কাজী সোহাগ : দেশে হঠাৎ করেই জঙ্গি তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় কেন্দ্র থেকে জেলা পর্যায়ে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি পালনে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার তাগিদ দেয়া হয়েছে।
এ জন্য পরিস্থিতি বুঝে নিরাপত্তার কৌশল বের করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের। সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কুচক্রী মহল দেশে যেকোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে তৎপর বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তাদের বক্তব্য-টানা ২বার ক্ষমতায় থাকার কারণে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এখন প্রধান টার্গেট। এর আগে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের এমপি লিটনকে প্রকাশ্যে তার বাড়িতে গিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা সেই বার্তা পৌঁছে দিয়েছে।
এদিকে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর সতর্ক জেলা ও থানা পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারা দলীয় কর্মসূচি পালনে চোখ-কান খোলা রাখছেন বলে জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য আবদুর রহমান গতকাল বলেন, সভা-সমাবেশ করতে গিয়ে দলীয় নেতাকর্মীরা জঙ্গি হামলার বিষয়টি নজরে রাখছে। সে ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, একটা জনসভার মধ্যে হাজার হাজার লোক হয়। সিকিউরিটি গেট বা আর্চওয়ের মাধ্যমে সবাইকে জনসভাস্থলে প্রবেশ করানো সম্ভব নয়। বিশেষ করে উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে ওই ধরনের নিরাপত্তা দেয়ার সুযোগ নেই। তাই নিজস্ব প্রক্রিয়ায় যতটুকু সম্ভব সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে দেশের সীমান্তঘেঁষা জেলা মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা জঙ্গিবিরোধী জনসচেতনতা বাড়াতে কাজ করছি। গত কয়েক দিনের ঘটনার প্রেক্ষাপটে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দলীয় কর্মসূচি পালনে সতর্কতা অবলম্বন করছি। ১৭ই এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। এ উপলক্ষে জেলায় নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এছাড়া, নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে। সবকিছুতেই আমরা সতর্কতা অবলম্বন করছি।
কি ধরনের বা কিভাবে সতর্কতা অবলম্বন করছেন প্রশ্নে তিনি বলেন, দলীয় কর্মীদের মাধ্যমে কর্মসূচির আশেপাশে সন্দেহজনক সবকিছু গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে চোখ-কান খোলা রেখে দলীয় কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। আগামী ২রা এপ্রিল সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক ডেকেছে আওয়ামী লীগ। সকাল ১০টায় দলের ধানমন্ডি কার্যালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি ইস্যুতে দলীয় অবস্থান ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এদিকে সংশ্লিষ্টরা জানান, সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে জরুরি ছাড়া জনসমাবেশ এড়িয়ে চলছেন সংসদ সদস্যরা। দেশের বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার এমপিদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, নিরাপত্তার ইস্যুটি এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দেশে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনা অনেক ধরনের আশংকার জন্ম দিয়েছে। তাই এক জায়গায় অনেক মানুষের উপস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তারা জানান, দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাড়া-মহল্লায় জঙ্গিবাদ-বিরোধী সমাবেশ করেছি। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। জঙ্গিদের নিয়ে তাদের মনে রয়েছে প্রচণ্ড ঘৃণা। বাংলাদেশে বর্তমানে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত এমপি রয়েছেন ৩০০ জন। আর সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি হিসেবে আছেন ৫০ জন। সম্প্রতি সংসদে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে আশংকা জানান এমপিরা। নিজেদের জন্য গানম্যান দাবি করেন তারা।
এমপিদের যুক্তি-মন্ত্রী-সচিব-ডিসি-এসপি-বিশিষ্ট ব্যক্তিরা গানম্যান পেলে এমপিরা পাবেন না কেন? কেউ পাবেন আর কেউ পাবেন না- এটা হতে পারে না। আমরা মরতে ভয় পাই না, কিন্তু অসম্মানজনকভাবে মরতে চাই না। এজন্য স্পিকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান গতকাল বলেন, এমপিদের ওই দাবির প্রতি একজন এমপি হিসেবে আমারও পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। সম্প্রতি দেশে যেসব ঘটনা ঘটছে তাতে এমপিদের নিরাপত্তা দেয়াটা জরুরি হয়ে পড়েছে। সরকার ও সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি এখনই গুরুত্ব সহকারে দেখবেন বলে মনে করি। এমজমিন
২৮ মার্চ ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসবি