নিউজ ডেস্ক: তিনটি কারণে সীতাকুণ্ডের 'সাধন কুটির' বাড়ির মালিকের সন্দেহ হয়েছিল তার ভাড়াটিয়াদের সম্পর্কে।
এক. ভাড়াটিয়া তার কাছে যে জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়েছিল, তা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে গিয়ে মিলিয়ে দেখে তার সত্যতা পাননি; দুই. যে প্রতিষ্ঠানে ভাড়াটিয়ারা চাকরির কথা বলেছিল, সেখানে খবর নিয়ে তথ্য ভুল বলে প্রমাণ পান; তিন. একদিন ভাড়াটিয়ার বাসায় ঢুকে দেখেন অসংখ্য বৈদ্যুতিক সার্কিট পড়ে আছে।
তার মধ্যে একটি সার্কিট বাড়ির মালিক একটি ইলেকট্রনিক্সের দোকানে দেখাতে নেন। সেখানে তারা জানান, এসব সার্কিট সাধারণ কাজে ব্যবহার হয় না।
তখনই ভাড়াটিয়াদের নিয়ে জঙ্গি সন্দেহ আরও দৃঢ় হয় সাধন কুটিরের মালিকের। তিনি খবর দেন পুলিশকে। বাড়ির মালিকের সহায়তায় পুলিশ গত বুধবার গ্রেফতার করে আত্মঘাতী জঙ্গি দম্পতি জসীম ও আরজিনাকে। জসীমের প্রকৃত নাম জহিরুল ইসলাম।
আরজিনার প্রকৃত নাম রাজিয়া সুলতানা। তাদের বাড়ি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের জঙ্গলঘেরা যৌথ খামারপাড়া এলাকায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্তত ২১টি আলামত দেখে বাড়ির মালিক বা আশপাশের বাসিন্দারা নিশ্চিত হতে পারেন, কোন ভাড়াটিয়া জঙ্গি। একটু সচেতন হলেই তারা জঙ্গিদের ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে পারেন।
সাধারণত যেসব আলামত দেখে জঙ্গি আস্তানা নির্ণয় করা যায় তা হলো- জঙ্গিদের ভাড়া করা বাসার জানালায় সব সময় পর্দা লাগানো থাকে, বাথরুমের ভেন্টিলেটরেও পর্দা দেওয়া থাকে, বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় পরিচয়পত্রে একটি মোবাইল ফোন নম্বরের বেশি দেওয়া থাকে না।
কৌশলে ওই মোবাইল নম্বরের যে কোনো একটি নম্বর এমনভাবে লেখা থাকে, যাতে পড়তে সমস্যা তৈরি হয়।
অনেক সময় বারো সংখ্যার ভুল মোবাইল নম্বর দেওয়া থাকে। ভাড়াটিয়া ফরমে যে ছবি দেওয়া থাকে, তা অনেক পুরনো ছবি, যে ছবির সঙ্গে বর্তমান ছবির খুব বেশি মিল নেই। জঙ্গি আস্তানায় খুব বেশি আসবাব তারা ব্যবহার করে না। রাত ১০টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে এবং ভোরে ওঠে।
অনেক জঙ্গি সরু গলির শেষ মাথায় বাসা ভাড়া নেয়। দোকানপাট রয়েছে এমন কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে বাসা ভাড়া নেওয়া থেকে তারা বিরত থাকে। একই ব্যক্তিকে সব সময় কেনাকাটা করতে বাসার বাইরে পাঠানো হয় না। জঙ্গি আস্তানায় যারা বসবাস করে, সেখানে কম বয়সীদের যাতায়াত থাকে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ল্যাপটপ বহন করে। আশপাশের ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে খুব বেশি মেশে না।
এ ছাড়া জঙ্গিরা বাসায় নামাজ পড়ে। তারা আশপাশের মসজিদেও কম যায়। অধিকাংশ জঙ্গির বাসায় টেলিভিশন থাকে না। এমনকি বাসায় তারা সিলিং ফ্যান ব্যবহার করে না। জঙ্গি আস্তানায় যারা থাকে, তারা অধিকাংশ সময় ডিম ও বেগুন রাখে, যাতে অল্প সময়ের মধ্যে তারা রান্না করে খেতে পারে।
অনেক জঙ্গি আস্তানা থেকে সিলপাটা ঘষাঘষির শব্দ পাওয়া যায়। এ থেকে ধারণা করা যায়, তারা ভেতরে বোমা তৈরি করছে। কোনো জঙ্গি চার-পাঁচ মাসের বেশি একই আস্তানায় থাকে না। প্রথমে বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় সাধারণত দুই নারী-পুরুষ যাবে। এরপর বলবে, তাদের সঙ্গে কয়েকজন আত্মীয়স্বজন থাকবে। দরজার 'আইহোলে' জঙ্গিরা স্কচটেপ মুড়িয়ে রাখে।
এমটিনিউজ২৪ডটকম/এম,জে