গণমাধ্যমকে হুমকি দিয়ে আনসারুল্লাহর ছয় দফা
নিউজ ডেস্ক : গণমাধ্যমকে ছয় দফা 'নির্দেশনা' দিয়ে আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের নামে ইমেইল পাঠিয়ে হুমকি দেয়া হয়েছে। 'জিহাদবিরোধী' সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে এতে বলা হয়েছে, 'আমাদের নির্দেশনা আজ থেকে আপনাদের জন্য আইন। ইসলামের পথে না চললে আপনাদের পরিণতি হবে ভয়াবহ। উঁচু উঁচু ভবন সব ধুলায় লুটাবে, আপনাদের শির লুটাবে ইসলামের সেনানিদের পদতলে।'
নারীদের ঘরের বাইরে চাকরি করা ইসলামী শরিয়া মতে 'শাস্তিযোগ্য অপরাধ' দাবি করা হয়েছে ওই বার্তায়। বলা হয়েছে, সংবাদমাধ্যমের নারীকর্মীদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। সোমবার দুপুরের পর
[email protected] নামে একটি ইমেইল আইডি থেকে যায়যায়দিনেরই বার্তাকক্ষের ঠিকানায় ওই ইমেইল পাঠানো হয়। অ্যাড্রেস লিস্টে দেখা যায়, একই মেইল দেশের শীর্ষস্থানীয় অন্যান্য গণমাধ্যম কার্যালয়েও পাঠানো হয়েছে।
বার্তার উপরে ঠিকানা লেখা হয়েছে আনসারউল্লাহ বাংলা টিম, প্রধান কার্যালয়, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ। শেষে প্রেরকের জায়গায় লেখা হয়েছে আবদুল্লাহ বিন সালিম, প্রচার সমন্বয়ক, আনসারউল্লাহ বাংলা টিম।
সোস্যাল মিডিয়ায় ইসলামবিরোধী প্রচারণার অভিযোগ তুলে কয়েকজন বস্নগারের নাম উল্লেখ করে তাদের হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে চিঠিতে।
গণমাধ্যমকে হুমকি দিয়ে এতে বলা হয়, 'আপনারাও যদি নাস্তিক্যবাদীর সহায়তাকারী হন তবে কাউকে ছাড়া হবে না। আপনাদের বাকস্বাধীনতা যদি আমাদের বেঁধে দেয়া সীমা না মানে তবে আমাদের ক্রোধ প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য প্রত্যেক সংবাদমাধ্যম যেন প্রস্তুত থাকে।'
প্রথমত নারীদের চাকরিচ্যুৎ করার দাবির পক্ষে যুক্তি দিয়ে চিঠিতে বলা হয়, 'যেহেতু নারীদের ঘরের বাইরে চাকরি করা, বেপর্দা হয়ে ঘোরাঘুরি করা ইসলামী শরিয়া মতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ তাই যারা এদের চাকরি দিচ্ছেন, করাচ্ছেন, তারাও সমানভাবে দোষী।'
'সকল সংবাদমাধ্যমের প্রতি আহ্বান করছি নারীদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দিন।'
তাদের অন্য দাবিগুলো হলো:
ইসলামবিরোধী, নাস্তিক্যবাদী শক্তির কোনো প্রকার প্রচারণায় শামিল হওয়া যাবে না।
ইসলামের সেনানিদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার অপপ্রচার চালানো যাবে না। তাদের যে কোনো জিহাদি কর্মকাণ্ডের সমালোচনা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য এবং নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।
পত্রিকার বিজ্ঞাপনে নারী মডেলের ছবি ব্যবহার করা যাবে না। কোনো নারীর বেপর্দা ছবি পত্রিকায় ছাপানো যাবে না।
বিনোদন পাতা, নৃত্য, গীত, নাটক, সিনেমা এমন যে কোনো ইসলামী শরীয়তবিরোধী যা সমাজে 'ফিতনা' ছড়ায়, যুবক-যুবতীদের মনে যৌনতা উসকে দেয় তা প্রকাশ থেকে বিরত থাকতে হবে।
যে কোনো নাস্তিকের মৃত্যুর পর পত্রিকায় কোনো প্রকারের জিহাদবিরোধী সংবাদ প্রকাশ করা যাবে না। করলে সে পত্রিকায় চাকরিরত এবং মালিক পক্ষকে নাস্তিক, নাস্তিক্যবাদের সহায়ক শক্তি হিসেবে গণ্য করে সমূলে উপড়ে ফেলা হবে।
চিঠির শেষ অংশে বলা হয়, 'আমাদের লক্ষ সেনানি প্রস্তুত হচ্ছে ইসলামের পবিত্র এই ভূমির আনাচে-কানাচে। আমাদের প্রস্তুতি শেষের প্রায় চূড়ান্ত। যে কোনো দিন খেলাফত কায়েমের সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ব আমরা।'
বিদেশে অবস্থানরত নয়জন এবং দেশে বসবাসরত ছয়জন বস্নগারের নাম তুলে দিয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, 'যারা বিদেশে আছেন তাদের দেশে ফেরার সাথে সাথে আর যারা দেশের অভ্যন্তরে গা-ঢাকা দিয়ে আছেন তাদের সুযোগ পাওয়ার সাথে সাথে হত্যা করা হবে।'
নির্দিষ্ট কোনো 'হত্যা তালিকা' বা হিটলিস্ট নেই জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, 'ফেসবুক, বস্নগসহ যে কোনো মাধ্যমে যে আল্লাহ, নবী, রাসুল, সাহাবি, ওলামায়ে কেরাম, মাদ্রাসার শিক্ষক, ধর্মপ্রাণ মুসলমান, উম্মুল মোমেনিনদের চরিত্র দিয়ে প্রশ্ন তুলবে, বাজে কথা বলবে তার আজরাইল হিসেবে রাব্বুল আলামিন আমাদের প্রেরণ করবেন। সুযোগ পাওয়া মাত্র ইসলামের বীরসেনানিরা তাদের কতল করবে।
'এই মর্মে হুশিয়ারি প্রদান করা যাচ্ছে যে, দেশ কিংবা বিদেশে পালিয়ে থাকা নাস্তিকদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে কেউ যেন নাস্তিকতার দিকে ঝুঁকে না পড়েন। নইলে পরিণতি হবে নিলয় নীল কিংবা ওয়াশিকুর বাবু, অভিজিৎ রায়ের মতো। একটি নাস্তিককেও বেঁচে থাকতে দেয়া হবে না। এদের হত্যা করা আল্লাহ রাসূলের বিধান মতে ওয়াজিব।'
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, 'বিভিন্ন পত্রিকায় আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের মেইলের খবরটি আমরা জানতে পেরেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। 'আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি এবং কারা এর পিছনে, কোথা থেকে এসেছে তা তদন্ত করছি।'
সম্প্রতি দুই বিদেশি খুন হওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের দায় স্বীকারের খবর নিয়ে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের আশঙ্কা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়।
তবে ওই দুই খুনে আইএসের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি জানিয়ে সরকার বলেছে, বাংলাদেশে আইএস বা এ ধরনের কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীর তৎপরতা নেই। অবশ্য গত এক বছরেরও কম সময়ে চারজন বস্নগার খুনের সঙ্গে আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের সংশ্লিষ্ট রয়েছে বলে পুলিশের দাবি। আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের নামে নানাজনকে হুমকি সংবলিত বার্তা এর আগেও গণমাধ্যমে এসেছে।-বিডিনিউজ
২০ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে
�