বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৫, ১২:৫৯:৫৮

খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় বিএনপি, তৃণমূলে উত্তাপ

খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় বিএনপি, তৃণমূলে উত্তাপ

সালমান তারেক শাকিল : নতুন নিয়মে অনুষ্ঠিতব্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিরোধিতা করলেও ভেতরে-ভেতরে নেতাকর্মীদের মধ্যে অংশগ্রহণের আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। তবে কেন্দ্রীয়ভাবে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত জানায়নি দলটি। এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বর্তমানে লন্ডন সফররত দলের এ শীর্ষনেতা দেশে ফিরলেই আনুষ্ঠানিক অবস্থান ব্যক্ত করবে বিএনপি। নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, স্থানীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে উৎসব পরিস্থিতি তৈরি হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে হঠাৎ করেই দলীয় ব্যানারে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সরকারি সিদ্ধান্তে তৃণমূল পর্যায়ে এক ধরনের সচলতা তৈরি হলেও এর কারণ খুঁজতে মরিয়া বিএনপি। এর আগে ১২ অক্টোবর সরকারি ঘোষণার পর থেকে এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে বিএনপি। দলটির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন একাধিকবার বলেছেন, এ সিদ্ধান্ত দূরভিসন্ধিমূলক। রাজনৈতিক কৌশল। নেতাকর্মীরা জানান, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও সরকারের এ সিদ্ধান্তে দলে সন্দেহের মাত্রাই বেশি। বিএনপির বিভাগীয় যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত জীবন বলেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেবেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে এই মুহূর্তে নির্বাচনের ঘোষণায় সন্দেহ আছে। আমাদের দল যখন পরবর্তী আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন এ সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক কৌশল বলতে হবে। বিএনপির সহমর্মী বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের মতে, বিএনপির পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতেই স্থানীয় নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এতে বিএনপির দল গোছানোর কার্যক্রম অনেকটা ব্যহত করা যাবে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই ভিসি এও বলেন, ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার সরকারি উদ্দেশ্য সফল হবে না। বর্তমান নির্বাচন কমিশন দিয়ে কোনও নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে না বলেও জানান তিনি। বিএনপির সূত্রমতে, স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন খালেদা জিয়া। লন্ডন সফররত খালেদা দেশে ফিরলেই স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করবেন। এমাজউদ্দীন বলেন, ম্যাডাম ফেরার পর স্থায়ী কমিটির বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হবে। জানা গেছে, স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হলেও ভেতরে-ভেতরে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দলের অবস্থান জানতে ব্যক্তিগত যোগাযোগ শুরু করেছেন। স্থানীয় পর্যায়ে অনেকে কাজও শুরু করেছেন বলে কয়েকটি সূত্র জানায়। বিএনপির একজন বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক প্রতিবেদককে জানান, যেকোনও নির্বাচনই রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কাছে আগ্রহের বিষয়। স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে আগ্রহ বেশি থাকে। তবে দলীয় ঘোষণা না থাকায় এখনও আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়নি। তবে দল গোছানোর যে কার্যক্রম ক্রিয়াশীল আছে, স্থানীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তা আরও গতি পাবে। বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা মনে করেন, দল গোছানোর কার্যক্রম ব্যাহত হবে বলে আমি মনে করি না। বরং ডিসেম্বর নাগাদ যদি পৌরসভা নির্বাচন হয়, মার্চ-এপ্রিল নাগাদ ইউনিয়ন পর্যায়ে নির্বাচন হবে। এতে বরং দলের আরও লাভ হবে। তবে এই নেতার মনেও আশঙ্কা- স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করার মানে হল রাজনৈতিক বিরোধ ঘরে-ঘরে পৌঁছে দেওয়া। জানা গেছে, দলীয়ভাবে নির্বাচন হওয়ায় ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর প্রতি নজর রাখতে হবে বিএনপির। এমনকি নিবন্ধন স্থগিত থাকা জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরাও বিএনপির প্রতীক ব্যবহার করতে চাইবে। এক্ষেত্রে জামায়াত প্রভাবিত ও শরিক প্রভাবিত এলাকাগুলোতে বিএনপির প্রার্থীকে ছাড় দিতেই হবে। আরও জানা যায়, এ বছর ডিসেম্বরে দেশের ৩২৪টি পৌরসভার মধ্যে ২৪৫টি পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর আগামী বছর মার্চ অনুষ্ঠিত হবে ৪ হাজার ৫৫৫টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। তবে বিএনপির একটি সূত্র দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় নেতারাও এখন নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে আসন্ন পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির নির্বাহী কমিটির এক সদস্য দাবি করেন, ইতোমধ্যেই নিজ নিজ এলাকার পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী ঠিক করতে কেন্দ্র থেকে জেলা নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সে মোতাবেক কাজ চলছে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলেও বিএনপি সে নির্বাচনে অংশ নেবে। এর আগে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সারাদেশের ৪৮৭টি উপজেলার নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। উপজেলা নির্বাচনে কিছু কিছু এলাকায় দলের ভাল প্রার্থী না থাকায় ২০ দলীয় জোটের শরিক দল থেকে প্রার্থী করা হয়। দল নাজুক অবস্থায় থাকার পরও ওই নির্বাচনে অনেক উপজেলায় বিজয়ী হয় বিএনপি প্রার্থীরা। আসন্ন পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের হওয়ায় এবার আরও ভাল ফল আশা করছেন দলের নেতাকর্মীরা। তবে জনপ্রতিনিধিদের গ্রেফতার করায় কিছুটা শঙ্কায় রয়েছে বিএনপি। ২০১৩ সালে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহণে পাঁচ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে অংশ নিয়ে সবকটায় বিজয়ী হয় বিএনপি। এ বছর ২৮ এপ্রিল ঢাকার ২টি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরাজিত হয় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা। যদিও তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারচুপি, প্রশাসনের হস্থক্ষেপসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তাদের। ফলশ্রুতিতে দুপুরের দিকে নির্বাচন বর্জন করে দলটি। জানতে চাইলে মেহেরপুর জেলা বিএনপির নেতা আমজাদ হোসেন বলেন, আমরা ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শেষ করেছি। সেই সঙ্গে ইউনিয়ন ও পৌরসভা নির্বাচনে কারা প্রার্থী হবেন তাও চিন্তাভাবনা করে রেখেছি। নির্বাচনের সময় হলে দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনা মেনে প্রার্থী চূড়ান্ত করব। বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির নেতা মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ বলেন, আমরা এখন ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি পুনর্গঠন করছি। এরপর অন্যান্য কমিটি পুনর্গঠন শেষে জেলা কমিটি করা হবে। পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রস্তুতিও রয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপারেও খোঁজখবর রাখছি।-বাংলা ট্রিবিউন ২২ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে