বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৫, ০৩:২৮:১৪

যে কারণে আন্দোলন নিয়ে ভাবছে না বিএনপি

যে কারণে আন্দোলন নিয়ে ভাবছে না বিএনপি

আরিফ সাওন : আপাতত কঠোর কোনো আন্দোলন-সংগ্রাম নিয়ে ভাবছে না বিএনপি। এখন দল পুনর্গঠনই তাদের প্রধান লক্ষ্য। আগামী ছয় মাসের মধ্যে দল পুনর্গঠনের চিন্তাভাবনা চলছে দলটিতে। বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ প্রতিবেদককে বলেন, বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করা খুবই জরুরি। সে লক্ষ্যে শিগগিরই স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠনের পাশাপাশি অঙ্গসংগঠনসহ সব পর্যায়ে পুনর্গঠন করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিএনপির এক দায়িত্বশীল নেতা জানান, জাতীয় স্থায়ী কমিটি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, মহানগর, জেলা, পৌর, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে মূল দলসহ অঙ্গসংগঠনগুলো পুনর্গঠন করা হবে। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এই প্রতিবেদককে বলেন, যেহেতু কমিটিগুলোর মেয়াদ অনেকদিন হয়েছে, সেক্ষেত্রে পুনর্গঠন করা দরকার। মূল দলসহ যে অঙ্গসংগঠনগুলোর পুনর্গঠন প্রয়োজন, সেগুলো পুনর্গঠন করা হবে। সে প্রক্রিয়াই চলছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নিজেই এ ব্যাপারে কাজ করছেন। বিএনপি সূত্র জানায়, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর দল পুনর্গঠন বিষয়ে পুরোপুরি কাজ শুরু করা হবে। তবে তিনি লন্ডনে যাওয়ার আগে থেকেই মহানগর ও জেলা পর্যায়ে দল পুনর্গঠন কাজ শুরু করা হয়েছে। যাতে কোথাও পকেট কমিটি না করা হয়, সে ব্যাপারে লন্ডন যাওয়ার আগে তিনি সিনিয়র নেতাদের দেখভালের জন্য কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। তারপরও বিভিন্ন জেলা থেকে পকেট কমিটি করার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। দলের একজন সহ-দফতর সম্পাদক জানান, দফতরে বেশিরভাগ জেলা থেকে অভিযোগ এসেছে। তাদের লিখিত অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করে, সে হিসেবে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। যেহেতু বিএনপি একটি বড় দল, এ ধরনের সমস্যা থাকবে। যত সমস্যাই থাকুক না কেন, আমরা আগামী ছয় মাসের মধ্যে দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করব। দল পুনর্গঠনের ব্যাপারে আমরা ছয় মাসের বেশি সময় নিতে চাই না। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান প্রতিবেদককে বলেন, দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চলছে। এতে হয়তো ছয় মাসের বেশি সময় লাগবে না। সূত্রে জানা যায়, বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে ‘থিংক ট্যাংক’ গঠন করার পরিকল্পনা রয়েছে। থিংক ট্যাংকের সদস্যরা দলের সফলতা-ব্যর্থতা, সব বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করবেন। রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা করে বিএনপি চেয়ারপারসনকে পরামর্শ দেবেন। তবে থিংক ট্যাংকের সদস্যরা কোনো ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন না। সিদ্ধান্ত দেবেন চেয়ারপারসন। সূত্রে জানা যায়, ৯ আগস্ট বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মহানগর ও জেলার সব পর্যায়ে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। চিঠি পাওয়ার পর থেকেই তৃণমূল থেকে বলা হয়েছিল, এত কম সময়ে পুনর্গঠন সম্ভব নয়। এ কারণে বেশিরভাগ জেলা থেকে লিখিত ও মৌখিকভাবে সময় চেয়ে কেন্দ্রে আবেদন করা হয়। এ প্রসঙ্গে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মো. শাহজাহান গণমাধ্যমকে বলেছেন, কমিটি গঠন করার নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানোর পর প্রায় সব ইউনিট কাজ শুরু করেছে। কাজও অনেক এগিয়েছে। তবে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ায় তা নির্ধারিত সময়ে শেষ করা সম্ভব হয়নি। তবে যারা সময় বাড়ানোর আবেদন করেছেন তাদের সময় বাড়িয়ে দেওয়া হবে। কেন্দ্রের নির্দেশনার পরও যারা কাজ শুরু করেননি, চেয়ারপারসন দেশে ফিরেই তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবেন। বিএনপির এক দায়িত্বশীল নেতা জানান, সর্বশেষ ক্ষমতা ছাড়ার পর বিএনপি আন্দোলনে কোনো সফলতা পায়নি। এজন্য সাংগঠনিক দুর্বলতাই দায়ী। তাই দলকে ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রথমে জেলা ও মহানগর কমিটি গঠনের পরিকল্পনা করা হয়। ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মহানগর ও জেলা কমিটি পুনর্গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা আগে থেকেই ধারণা করেছিলেন এ সময়ের মধ্যে মহানগর ও জেলা কমিটি পুনর্গঠন করা সম্ভব নয়। এজন্য নভেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা ধরে রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যদি নভেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হতো তাহলে মহানগর ও জেলা পুনর্গঠনে আরও দুই মাস দেরি হতো। তাই দুই মাস হাতে রাখা হয়েছে। কারণ বিভিন্ন জেলায় বিএনপির ঘরোয়া কোন্দল রয়েছে। এদের সবাইকে সমন্বয় করে দল গোছাতে কিছুটা সময় লাগবে। জেলা ও মহানগর কমিটি পুনর্গঠনের পর আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হতে পারে। সবমিলিয়ে দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া মার্চ মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। লন্ডন থেকে বিএনপির এক সিনিয়র নেতা জানান, ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনায় খালেদা জিয়া দল পুনর্গঠনের বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তিনি আগামী মাসে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে আসতে পারেন। দেশে ফিরেই তিনি নিজে দল পুনর্গঠনে হাত দেবেন। ছয় মাসের মধ্যে বিএনপির সব নেতাকর্মীর সমন্বয়ে দলকে শক্তিশালী করে তুলবেন। দলকে শক্তিশালী করতে যা যা করণীয় দেশে ফিরে চেয়ারপারসন তা-ই করবেন। একটি সূত্র জানায়, সরকার সহসা বিএনপিকে সংগঠিত হতে দেবে না। তাই তারা পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করছে। বেশিরভাগ জেলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের দল পুনর্গঠন কাজে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে কাউন্সিল ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় দলীয় নেতাকর্মীদের নতুন করে ধরপাকড় শুরু হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর নিয়ে কলামিস্ট কাজী সিরাজ একটি সংবাদমাধ্যমে লিখেছেন, তাঁর বিলেত সফরের বিবিধ উদ্দেশ্যের মধ্যে চিকিৎসা ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদ উদ্যাপন ছিল একটি। আলোচনা হচ্ছে তাঁর সফরের বাকি দুই উদ্দেশ্য নিয়ে। এর একটি হচ্ছে দল পুনর্গঠন নিয়ে পুত্র তারেক রহমানের সঙ্গে শলাপরামর্শ এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে ভারতের বিজেপি সরকারের সঙ্গে একটা ভালো বোঝাপড়ার ক্ষেত্র তৈরি করা। একটি সূত্র জানায়, দল পুনর্গঠন বিষয়টি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দেখভাল করবেন। তাঁরা যাকে যেখানে যোগ্য মনে করবেন সেখানেই দায়িত্ব দেবেন। সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় কাউন্সিলে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব থেকে মির্জা ফখরুল ইসলামকে ‘পূর্ণকালীন মহাসচিব’ করা হতে পারে। যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহানকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। স্থায়ী কমিটিতে আসতে পারে পরিবর্তন। ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, সাদেক হোসেন খোকা ও আবদুল্লাহ আল নোমান আগামীতে স্থায়ী কমিটিতে স্থান পেতে পারেন। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ দুটি কমিটি গঠন করা হতে পারে। দক্ষিণে দলের কেন্দ্রীয় অর্থবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সদস্য সচিব আবদুস সালাম এবং বর্তমান সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। এছাড়া উত্তরে আহ্বায়ক মহানগর বিএনপি নেতা এমএ কাইয়ুম ও আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ারকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। অঙ্গসংগঠনেও আসতে পারে পরিবর্তন। যুবদলের নেতৃত্বে আসতে পারেন সানাউল হক নীরু, সাবেক ছাত্রনেতা কামরুজ্জামান রতন ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল। স্বেচ্ছাসেবক দলে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারি হেলাল, সফিউল বারি বাবু। তবে যুবদলে আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলকে রাখা সম্ভব না হলে তাকে স্বেচ্ছাসেবক দলে গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হতে পারে। জাতীয়তাবাদী মহিলা দলে সভাপতি পদে সৈয়দা নার্গিস আলী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রী ও সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান আফরোজা আব্বাস ও মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রীতা, কৃষক দলে সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান দুদুকে সভাপতি করে নতুন কমিটি দেওয়া হতে পারে। জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা জাসাসের সাবেক সভাপতি রেজাবুদ্দৌলা চৌধুরী ও আসিফ আকবরের নাম শোনা যাচ্ছে। মৎস্যজীবী দলে প্রবীণ নেতা আলহাজ রফিকুল ইসলাম মাহতাব ও জাসাস মহানগর দক্ষিণের সভাপতি জাহাঙ্গীর শিকদারের নাম শোনা যাচ্ছে। তাঁতী দল ও ওলামা দলও পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় রয়েছে।-ভোরের পাতা ২২ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে