সালমান তারেক শাকিল : দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় চলমান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তৃণমূলে কমিটি গঠনের জন্য কাউন্সিল করা ‘উচিত’ বলে মনে করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত তার কোনও ‘জোরদার’ নির্দেশনা নেই। তার মতে, বিগত দিনে সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী ক্ষতিগ্রস্ত নেতাদের প্রাধান্য দিয়ে আগে তৃণমূল কমিটি গঠন করা উচিত। তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠন গোছাতে এখন পর্যন্ত ৩০ সেপ্টেম্বরকেই প্রাথমিক ‘ডেটলাইন’ ধরার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। রোববার রাতে দীর্ঘ দেড় ঘণ্টার বেশি সময় বিএনপির সিনিয়র তিন ডজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে বৈঠককালে এমন মনোভাবই দেখিয়েছেন দলের চেয়ারপারসন। বৈঠক শেষে দলটির হাফডজন প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে আলাপকালে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, রাজধানীর গুলশান-২-এ খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে দলের সিনিয়র-মধ্যম সারির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে কয়েকজন সিনিয়র নেতা সাংগঠনিক বিষয়ে খালেদা জিয়ার দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ জানতে চান। এর মধ্যে তৃণমূল পুনর্গঠনে ‘৩০ সেপ্টেম্বর’কে ডেটলাইন না করে সময় আরও পেছানো যায় কি না—এ নিয়েও দলীয় প্রধানের কাছে জানতে চান শীর্ষনেতারা। এ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া জানান, আগে এই তারিখের মধ্যে কাজ গোছানো হোক সর্বোচ্চ চেষ্টায়। পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয় প্রয়োজন হলে পরে জানানো হবে।
এর আগে প্রতিবেদককে সঙ্গে আলাপকালে পুনর্গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা যুগ্ম-মহাসচিব মো. শাজাহান জানিয়েছিলেন, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তৃণমূল গোছানো কঠিন হবে। সে ক্ষেত্রে আরও একটি সময় বেঁধে দিতে হতে পারে। যদিও বিএনপি বরাবরই অভিযোগ করে আসছে, সরকারের বাধায় তারা কাউন্সিল করতে পারছে না।
বৈঠক সূত্র জানায়, পুরো দেড় ঘণ্টার বৈঠকে বিএনপির সাংগঠনিক বিষয়ই আলোচ্য ছিল। এছাড়া দ্রুত সংগঠন গুছিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক সক্রিয় কার্যক্রমে কামব্যাক করার বিষয়টিও উল্লেখযোগ্য ছিল। তবে সাংগঠনিক আলোচনায় খালেদা জিয়া কাউন্সিল করা উচিত বলে মনে করলেও এতে তিনি জোর দেননি। যদিও বৈঠককালীন খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের বাইরে বিএনপির সাতক্ষীরার নেতাকর্মীরা ‘পকেট কমিটি মানি না’ বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন। পাশাপাশি নেতাকর্মীদের উপস্থিতিও অন্যান্য দিনের তুলনায় একটু বেশি ছিল।
দল গোছানোর বিষয়ে পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার শুরু থেকে যুক্ত থাকা অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন, বিএনপি একক নেতাকেন্দ্রিক দল নয়। এটি একটি জনগণভিত্তিক রাজনৈতিক দল। ফলে, কমিটি করার জন্য দলকে খুলে দিতে হবে সব দরজা। দল গোছানোর পদ্ধতি কী হবে—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, অবশ্যই গণতান্ত্রিক দলের নিয়ম অনুযায়ী। কাউন্সিল হবে। তবে তৃণমূল থেকে আগে।
এর আগে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনায় দলীয় নেতাদের ‘পকেট কমিটি করে দল ধ্বংস না করার’ আহ্বান জানিয়েছিলেন খালেদা জিয়া।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, খোশগল্প হয়েছে। সাংগঠনিক আলাপ-আলোচনা হয়েছে।
জানতে চাইলে বৈঠকে অংশ নেওয়া স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ প্রতিবেদককে কাছে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি এ ব্যাপারে নজরুল ইসলাম খানের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
তবে দেড় ঘণ্টার বৈঠক শেষে নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের জানান, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর লন্ডন সফরে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া। ওই দিন রাতের ফ্লাইটে তিনি লন্ডনের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন। খালেদা জিয়া সেখানে ঈদুল আজহা উদযাপন করে আসবেন বলেও জানান নজরুল ইসলাম খান।
রবিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে শুরু হওয়া সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিদেশ থাকাকালীন কোনও নেতাকে দলের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে কোনও আলোচনা হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নে জমির উদ্দিন সরকার জানান, এ বিষয়ে কোনও আলোচনা হয়নি।
তবে খালেদা জিয়ার একজন উপদেষ্টার মতে, সাধারণত এমন দায়িত্ব দেওয়ার প্রয়োজন এখন পড়ে না। প্রযুক্তির কল্যাণে এখন বিশ্বের যেকোনও দেশ থেকে মনিটরিং ও যোগাযোগ করা সম্ভব বলে এই নেতা মনে করেন। তবে এই প্রতিবেদককে তিনি এ-ও জানান, এটা বৈঠকে আলোচনা হয়নি। বৈঠক শেষে একান্ত বৈঠকে হয়তো কাউকে দায়িত্ব দিতে পারেন ম্যাডাম।
উল্লেখ্য, গত রমজানে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, যারা দলে সক্রিয় না থাকতে চান, তারা যেন সরে পড়েন, পদত্যাগ করেন। রবিবার রাতের বৈঠক সূত্র দাবি করে, এই বৈঠকে এ বিষয়ে কোনও আলোচনা করেননি খালেদা জিয়া।
প্রসঙ্গত, বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, তিন বছর পর পর জাতীয় কাউন্সিল করতে হবে। ২০০৯ সালের জুনে একসঙ্গে ৭২টি সাংগঠনিক জেলা কমিটি ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছিল। ওই বছরের ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল।-বাংলা ট্রিবিউন
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে