গোলাম রাব্বানী : একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ছয় সিটি করপোরেশনে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে আগামী বছর দুই ধাপে এই ছয় সিটিতে নির্বাচন করার চিন্তা করা হচ্ছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর বা আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে একই দিনে রংপুর ও গাজীপুর সিটি নির্বাচন করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে।
এরপর মার্চ-এপ্রিলের দিকে বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট সিটির নির্বাচন করার কথা ভাবা হচ্ছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার তালিকা প্রস্তুতসহ নির্বাচনী মালামাল সংগ্রহের জন্য প্রাথমিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এমনকি ইসি সচিবালয় একটি সংক্ষিপ্ত কর্মপরিধিও প্রস্তুত করছে।
ইসি সচিবালয় সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের আগস্টের মধ্যে ছয় সিটি নির্বাচন শেষ করার পরিকল্পনা করেছে ইসি। এক্ষেত্রে ইসি সচিবালয় তিনটি প্রস্তাবনা দিতে চাইছে নির্বাচন কমিশনকে। ১. এককভাবে রংপুর সিটিতে ভোটগ্রহণ শেষ করে অন্য সিটিতে ভোট করা, ২. আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে রংপুর ও গাজীপুর সিটিতে একসঙ্গে ভোট করা ও ৩. বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেটে একই দিনে ভোটগ্রহণ করা।
২০১৮ সালের শেষ বা ২০১৯ সালের শুরুতে একাদশ সংসদ নির্বাচন থাকায় ইসি সচিবালয় এমন প্রস্তাবনা দিতে যাচ্ছে। এ ছাড়া আগামী বছরের ভোটার তালিকা হালানাগাদও করতে হবে ইসিকে। তাই একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটার হালনাগাদ করেই এসব সিটি করপোরেশন নির্বাচন শেষ করতে চায় ইসি সচিবালয়। ইতিমধ্যে ইসি সচিবালয় এসব নির্বাচনের জন্য একটি প্রাথমিক কার্যপরিধির খসড়া তৈরি করেছে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ গতকাল বলেন, এর আগে যেহেতু চার সিটিতে একসঙ্গে ভোট হয়েছে। তার সময়সীমাও একই সঙ্গে শেষ হবে। আর রংপুর সিটিতে এ বছরের শেষে বা শুরুতে ভোট করতে হবে।
তবে ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসি চাইছে দুই ধাপে ছয় সিটিতে ভোট করতে। তাই রংপুর-গাজীপুর একদিনে এবং বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট সিটিতে একই দিনে ভোটগ্রহণ করতে। এককভাবে রংপুর সিটিতে ভোট করতে হলে চলতি বছরের শেষে বা জানুয়ারির মাঝামাঝি তফসিল দিতে হবে। আর গাজীপুরের সঙ্গে রংপুরের ভোট করতে হলে মেয়াদের শেষ পর্যায়ে ভোট করতে হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সংসদ নির্বাচনের আগে এই ছয় সিটি নির্বাচনে বিএনপিসহ অন্যান্য দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা ও সবার আস্থা অর্জনে পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে নতুন ইসিকে। তাই এই ছয় সিটি নির্বাচন নিয়েও নতুন ইসিকে দীর্ঘমেয়াদি কাজ করতে হবে। যাতে করে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে কোনোভাবেই এসব নির্বাচন বিতর্কিত না হয়।
নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লার পরে এই ছয় সিটিতে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হবে। নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলেও কুমিল্লায় পরাজিত হয়েছে ক্ষমতাসীন দল। সেই হিসেবে আগামী ছয় সিটি নির্বাচন আওয়ামী লীগ-বিএনপির জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের মাপকাঠি হবে বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। তাই প্রধান দুই দলের স্থানীয় নেতারা নিজ নিজ সিটিতে ভোটের প্রস্তুতি শুরু করেছে।
ছয় সিটি নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমরা এসব সিটির বিভিন্ন পরিসংখ্যান সংগ্রহ করতে ইসি সচিবালয়কে বলেছি। তারা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে। ইসির কাছে আনুষ্ঠানিতভাবে এসব তথ্য উপস্থাপন করলে কবে নির্বাচন হচ্ছে তা বলা যাবে। তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচনী রোডম্যাপে এই ছয় সিটিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
ইসি সচিবালয় জানিয়েছে, রংপুর সিটি নির্বাচন করতে হবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে। আর পাঁচ সিটি (খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী , সিলেট ও গাজীপুর করতে হবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্টের মধ্যে। তবে এর আগে চার সিটি (খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট) মেয়রের দায়িত্বভার গ্রহণ নিয়ে নানা জটিলতা হওয়ায় নির্বাচনের সময়সীমা কিছুটা পরিবর্তনও হতে পারে।
ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপযোগী হয় মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাস পূর্বে। আর মেয়াদ হচ্ছে সিটির প্রথম সভা হতে পরবর্তী পাঁচ বছর। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিধিমালা অনুযায়ী মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।
ইসির কর্মকর্তারা বলেন, আগামী ২০১৮ সালের শেষ বা ২০১৯ সালের শুরুতে যেহেতু একাদশ সংসদ নির্বাচন রয়েছে। তাই আগামী বছরের শুরুতে এসব সিটি নির্বাচন শেষ করতে নির্বাচন কমিশনকে পরামর্শ দিতে চাই ইসি সচিবালয়। যাতে সিটি নির্বাচন শেষ করেই পুরোপুরিভাবে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া যায়। এ জন্য বর্তমান ইসির আগামী ২২ মাসের নির্বাচনী রোডম্যাপে সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোকেও অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, নতুন কমিশনের দায়িত্ব নেওয়ার পরই তফসিল দেয় কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের। এরপরের নির্বাচনের মধ্যে রয়েছে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এ সিটি করপোরেশনে সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বরে। এরপর একসঙ্গে নির্বাচন রয়েছে বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে।
২০১৩ সালের ১৫ জুন একদিনে এ চার সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ওই বছরের ৬ জুলাই। আইন অনুযায়ী, আগামী বছরের প্রথম দিকেই এসব সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপযোগী হবে। দলীয় প্রতীকে এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব দলের অংশগ্রহণের ক্ষেত্র তৈরি করাই হবে নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
উল্লেখ্য, বিগত রকিব কমিশন ২০১৩ সালে পাঁচটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠান করে প্রশংসিত হয়েছিল। তবে তাদের পরে নির্বাচনগুলো বিতর্ক এড়াতে পারেনি। ব্যর্থতার জন্য বেশির ভাগ মহল থেকেই তীব্র সমালোচনার শিকার হয়েছে বিগত ইসি। তাই নতুন নির্বাচন কমিশনকেও এই ছয় সিটি নির্বাচন নিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। -বিডি প্রতিদিন
৪ মে, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এসবি