নিউজ ডেস্ক : গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ঢাকা স্ট্রাকচার প্ল্যান চূড়ান্ত করতে সংশ্লিষ্ট সব জনপ্রতিনিধি ও প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত করে সমন্বিতভাবে এক বছরের মধ্যে বাস্তবসম্মত ও যুগোপযোগী ঢাকা স্ট্রাকচার প্ল্যান বা কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে। তিনি বলেন, আগে যারা ড্যাপ (১৯৯৫-২০১৫, ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা) প্রণয়ন করেছেন, তারা আসলে জায়গাটিই দেখেননি। ঘরে বসে গুগলে লাইন টেনে ড্যাপ করা হয়েছে।
যে কারণে ড্যাপে নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হয়েছে। জনগণও এ নিয়ে অনেক হৈচৈ করেছে। তাই সবার মতামতের ভিত্তিতে সমন্বিতভাবে বাস্তবসম্মত ড্যাপ ও স্ট্রাকচার প্ল্যান তৈরি করতে হবে। এ জন্য এক বছর সময় দিতে হবে। রোববার রাজউক মিলনায়তনে ঢাকা স্ট্রাকচার প্ল্যানের খসড়ার (২০১৬-২০৩৫) ওপর দুই দিনব্যাপী জাতীয় সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কোনো সংস্থাকে যেন প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে না হয় সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। কেননা যে কোনো পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত না হলে জনগণের ভোগান্তি বাড়ে। আর সেসব কারণে তা বাস্তবায়ন করাও সম্ভব হয়ে ওঠে না। এসব বিষয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। ঢাকাকে বাসযোগ্য, কার্যকর ও দুর্যোগ প্রতিরোধক্ষম মহানগর হিসেবে গড়ে তোলার জন্যই দীর্ঘমেয়াদি এ পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। রাজউক যেসব আবাসিক এলাকা গড়ে তোলে সেখানে পর্যাপ্ত জলাধার ও উন্মুক্ত স্থান রাখা হয়। পূর্বাচলে প্রায় ৪৮ কিলোমিটার লেক রাখা হয়েছে। পানির স্বাভাবিক প্রবাহ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
সেমিনারে রাজউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী জি এম জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরন। সেমিনারে 'খসড়া ঢাকা স্ট্রাকচার প্ল্যান'-এর সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম। বিকাল ৩টায় সেমিনারের দ্বিতীয় সেশনে নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলামের পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট সংস্থার টেকনিক্যাল এঙ্পার্টরা স্ট্রাকচার প্ল্যানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
এ পর্যায়ের সেমিনারে বিভিন্ন আবাসন ও ডেভেলপার কোম্পানির প্রতিনিধিরাও অংশ নিয়ে প্ল্যানের ব্যাপারে নানা যৌক্তিক পরামর্শ তুলে ধরেন। তাদের প্রস্তাবগুলো চূড়ান্ত প্ল্যানে নিয়ে আসার ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্তদের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, '২০১০ সালে ত্রুটিপূর্ণ ড্যাপ নিয়ে জনতার আন্দোলন হয়েছে তা আমরা সবাই দেখেছি। মানুষ যখন স্থাপনা করে বসে আছে তখন আমরা গেলাম 'ড্যাপ' নিয়ে। ড্যাপে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান সরানোর কথা বলা হয়েছে। তাই আগের ড্যাপে কী ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল তা বের করে সমাধান করুন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ইতিপূর্বে নগরী নিয়ে যেসব পরিকল্পনা করা হয়েছে, এর মধ্যে অনেক ভুল-ভ্রান্তি লক্ষ করা যাচ্ছে। এ নিয়ে সাধারণ নাগরিকরা বিক্ষোভ পর্যন্ত করেছেন। পরিকল্পনাবিদ এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এখন বলছেন, এটা করা ভুল ছিল। আমি রাজউকের কাছে বিনীত অনুরোধ জানাব, এমন কোনো নগরপরিকল্পনা করবেন না যাতে করে আবারও তা ভুল প্রমাণিত হয়।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, আমরা কি শুধু পরিকল্পনা করব; নাকি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করব। একই সঙ্গে তিনি নারায়ণগঞ্জের পরিকল্পিত উন্নয়নে সরকার ও রাজউকের ইতিবাচক কার্যক্রম প্রত্যাশা করেন। তিনি শীতলক্ষ্যার পাড়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণ ও বনায়ন করার ওপর জোর দেন। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরন বলেন, ড্যাপ ঘরে বসে তৈরি করা হয়েছিল। এ ব্যাপারে আমরা বেশ কয়েকবার রাজউককে চিঠি দিয়েছি। দুঃখজনক হলো, এর কোনো সদুত্তর পাইনি।-বিডিপ্রতিদিন
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে