বুধবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৫, ০২:১৭:৩৫

তাবেলা হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও মোটরসাইকেল উদ্ধার

তাবেলা হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও মোটরসাইকেল উদ্ধার

তানভীর হাসান : তাবেলা সিজাররাজধানীর গুলশানে ইতালি নাগরিক তাবেলা সিজার হত্যায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন তিনজনকে শনাক্তের পর তাদের সূত্র ধরে রাজধানীর পাশের একটি জেলা থেকে গুরুত্বপূর্ণ এ আলামত উদ্ধারের পর শিগগিরই তা ফরেনসিক ও ব্যালেস্টিক পরীক্ষার জন্য সিআইডিতে পাঠানো হবে। তদন্ত তদারক এক কর্মকর্তার দেয়া তথ্যমতে, চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন এখন সময়ের ব্যাপার। কিলিং মিশনে অংশ নেয়া দুজন ভাড়াটে খুনি গোয়েন্দা হেফাজতে রয়েছে। শিগগিরই এ ব্যাপারে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবে বলে তারা আশা করছেন। তবে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা তা তদন্তকারীরা বলতে রাজি হননি। গোয়েন্দা পুলিশের অপর একটি বিশ্বস্ত সূত্রমতে, রাসেল নামে দুইজন ও তামজিদ ওরফে রুবেল নামে অপর এক যুবক কয়েকদিন ধরে ডিবির হাতে আটক রয়েছে। তাদের সূত্র ধরেই অস্ত্র ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে ডিবির কোনো কর্মকর্তা মুখ খুলতে চান না। জানতে চাইলে মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিসি ডিবি মাহাবুবুল আলম প্রতিবেদককে জানান, তাবেলা হত্যায় জড়িতরা গোয়েন্দা জালে রয়েছে। যে কোনো সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলামতও উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে শিগগিরই চাঞ্চল্যকর এই মামলার রহস্যভেদ করা সম্ভব হবে। সব বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার পরই এ বিষয়ে সাংবাদিকদের জানানো হবে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে অস্ট্রেলীয় হাইকমিশনের মাত্র ৫-৬শ গজ দূরে ৯০ নাম্বার সড়কে দুর্বৃত্তের গুলিতে তাবেলা সিজার নামে এক ইতালীয় নাগরিক খুন হন। তিনি নেদারল্যান্ডসভিত্তিক এনজিও আইসিসিওবিডির প্রজেক্ট ম্যানেজার এবং বারিধারায় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সদস্য ছিলেন। এ ঘটনায় তাবেলার কর্মস্থলের পক্ষ থেকে বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি ঢাকা মাহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করছে। পাশাপাশি তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সহায়তা করতে সিআইডি ও ডিবির সমন্বয়ে দুটি পৃথক কমিটি গঠন করা হয়। এ ছাড়া র‌্যাবের পক্ষ থেকেও মামলাটির ছায়াতদন্ত করা হচ্ছে। এ ঘটনার ৫ দিন পর রংপুরের মাহীগঞ্জে আটুলিয়া গ্রামে জাপানি নাগরিক হোসে কোমিওকে একই স্টাইলে গুলি করে হত্যা করা হয়। দুই খুনের পরপরই আইএসের নামে হত্যার দায় স্বীকার করে টুইটারে বার্তা আপলোড করা হয়। তদন্তসংশ্লিষ্ট এক সূত্রে জানা গেছে, তাবেলা হত্যায় জড়িত সন্দেহে রাসেল নামে দুই এবং তামজিদ ওরফে রুবেল নামে একজনকে আটক করে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সম্প্রতি তাদের বাড্ডা এলাকা থেকে আটক করা হয়। যদিও তাদের আটক ও আলামত উদ্ধারের বিষয়ে ডিবির কোনো কর্মকর্তা স্বীকার না করলেও এদের মধ্যে অন্তত দুজন হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল বলে ডিবির এক কর্মকর্তা দাবি করেন। অপরজন মোটরসাইকেলে বসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদের মধ্যে দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতেও রাজি হয়েছে। খুব শিগগির তাদের এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হবে। তাদের দেয়া তথ্যমতে মানিকগঞ্জ জেলা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পালসার মোটরসাইকেল ও একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে। এ পর্যায়ে মামলার গুরুত্বপূর্ণ এ আলামত পরীক্ষা করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তবে মঙ্গলবার পর্যন্ত এ ধরনের কোনো আলামত পরীক্ষার জন্য সিআইডিতে পাঠানো হয়নি ফরেনসিক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ পুলিশ সুপার নাসিমা আক্তার এই প্রতিবেদককে কে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তারা আলামত পরীক্ষার জন্য সিআইডিতে পাঠানোর পর তা নিয়ে কাজ শুরু করা হয়। তবে এখনো পর্যন্ত দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডে কোনো ধরনের আলামত সিআইডিতে পাঠানো হয়নি। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় এর বাইরে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। জানতে চাইলে তদন্ত কমিটিকে সহায়তা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের বাছাই করা দক্ষ ও চৌকস কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠন করা টিমের প্রধান ও সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মো. রেজাউল হায়দার প্রতিবেদককে বলেন, ঢাকায় ইতালীয় নাগরিক হত্যায় এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সিআইডি একাধিক টিম এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে বিভিন্নভাবে ডিবি পুলিশকে সহায়তা করছে। খুনিদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে দ্রুতই এ মামলার রহস্যভেদ করা সম্ভব হবে। ডিবি পুলিশও আশাবাদী। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডে নিষিদ্ধ ঘোষিত কোনো জঙ্গি সংগঠনের জড়িত থাকার প্রমাণ এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে ওই চক্রের নাম এখনই প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে একটি গ্রুপ বিদেশিদের হত্যার টার্গেট করে বলে জানা গেছে। একটি নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে এমন ধারণা থেকে তদন্ত শুরু করা হয়। পাশাপাশি গুলশান ও আশপাশের ভাড়াটে খুনিদের বিষয়েও খোঁজ-খবর নেয়া শুরু করে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া একটি বড় মাপের রাজনৈতিক দলের বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীরাও সন্দেহের তালিকায় ছিল। এর সূত্র ধরে বাড্ডা এলাকার ওই ৩ জনকে শনাক্ত করা হয়। এদের মধ্যে দুজ মোটরসাইকেল ব্যবহার করে এবং তারা একটি রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মী। পাশাপাশি তারা ঘটনার দিন তাবেলা হত্যার আশপাশে ছিল বলে তাদের মোবাইল ফোনের সূত্র থেকে ডিবি নিশ্চিত হয়। এরপর তাদের কঠোর নজরদারির আওতায় আনা হয়। সম্প্রতি এদের একজন হঠাৎ করেই তার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জে যায়। সেখানে একঘণ্টা অবস্থান করেই আবার ঢাকায় ফিরে আসে। পুলিশের ধারণা ওই ব্যক্তি আলামত লুকানোর জন্য মানিকগঞ্জে যায়। এরপর তাদের তিনজনকে আটক করে পৃথক স্থানে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনজনের কথাবার্তার মধ্যে গরমিল পাওয়ায় তাদের দ্বিতীয় দফায় আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পরে তাদের কাছ থেকে তদন্তে সহায়ক বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায় বলে ডিবির এক কর্মকর্তা দাবি করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা দাবি করেন, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র ও মোটরসাইকেল তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। মামলার রহস্যভেদ এখন শুধুই সময়ের ব্যাপার।-যায়যায়দিন ২১ অক্টোবর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে