বিশেষ প্রতিনিধি : বাড়িটি ঘিরে অবস্থান নিয়েছেন পুলিশের বিশেষ বাহিনী সোয়াট সদস্যরা, আছেন সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো। ঘটনাস্থলে বিকেলে আনা দুটি অ্যাম্বুলেন্স সন্ধ্যার দিকে ফিরে গেলেও রাত ৯টার দিকে আবার ঘটনাস্থলে অ্যাম্বুলেন্স এসেছে। অভিযানে সেনা সদস্যরা অংশ নেবেন কিনা এ সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ কিছু জানা যায়নি।
সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ী পাঠানপাড়া। একই মালিকের পাশাপাশি দুটি ভবন। একটি চার তলা, অন্যটি পাঁচ তলা। পাঁচ তলা ভবনটির নিচতলায় প্রায় তিন মাসে আগে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা পরিচয়ে ভাড়া নেন এক যুবক। নিজেকে পরিচয় দেন কাওছার হিসেবে, আর স্ত্রীর নাম বলেন মর্জিনা। তিন মাস পেরিয়ে গেলেও কেউ জানতেন না তাদের জঙ্গি পরিচয়।
তবে কয়েক দিন আগে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ধরা পড়া দুই জঙ্গির কাছ থেকে সিলেটের এই জঙ্গি ঘাঁটির সন্ধান পায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। দ্রুত বিষয়টি অবহিত করা হয় সিলেটের পুলিশকে। বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতেই তারা ঘিরে ফেলে ভবনটি। এরপর শুরু হয় রুদ্ধশ্বাস অভিযান।
সারা দিন ভবনটি পুলিশ ঘিরে রাখার পর বিকাল ৪টায় এসে অভিযানে যোগ দেয় সোয়াত। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র এবং সরেজমিনে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ী পাঠানপাড়ার ‘আতিয়া মহল’-এ জঙ্গি আস্তানা রয়েছে, এমনটা নিশ্চিত হওয়ার পর ভবনটি ঘিরে ফেলে পুলিশ। পুলিশ নিশ্চিত হয় নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে অবস্থান করছেন জঙ্গি দম্পতি। রাতেই তারা তালা ঝুলিয়ে দেয় ওই ফ্ল্যাটের প্রধান ফটকে। সকাল ৭টার দিকে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে জঙ্গিরা ভবনের ভিতর থেকে দুটি বিস্ফোরণ ঘটায়।
যে পরিচয়ে বাসা ভাড়া নেয় জঙ্গিরা : গত জানুয়ারির শুরুর দিকে প্রায় ৩০ বছর বয়সী কাওছার নিজেকে একটি বাণিজ্যিক কোম্পানির কর্মকর্তা পরিচয়ে ওই বাসা ভাড়া নেন। সঙ্গে ছিলেন মর্জিনা। আতিয়া মহলের মালিক উস্তার আলী বলেন, ‘তারা নিজেদের স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দেন। এত দিন তাদের কর্মকাণ্ডে সন্দেহজনক কিছু দেখা যায়নি। তবে পুলিশের কাছ থেকে তাদের জঙ্গি পরিচয় জানার পর সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছি। ’
দফায় দফায় গুলির শব্দ : সিলেটের জঙ্গি ঘাঁটি ঘিরে গতকাল সকাল থেকে পুলিশ, র্যাব, ডিবি, এসবি, পিবিআইসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবস্থান নেয়। রাতে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দফায় দফায় শোনা যায় গুলির শব্দ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জঙ্গিদের ব্যতিব্যস্ত ও আতঙ্কে রাখতে ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
পুলিশ ধারণা করছে, ভেতরে জঙ্গিদের কাছে বিস্ফোরক থাকতে পারে। এছাড়া ভবনের ২৮ পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবেও চূড়ান্ত অভিযানে দেরী করা হচ্ছে। সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে অভিযানের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সাধারণ নাগরিকের প্রাণের ঝুঁকির কথা বিবেচনা করেই এগুচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মধ্যরাতে না ভোরের দিকে চূড়ান্ত অভিযান চালানো হবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু জানা যায়নি। ভোরের দিকে চূড়ান্ত অভিযান শুরু হতে পারে বলেও একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
ভেতরে সন্দেহভাজন কক্ষ থেকে সন্ধ্যা পর থেকে আর কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এখন উৎসুক জনতাও ঘটনাস্থল থেকে সরে গেছেন। সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ছাড়া তেমন কেউ নেই। গত জানুয়ারি মাসে প্রাণ কোম্পানির অডিট অফিসার পরিচয়ে কাওসার আহমদ ও মর্জিনা বেগম ওই বাড়ি ভাড়া নেন বলে জানিয়েছেন বাড়ির মালিক।
২৫ মার্চ ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসবি