বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৫, ০২:৩৫:৩১

চ্যালেঞ্জে প্রস্তুত বিএনপি, খালেদা জিয়া ফিরলে সিদ্ধান্ত

চ্যালেঞ্জে প্রস্তুত বিএনপি, খালেদা জিয়া ফিরলে সিদ্ধান্ত

শফিক সাফি : স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ডামাডোল শুরু হয়ে গেছে দেশে। ডিসেম্বরে পৌর, তারপর ইউপি নির্বাচন। আর এবারই প্রথম এসব নির্বাচন হবে দলীয়ভাবে। এ নির্বাচনের ফলাফল বার্তা দেবে জাতীয় নির্বাচনের। তাই নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে দলগুলোর মনোযোগ এখন সেদিকেই। আওয়ামী লীগের বিশ্বাস, এর মাধ্যমে তাদের তৃণমূল শক্তিমান হবে এবং তারা কোমর বেঁধেই নামছে মাঠে। একই চিন্তা থেকে বিএনপিও প্রস্তুতি নিচ্ছে ভেতরে ভেতরে। আর জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল বলে হয় তারা জোটগত, নয়তো স্বতন্ত্রভাবে অংশ নেওয়ার কথা ভাবছে। বুধবার দুপুর আড়াইটায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসেছিলেন আজিজুল ইসলাম। তিনি মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান থানার বিএনপি নেতা। জানালেন, চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবেন। কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত কী, তা-ই জানতে পারছেন না। এখানে এসেছেন দলের মনোভাব বুঝতে। এভাবে সারা দেশ থেকে প্রতিদিন আজিজুল ইসলামের মতো কয়েক শ নেতা আসেন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলের অবস্থান জানতে। কিন্তু কেউ কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে পারছেন না। দায়িত্বশীল সবার একই বক্তব্য, দলীয় চেয়ারপারসন দেশে ফিরলে সিদ্ধান্ত। এবার স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীকের ভিত্তিতে। নতুন এ নিয়ম ও নির্বাচনের বিরোধিতা করে বক্তব্য দিয়েছেন দলটির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন। তাঁর মতে, এ সিদ্ধান্ত দুরভিসন্ধিমূলক; রাজনৈতিক কৌশল। তবে বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভেতরে ভেতরে তাঁরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে লন্ডন সফররত দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশে ফেরার পর। ২০ দলীয় জোটের ব্যানারে, নাকি নিজ নিজ দলের প্রতীকে অংশ নেওয়া হবে তা-ও আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত হবে। কোনো কারণে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে স্বতন্ত্রভাবেই অংশ নেবেন তৃণমূল নেতারা, সে রকম আভাসও মিলছে নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনায়। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসা নেতাদের ভাষ্য, এমনিতেই আন্দোলনের কারণে দলের তৃণমূল তছনছ, তার ওপর এবার বিনা চ্যালেঞ্জে মাঠ ছেড়ে দিলে যতটুকু টিকে আছেন তাঁরা, তা-ও থাকবে না। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে কি না জানতে চাইলে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান খান দুদু গতকাল প্রতিবেদককে বলেন, 'বিএনপি বরাবরই নির্বাচনমুখী দল। আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া যায়।' বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া দেশে ফেরার পর স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকবেন। সেখানে এ বিষয়ে আলোচনা করবেন। পরে ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনার পর নির্বাচনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দলটির স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে স্থানীয় পর্যায়ের যেকোনো নির্বাচন নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীরা বেশি আগ্রহী, যার প্রমাণ উপজেলা নির্বাচন। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। দল নাজুক অবস্থায় থাকার পরও ওই নির্বাচনে অনেক উপজেলায় বিজয়ী হন বিএনপির প্রার্থীরা। তাই বিএনপি অংশ না নিলেও স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা নিজ উদ্যোগে অংশ নেবেন। স্বতন্ত্রভাবে অংশ নিলে তাঁদের তো কেউ বাধা দিতে পারবে না। বিএনপির একজন সহদপ্তর সম্পাদক এই প্রতিবেদককে বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের নিজ নিজ এলাকায় পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে। তাঁরা জেলা নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছেন। কাজ চলছে ভেতরে ভেতরে, অনানুষ্ঠানিকভাবে। দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও বিএনপি যাতে গুছিয়ে উঠতে গিয়ে পিছিয়ে না পড়ে সে জন্য আগাম এ প্রস্তুতি। আবার বিএনপির অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থীরা লড়বেন। এতে দলীয় নেতারা স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি হবেন। ফলে দল সাংগঠনিকভাবে ভিত্তি পাবে। দলটির এক নেতা বলেন, 'আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি চলতি বছরের শেষ নাগাদ ৩২৪টি পৌরসভার মধ্যে ২৪৫টি আর আগামী বছর মার্চে চার হাজার ৫৫৫টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন করতে চায় সরকার। এ নির্বাচনে বিএনপির মতো জামায়াতে ইসলামী এবং জোটের অন্য শরিকরাও অংশ নেবে। এ ক্ষেত্রে যদি জোটগতভাবে বিএনপি নির্বাচনে যায় সে ক্ষেত্রে হিসাব হবে এক ধরনের, আর দলগতভাবে গেলে অন্য রকম। দলগতভাবে গেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আর জোটগতভাবে গেলে জামায়াত, এলডিপি, কল্যাণ পার্টি, জাতীয় পার্টিসহ কয়েকটি দলের প্রভাবিত এলাকাগুলোতে কিছুটা ছাড় দেবে বিএনপি। জানতে চাইলে ড. আসাদুজ্জামান রিপন প্রতিবেদককে বলেন, 'স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করার বিষয়টি মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গেজেট নোটিফিকেশন না হওয়া পর্যন্ত এর কোনো কার্যকারিতা নেই। দলের মুখপাত্র হয়ে এ বিষয়ে এখনই মন্তব্য করা সঠিক হবে না। আগে গেজেট প্রকাশিত হোক, তারপর বিস্তারিত জানাব।' বিএনপি স্থানীয় নির্বাচনে যাচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে দলের যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, "সরকার যেভাবে আমাদের দলের নেতাকর্মীদের মামলা-হামলা করে নাজেহাল করছে, তাতে দল পুনর্গঠন করতে কষ্ট হচ্ছে। এর পরও আমরা আশাবাদী নভেম্বরের মধ্যে পুনর্গঠনের কাজ প্রায় শেষে হবে। আর স্থানীয় নির্বাচন এখনো অনেক দেরি। আমরা এখন 'কাজ কম আওয়াজ বেশি' এই স্লোগানে নয়, বরং 'আওয়াজ কম কাজ বেশি' স্লোগানে এগোচ্ছি।-কালেরকণ্ঠ ২২ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে