এ কী করলেন প্রিয়া!
শরীফ মজুমদার : সাপ্তাহিক সত্য খবর পত্রিকার বিনোদন পাতার সাংবাদিক হারুন আল রশীদ। ফেসবুকে অবশ্য তার নাম ধ্রুব হারুন। নিজের পত্রিকার সঙ্গে মিলিয়ে নাম। প্রতিদিনই তাকে একটা করে রিপোর্ট লিখতে হয়। এই লাইনে অবশ্য খবরের অভাব হয় না। আর ফেসবুকটা তো বলা যায় খবরের খনি! অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো সেলিব্রিটিদের হাঁড়ি তো হাঁড়ি, কড়াই-জগ-গ্লাসের খবর পর্যন্ত বের করে আনতে বেশ পটু! ‘কীভাবে যে এরা পারে!’ মনে মনে প্রশংসা না করে পারে না হারুন। কয়েকটা সাড়া জাগানো রিপোর্ট সে লিখেছে এদের কল্যাণেই! প্রতিদিন তাই বেশ খানিকটা সময়ই তাকে ফেসবুকে ব্যয় করতে হয়।
কিন্তু আজকে নিউজফিড জুড়ে এসব কী আলতুফালতু জিনিস! একরাশ বিরক্তি নিয়ে লগআউট করার জন্য স্ক্রল করতে গিয়েই হারুন থমকে যায়। ধুম বাংলা ২৪ ডট কম-এর একটি খবরে চোখ আটকে যায় তার। এ মুহূর্তে ঢাকাই ছবির অন্যতম ব্যস্ত ও জনপ্রিয় নায়িকা শারমিন প্রিয়াকে নিয়ে খবরটা। নায়িকার ‘অসুবিধাজনক’ পোজের ছবির পাশে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা ‘গভীর রাতে রেস্তোরাঁয় বয়ফ্রেন্ডের সাথে এ কী করলেন প্রিয়া! (ভিডিওসহ)’। উত্তেজনায় গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায় হারুনের। ঠিক দেখছে তো সে? এই সেই শারমিন প্রিয়া!
একটা ইন্টারভিউ নেওয়ার জন্য হারুন কত দিন তার পেছন পেছন ঘুরেছে! কতভাবেই না চেষ্টা করেছে! কিন্তু দুদিনে ‘সেলিব্রিটি’ তকমা গায়ে লাগায় কী দেমাগ! শেষবার পুবাইলের একটা শুটিং স্পটে তো হারুনকে মাছি তাড়ানোর মতো করে তাড়িয়ে দিয়েছে। সে কত বিনয়ের সঙ্গে বলেছিল, ‘ম্যাডাম, খালি পাঁচটা মিনিট সময় দেন।’ বলে কী, ‘ভাই, যান তো এখন। বহুত প্যারায় আছি। পরপর পাঁচটা শট এনজি হইছে!’ কথার কী ছিরি! নায়িকারা কখনো ‘বহুত প্যারায় আছি’ এমনভাবে কথা বলে! হারুন তখনই প্রতিজ্ঞা করেছিল, সে-ও দেখে নেবে! সুযোগ পেলে এমন রিপোর্ট করবে যে পায়ের তলার মাটি তো মাটি, কাদা-বালু পর্যন্ত সরিয়ে ছাড়বে! উত্তেজনায় পুরো খবরটা আর পড়া হয় না হারুনের।
ঝটপট খবরটার কয়েকটা স্ক্রিনশট নেয় হারুন। পরিচিত সব বিনোদন সাংবাদিককে ইনবক্স করতে থাকে। সঙ্গে একটা লেখা, ‘দেখেন, আপনাদের হার্টথ্রব নায়িকার কাণ্ড!’ খানিকক্ষণের মধ্যেই খবরটা রাষ্ট্র হয়ে যায়। নিউজফিডে ব্যাপারটা নিয়ে ঝড় ওঠে। তারই পাঠানো স্ক্রিনশট দিয়ে একজন বেশ জ্বালাময়ী স্ট্যাটাস দেয়, ‘ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করলেই এমন হতে হবে? জাতি এদের কাছ থেকে কী–ইবা আশা করবে! জনপ্রিয়তার আঁচ লাগলে এদের আর হুঁশ থাকে না!’ সেই স্ট্যাটাসের কমেন্টগুলোয় চৌদ্দ দুগুণে আটাশ গুষ্টি উদ্ধার করা হয় নায়িকার। কেউবা আবার ‘ঠিক বলেছেন ব্রো’, ‘একদম রাইট’ বলে ব্যাপকভাবে সহমত পোষণ করে! হারুনের কেমন যেন সীমাহীন আনন্দ হয়। সে একটা কমেন্ট করে, ‘ভাই, স্ক্রিনশট ক্রেডিট তো দিলেন না... লুল।’
নিজের রিপোর্ট তৈরির কাজে মনোযোগী হয় হারুন। এ ধরনের খবর গেলার জন্য পাবলিক এমনিতেই হাঁ করে থাকে। তার ওপর একটু বাড়তি মালমসলা হলে তো সোনায় সোহাগা! হারুনের কাছে অবশ্য মালমসলার অভাব নেই। এর মধ্যেই সে নায়িকা প্রিয়ার অতীত জীবনের অনেক কিছু ফাঁস করতে পেরেছে! এবার বাকিটুকু করলেই ষোলোকলা পূর্ণ!
এর মধ্যে হারুনের ইনবক্সে বেশ কিছু মেসেজ জমা পড়েছে। খবরটা সাপ্লাই দেওয়ার জন্য অনেকে দিলখোলা ধন্যবাদ জানিয়েছে তাকে। কিন্তু একজন লিখেছে, ‘ভাই, ভিডিওটা মনে হয় আপনি দেখেননি। দেখেন, সেই রকম মজা পাবেন। হা হা হা!’
‘সেই রকম মজা’? ভাবতেই হারুনের কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগে। ততক্ষণে তার মনে পড়ে, আরে, পুরো খবরটাই তো পড়া হয়নি! সে রিপোর্ট দাঁড় করাবে কীভাবে!
খুঁজে খুঁজে ধুম বাংলা ২৪ ডট কম-এর খবরটা আবার বের করে পড়তে শুরু করে হারুন, ‘গতকাল আনুমানিক রাত ১০টার দিকে ঢাকাই ছবির অন্যতম জনপ্রিয় নায়িকা শারমিন প্রিয়া তাঁর বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে রাজধানীর একটি অভিজাত রেস্তোরাঁয় যান। খাবার অর্ডার করে তাঁরা গল্পগুজব করছিলেন। এমন সময় বলা নেই, কওয়া নেই হঠাৎ করেই প্রিয়ার গায়ের ওপর এসে পড়ে একটা তেলাপোকা! বিকট শব্দে চিৎকার করে লাফিয়ে ওঠেন প্রিয়া। তাঁর পায়ের ধাক্কায় টেবিলে রাখা একটি গ্লাস ভেঙে খানখান হয়ে যায়। প্রিয়ার এমন কাণ্ডে বেচারা তেলাপোকাও দারুণ ভয় পায়!
কিংকর্তব্যবিমূঢ় তেলাপোকাটি নায়িকার শরীর থেকে উড়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেই দ্বিতীয় দফা চিৎকার করে বয়ফ্রেন্ডকে জড়িয়ে ধরেন প্রিয়া। তাঁর এমন কাণ্ডে আশপাশের সবাই হতভম্ব হয়ে পড়েন। প্রত্যক্ষদর্শী প্রিয়াদের পাশের টেবিলের একজন ধুম বাংলাকে বলেন, “ভাঙা গ্লাসের একটা বিরাট টুকরা আমার ঠিক পায়ের কাছে এসে পড়ে। এতে আমি বেশ ভড়কে যাই”!’ ঘটনার অপর এক প্রত্যক্ষদর্শী নিজের স্মার্টফোনে পুরো ঘটনাটি ভিডিও করেন। ভিডিওটি দেখতে নিচে ক্লিক করুন...-প্রথমআলো
১৯ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে
