছর থেকে বড় ইলিশ ধরা পড়ছে। একইভাবে আগামী বছর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বড় ইলিশ ধরা পড়বে। ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্ল্ড ফিশ অর্গানাইজেশনের ইকো ফিশ প্রকল্পের দলনেতা ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. আবদুল ওহাব এই প্রতিবেদককে বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, ব্রহ্মপুত্রের ভারতীয় অংশেও জাটকা ইলিশ দেখা গেছে। সরকার জাটকা সংরক্ষণ প্রকল্প গ্রহণের ফলে এটি সম্ভব হয়েছে। ২০০০ সালে যেখানে সারা বছরে ১ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ পাওয়া যেত, এখন সেখানে পাওয়া যাচ্ছে ৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। আগামী বছর ইলিশ পাওয়া যাবে ৪ লাখ মেট্রিক টনের বেশি। তবে যেহেতু শুষ্ক মৌসুমে আমাদের নদীগুলো প্রায় শুকিয়ে যায়, সে জন্য অন্তত বড় নদীগুলো খনন করা হলে জাটকার বিচরণ ও পরিমাণ আরও বাড়বে এবং ইলিশের সংখ্যাও বাড়বে। উপকূলীয় এলাকায় মৎস্য অধিদপ্তরের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, জাটকা সংরক্ষণ প্রকল্প গ্রহণ করার পর নদীতে জাটকার উপস্থিতি ৩৯ শতাংশ বেড়েছে এবং ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে ৭০-৯০ শতাংশ। জানতে চাইলে জাটকা সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক বি এম জাহিদ হাবীব এই প্রতিবেদককে বলেন, রাজশাহীতে ১০ অক্টোবর থেকে প্রতিদিন দুই টন করে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। সচেতন মানুষ জাটকা ইলিশ কেনা বন্ধ করায় জেলেরা এখন আগের মতো জাটকা সংগ্রহ করে না। যে কারণে আগামী বছর থেকে রাজশাহীতে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ টন ইলিশ ধরা পড়বে। বৈঠকে মৎস্য অধিদপ্তর জানায়, দেশের বিভিন্ন জায়গায় জেলেরা এখনো নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাটকা ও ছোট ইলিশ নিধন করে চলেছে। এদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ৪২ টন ইলিশ ও ১ কোটি ৩২ লাখ মিটার জাল জব্দ করে। দোষী ব্যক্তিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া ও জরিমানা আরোপ করা হয়েছে। মীর শওকাত আলীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক, কামাল আহমেদ মজুমদার, গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস, ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার, খন্দকার আজিজুল হক, মুহম্মদ আলতাফ আলী ও সামছুন নাহার বেগম অংশ নেন।-প্রথমআলো ১৯ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে