মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৫, ০১:৩৪:৫৩

সরকারকে চাপে রাখতে কৌশলী ভূমিকা নেবে বিএনপি

সরকারকে চাপে রাখতে কৌশলী ভূমিকা নেবে বিএনপি

লোটন একরাম : আসন্ন পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে 'কৌশলী' ভূমিকা নেবে বিএনপি। সরকারকে চাপের মুখে রেখে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার 'পথ খুঁজছে' দলটি। এ লক্ষ্যে শিগগির অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) পুনর্গঠনের দাবি উত্থাপন করবে তারা। একইসঙ্গে সব প্রার্থীর জন্য 'লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড' নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য প্রার্থী বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত 'মিথ্যা মামলা' প্রত্যাহার ও হয়রানি বন্ধের দাবিও তুলবে দলটি। বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্রগুলো এ তথ্য জানিয়েছে। সূত্র জানায়, সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে চাপের মুখে রেখে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে এ কৌশল নিতে যাচ্ছে দলটি। শেষ পর্যন্ত সরকার দাবি না মানলে দলীয়ভাবে বা একক 'স্বতন্ত্র প্রার্থী' দিয়ে হলেও ভোটযুদ্ধে অংশ নেবে বিএনপি। নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশে ফেরার পর দল ও জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পৌর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় সিদ্ধান্ত জানাবে বিএনপি। এ বিষয়ে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রতিবেদককে বলেন, বর্তমানে বিএনপির অধিকাংশ স্থানীয় শীর্ষ নেতা একাধিক মামলায় গ্রেফতার ও হয়রানির শিকার। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন হলে তা 'লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড' হবে না। একদিকে সরকারি দলের নেতারা নির্বাচনী মাঠে থেকে প্রশাসনে প্রভাব বিস্তার করবেন, অন্যদিকে বিএনপি নেতারা কেউ কারাগারে বা কেউ পালিয়ে বেড়ানো অবস্থায় ভোট করলে ফল যা হবে, তা সবার জানা। সরকার ষড়যন্ত্রমূলকভাবে নিজ দলের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, দল ও জোটে শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়া, বা না নেওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সূত্র জানায়, বর্তমানে বিএনপি নাজুক সাংগঠনিক অবস্থায় থাকলেও আসন্ন পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে নানামুখী কৌশল খুঁজতে শুরু করেছে। সরকার আকস্মিকভাবে দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেও এবার সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করছে দলটি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কটের মতো আর 'ভুল' সিদ্ধান্ত নিতে রাজি নন তারা। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি, ২০ জোটের শীর্ষ নেতা এবং দলসমর্থিত বুদ্ধিজীবী বা থিং ট্যাঙ্কদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যাতে গৃহীত সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে কেউ কাউকে দোষারোপ করতে না পারে। দলের একাধিক নীতিনির্ধারক নেতা জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশ নিলে কী ফল হতে পারে মোটামুটি নিশ্চিত তারা। বিগত ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে সে অভিজ্ঞতা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে বারবার আহ্বান জানানোর পরও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের প্রচারে সমান সুযোগ দেওয়া হয়নি। কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করেছে। এই কমিশনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন কোনোমতেই সম্ভব নয়। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠনের দাবি তুলবে বিএনপি। নাম প্রকাশ না করে বিএনপির এক নেতা বলেন, সরকার বিএনপির দাবি না মানলে তারা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে দলীয়ভাবেও নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন তারা। রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে 'একক স্বতন্ত্র প্রার্থী' দিয়েও ভোটযুদ্ধে লিপ্ত হতে পারে। যেভাবে হোক পরিকল্পিতভাবে আসন্ন পৌর ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি। বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন এই প্রতিবেদককে বলেন, বর্তমানে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট হওয়ার কোনো পরিবেশ নেই। সরকারের দমন-পীড়নে বিরোধী দলের হাজারো নেতাকর্মী কারারুদ্ধ। এমন প্রেক্ষাপটে সমান সুযোগ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া দুরূহ। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন দেশে ফেরার পর দল ও জোটের বৈঠকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা বর্জন করার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। সূত্র জানায়, প্রতিটি পৌরসভায় একক জোটগত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী দিতে পারে বিএনপি। যোগ্য ও জনপ্রিয় নেতাদের মনোনয়ন বা সমর্থন দেওয়ার চেষ্টা করবেন তারা। তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে নিজ নিজ জেলাকে প্রার্থী চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হবে। দল বা জোটের একাধিক যোগ্য প্রার্থী হয়ে গেলে কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করে একজনকে রেখে বাকিদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। আওয়ামী লীগকে খালি মাঠে গোল করতে দেবে না বিএনপি।-সমকাল ২০ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে