বুধবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৫, ০৩:০০:১৮

কুনিও হত্যার খবর জানতে যে কৌশল ব্যবহার করেছেন খুনিরা!

কুনিও হত্যার খবর জানতে যে কৌশল ব্যবহার করেছেন খুনিরা!

মাহবুব রহমান : কুনিও হোশি হত্যার আগের দিন রিকশাচালক মোন্নাফ মিয়াকে ভিজিটিং কার্ড দিয়েছিলেন হুমায়ুন কবীর হীরা। বলেছিলেন, পরের দিন কুনিওকে নিয়ে যাওয়ার পথে কোনো সমস্যা হলে তাকে ফোন দিতে। ঠিক পরের দিনই গুলিবিদ্ধ হন কুনিও। মোন্নাফ মিয়া ঘটনাস্থলের পাশের বাড়ির মালিক মাইদুল ইসলাম মুরাদকে দিয়ে হীরাকে ফোন করেন। খুনের খবর পেয়েই ফোন কেটে দেন তিনি। পরে আরও কয়েক দফা ফোন করা হয়। একবার ফোন রিসিভ করে কোনো কথা না বলেই কেটে দেন, পরে আর ধরেননি। এরপর স্থানীয়দের সহযোগিতায় কুনিওকে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। হীরা কী আগেই জানতেন সবকিছু? খুনের খবর পেয়ে তিনি কথা বলেননি কেন? কেনই বা পরে ফোন ধরেননি? রিমান্ডে নিয়ে এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ। দুই দফায় ১৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয় তাকে। তবে এখন পর্যন্ত পুলিশ তার কাছ থেকে কোনো তথ্য পায়নি। এ ছাড়া অন্য কোনোভাবেও খুনের উদ্দেশ্য কিংবা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এখন পর্যন্ত উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। তবে তদন্ত দলের সদস্যরা বলছেন, প্রাথমিক সাক্ষ্য-প্রমাণে কোনো ব্যবসায়িক বিরোধের তথ্য পাওয়া যায়নি। প্রথম দফায় ৫ দিনের রিমান্ড শেষে সোমবার রাত ৮টায় হীরাকে আদালতে হাজির করা হয়। কোতোয়ালি থানার হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সফিউল আলম তা মঞ্জুর করেন। তাকে রংপুর কোতোয়ালি থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ওই মামলায় সন্দেহভাজন আরেক আসামি রাশিদুন্নবী খান বিপ্লব এখন রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে। কুনিও খুনের পর সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়েছিল প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক মোন্নাফ মিয়া এবং হীরাকে ফোনকারী বাড়ির মালিক মাইদুল ইসলাম মুরাদকে। তিন দিন জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ ৬ অক্টোবর তাদের সাক্ষী হিসেবে আদালতে তোলে। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু তালেবের আদালতে তারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এতেই উঠে আসে হীরার মোবাইল নম্বর দেয়ার তথ্য। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত দলের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা প্রতিবেদককে বলেন, আমরা সবদিক মাথায় রেখে তদন্ত করছি। তবে ব্যবসায়িক কোনো বিরোধে যে জাপানের নাগরিক কুনিও হোশি খুন হননি তা তদন্ত দল নিশ্চিত। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য বলছে, খুনের মোটিভ রাজনৈতিক। আর এ জন্য মোটা অঙ্কের বিনিময়ে কিলার গ্রুপ ভাড়া করা হয়। খুনের পর পালিয়ে যেতে সাহায্য করে স্থানীয় তিন নেতা। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, তদন্তে আভাস মিলেছে, হত্যার পরিকল্পনা হয় ঢাকায় রাজনৈতিক এক প্রভাবশালী নেতার বাসায়। ওই নেতা তারেক জিয়াপন্থী। তিনি একসময় আমদানি-রফতারি ব্যবসা করতেন। একসময় জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। পরে জামায়াতের মনোনয়ন নিয়ে বৃহত্তর রংপুরের এক আসনে সংসদ নির্বাচন করেন। তার সঙ্গে হুমায়ুন কবীর হীরার আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, খুনের পর থেকে রংপুরের এক প্রভাবশালী নেতাও গা ঢাকা দিয়েছেন। আত্মগোপনে থাকা জামায়াতের ওই নেতার সঙ্গেও রংপুরের পালিয়ে থাকা নেতার সুসম্পর্ক রয়েছে। তার কাছে বৈধ ও অবৈধ অস্ত্র রয়েছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে। ওই নেতার ক্যাডার বাহিনীসহ তিনি নিজেই কয়েক বছর আগে চারদলীয় জোট সরকার আমলে একজন উপমন্ত্রীর ছত্রচ্ছায়ায় লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসে ডাকাতি এবং নির্বাহী প্রকৌশলীকে অস্ত্রের মুখে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন। পরে অফিসের সব নথিপত্র সরিয়ে তাকে এ বিষয় গোপন রাখার শর্তে হত্যার হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। লালমনিরহাটেও ওই নেতার সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী রয়েছে। পুলিশের কাছে এখন মামলার তদন্তে আরেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কামাল। তিনি হীরার বড় ভাই। তিনি এখন গোয়েন্দা হেফাজতে আছেন বলে তার পারিবার জানায়। এক গোয়েন্দা কর্মকর্তাও তা স্বীকার করেছেন। মামলার তদন্ত র‌্যাব-পুলিশ-গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যৌথভাবে সমন্বয়ভাবে করছে। তদন্ত দলের আশা, কামালের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য খুনের মোটিভ ও কারা জড়িত তা উদ্ধারে সহায়তা করবে। রংপুর পুলিশ সুপার আবদুর রাজ্জাক পিপিএমের কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পত্রিকায় যা লেখা হচ্ছে তার কিছু সূত্র রয়েছে। আমাদের নিজস্ব তদন্তে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে এসবও দেখছি। এরই মধ্যে আমরা অনেক তথ্য-প্রমাণ হাতে পেয়েছি, সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। প্রকৃত খুনিরা যাতে ধরা পড়ে সেটাই আমাদের লক্ষ্য। কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না। বিভিন্নজনকে জিজ্ঞাসাবাদ তদন্তের ধারাবাহিকতা। রংপুর নগরীর মুন্সীপাড়ার বাসা থেকে রিকশায় করে খামারবাড়িতে যাওয়ার পথে ৩ অক্টোবর কাচু আলুটারী গ্রামে খুন হন কুনিও হোশি। প্রত্যক্ষদর্শী মোন্নাফ মিয়া বলেন, কুনিওকে খুব কাছ থেকে গুলি করে অস্ত্রধারীরা। দুটি অস্ত্র ব্যবহার করে ৩টি গুলিতে কিলিং মিশন শেষ করে ঠাণ্ডা মাথায় চলে যায়।-যুগান্তর ২১ অক্টোবর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে