সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৫, ০৫:০৭:১৩

৭ ঘণ্টা ভোগান্তির পর শ্রমিকদের অবরোধ প্রত্যাহার

৭ ঘণ্টা ভোগান্তির পর শ্রমিকদের অবরোধ প্রত্যাহার

ঢাকা : রাজধানীতে রোববার গণপরিবহনের কর্মচারীকে কারাদণ্ডের জের ধরে মিরপুর ১০ নম্বর-কেন্দ্রিক বাসের চলাচল প্রায় সাত ঘণ্টা বন্ধ ছিল। এতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ চরম বিপাকে পড়ে। তবে সন্ধ্যার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। জানা গেছে, বাড়তি ভাড়া আদায় ও ভাড়ার তালিকা না থাকায় আগারগাঁও এলাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সামনে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত মিরপুর থেকে নারায়ণগঞ্জগামী হিমাচল পরিবহনের চালকের সহকারীকে এক মাসের কারাদণ্ড দেন। এর জের ধরে ওই এলাকার বাসশ্রমিকেরা প্রতিবাদ শুরু করেন। তাঁরা মোবাইল কোর্টের কার্যক্রমের প্রতিবাদে মিরপুর ১০ নম্বর থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলকারী বাস বন্ধ করে দেন। এর ফলে মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, পল্লবী, ফার্মগেট, মতিঝিল, বিশ্বরোড, গুলিস্তান পর্যন্ত শত শত যাত্রী বাসের জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেন। এতে ওই এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হন। অনেকে বাস না পেয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেন। কেউ কেউ বাড়তি ভাড়া দিয়ে অটোরিকশায় গন্তব্যে পৌঁছান। বেলা একটার দিকে শাহবাগ, কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেট এলাকায় মানুষকে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তখনো অনেকেই জানতেন না বাস না থাকার কারণ। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) রোববার ঢাকায় তিনটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। আগারগাঁও ছাড়া অন্য দুটি আদালত বসে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও খিলক্ষেত এলাকায়। এসব আদালতে জরিমানা আদায় ছাড়াও তিনজন পরিবহন শ্রমিককে কারাদণ্ড দেন আদালত। ১ অক্টোবর থেকে বাস-মিনিবাসের নতুন ভাড়া হার কার্যকর হয়। শুরু থেকেই পরিবহন মালিক-শ্রমিকের বিরুদ্ধে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ ওঠে। এরপর থেকে বিআরটিএ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে। জরিমানার পাশাপাশি কারাদণ্ড দেওয়া বন্ধ করার জন্য পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা চাপ দিয়ে আসছিল। বিআরটিএর একজন কর্মকর্তা বলেন, মালিক সমিতির চাপের পরও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ড দেওয়া অব্যাহত রাখলে তাঁরা যাত্রীদের জিম্মি করার কৌশল নেয়। জানতে চাইলে বিআরটিএর পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) বিজয় ভূষণ পাল প্রতিবেদককে বলেন, একটা ভুল বোঝাবুঝি থেকে বাস বন্ধের ঘটনা ঘটেছে। পরে মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি মিটে গেছে। আর কোনো সমস্যা নেই। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, মিরপুর গন্তব্যের বাস না থাকায় মতিঝিল এলাকার অন্যান্য বাসে প্রচণ্ড যাত্রীর চাপ দেখা দেয়। অনেক চেষ্টার পরও বাসে উঠতে না পেরে তিনি মতিঝিল থেকে কারওয়ান বাজারে অটোরিকশায় আসেন আড়াই শ টাকায়। অথচ অন্য সময় একই গন্তব্যে তিনি ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় যাতায়াত করেন। আরেক যাত্রী উজ্জল হোসেন আমিন বাজার থেকে ফার্মগেট অটোরিকশায় আসেন ৪০০ টাকা খরচ করে। বাস বন্ধ থাকার কারণ জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্লাহ এই প্রতিবেদককে বলেন, এ পর্যন্ত চার-পাঁচজন চালক-শ্রমিককে মোবাইল কোর্টে সাজা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, চলন্ত গাড়ি থামিয়ে এভাবে শ্রমিকদের সরাসরি কারাদণ্ড দিলে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। যাত্রীদেরও ভোগান্তি বাড়ে। কর্তৃপক্ষকে এর আগেও বলা হয়েছে, শুরুতেই সর্বোচ্চ শাস্তি না দেওয়ার জন্য। কিন্তু এটি দেওয়ার জন্য রোববার বাস বন্ধ ছিল। পরে সন্ধ্যার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কে এম আল আমিন বলেন, তিনি নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে রোববার সাড়ে নয়টায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম শুরু করেন। একপর্যায়ে তিনি দেখেন সকাল ১০টার পরে কিছুক্ষণের জন্য বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তিনি দাবি করেন, এর সঙ্গে মোবাইল কোর্টের কোনো সম্পৃক্ততা আছে কি না তা তিনি জানেন না। তিনি জানান, রোববার হিমাচল পরিবহনসহ আরও কয়েকটি পরিবহনে বাড়তি ভাড়া আদায়, ভাড়ার তালিকা না থাকাসহ বিভিন্ন অভিযোগে বিভিন্ন পরিবহনের বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা করা হয়েছে ও ১৩ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ সময় সিএনজিচালিত অটোরিকশা দুটি এবং একটি লেগুনা জব্দ করা হয়েছে। হিমাচল পরিবহনের চালকের সহকারীকে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আগে এর চেয়েও বেশি জরিমানা করা হয়েছে, কিন্তু কোনো হট্টগোল হয়নি। ১৯ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে