রবিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৫, ১২:২৭:৩৮

ওদের নতুন কৌশল!

ওদের নতুন কৌশল!

জামাল উদ্দিন : জননিরাপত্তার স্বার্থে সড়ক-মহাসড়কে বসানো চেকপোস্টগুলোয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরই শঙ্কায় থাকতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে সন্দেহভাজনদের তল্লাশি করতে গিয়ে বেশ ক’জন পুলিশ সদস্য দুর্বৃত্তদের হাতে জীবন দিয়েছেন। তবে, এ সব ঘটনার বেশিরভাগই সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্র নাশকতার অংশ হিসেবে ঘটিয়েছে বলে মনে করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা। তারা এসব ঘটনাকে জামায়াত-শিবিরের নাশকতার নতুন কৌশল হিসেবেই দেখছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর গাবতলীতে চেকপোস্টে পুলিশের এএসআই ইব্রাহিম মোল্লা হত্যা ঘটনায় পুলিশের আইজি এ কে এম শহীদুল হক প্রতিবেদককে বলেন, যারা দেশের স্বাধীনতা ও উন্নয়নে বিশ্বাস করে না তারাই পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের হত্যা করছে। ঘটনাস্থল থেকে আটক শিবির নেতা মাসুদ রানার তথ্য অনুযায়ী কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে আরও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। একইসঙ্গে তাদের আস্তানা থেকে তাজা বোমা ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। এছাড়া, এঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে বগুড়া থেকে জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপি নেতাসহ ২৫ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে শুক্রবার সকালে ২১ জনকে পুরান বগুড়া এলাকার একটি ছাত্রাবাস থেকে এবং চারজনকে বৃহস্পতিবার রাতে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা থেকে আটক করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় চেকপোস্ট বসিয়ে সন্দেহভাজনদের তল্লাশি চালানোর সময় সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশনা থাকলেও সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই থাকেন উদাসীন। ফলে বারবার তাদের বিপদে পড়তে হচ্ছে। সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া মনোভাব এবং পুলিশ সদস্যদের উদাসীনতার কারণেই তাদের নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। চেকপোস্টে পুলিশ সদস্যরা লাইনে দাঁড়িয়ে ও সন্দেহভাজনদের হাত উঁচু করে তল্লাশি চালানোর নিয়ম রয়েছে। এ সময় অস্ত্র নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকারও নির্দেশনা রয়েছে পুলিশ সদর দফতর থেকে। কিন্তু প্রায় সময়েই দেখা যায়, পুলিশ সদস্যরা এ নিয়ম মানেন না। এতে কোনও একজন সন্ত্রাসীকে তল্লাশি করার সময় তার সহযোগীরা সহজেই পুলিশের ওপর হামলা চালানোর সুযোগ পেয়ে যায়। বৃহস্পতিবার রাতে গাবতলীর ঘটনার পর দায়িত্ব পালনের সময় যথাযথ নিয়ম ও শৃঙ্খলা মেনেই তল্লাশি চালানোর নির্দেশনা জারি করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। নির্দেশনায় বলা হয়, দায়িত্বপালনের সময় নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। তল্লাশির সময় কমপক্ষে একজন পুলিশ সদস্যকে অস্ত্রসহ নিরাপত্তায় থাকতে বলা হয়েছে। রাস্তার মাঝখানে গাড়ি না থামিয়ে এক পাশে থামিয়ে তল্লাশি করতে বলা হয়। কোনও গাড়ি যদি সিগন্যাল না মেনে পালিয়ে যায় তাহলে ধাওয়া না করে পরবর্তী চেকপোস্ট কিংবা পুলিশ স্টেশনকে অবহিত করতে বলা হয়। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর গাবতলীতে তল্লাশি চালানোর সময় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নির্মমভাবে নিহত হন দারুস সালাম থানার এএসআই ইব্রাহিম মোল্লা। গত ২৯ সেপ্টেম্বর মহাখালীর ফ্লাইওভারের ওপরে চেকপোস্টে একটি ট্রাককে থামানোর নির্দেশ দিলে ট্রাকটি সুজন নামের এক পুলিশ কনস্টেবলকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। সুজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। ২৭ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ সড়কের ফতুল্লার কাশিমপুর চেকপোস্টে পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় রাশেদুল ইসলাম ইসলাম নামের অন্য এক পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হন। গত ৮ মে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকার চেকপোস্টে তল্লাশির সময় সন্ত্রাসীদের মাইক্রোবাস চাপায় দেলোয়ার হোসেন নামে এক কনস্টেবল নিহত হন। এছাড়া, বছরের শুরুতে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনের সময় পুলিশের ওপর হামলা হয় একাধিকবার। পুলিশ চেকপোস্টে নিরাপত্তাহীনতার ব্যাপারে আধুনিক পুলিশিং ব্যবস্থা ও সরঞ্জামাদির অভাবকে দায়ী করেন সংশ্লিষ্টরা। দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, জননিরাপত্তায় সাধারণত দুই ধরনের চেকপোস্ট ব্যবহার করা হয়। ম্যানুয়াল ও ইলেক্ট্রনিক চেকপোস্ট। ম্যানুয়াল চেকপোস্টের মাধ্যমে হাতের ইশারায় যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। ইলেক্ট্রনিক চেকপোস্টে সিগন্যালে অপরাধীরা যেন দ্রুত গাড়ি নিয়ে পালাতে না পারে সে জন্য সুইচের মাধ্যমে রাস্তার ওপর লোহার কাঁটাবেষ্টিত সিগন্যাল দিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ স্পটগুলোয় ইলেক্ট্রনিক চেকপোস্ট ব্যবহার করা হয়। ২০১২ সালের জুলাই মাসে রাজধানীতে ইলে্‌ক্ট্রনিক চেকপোস্টের উদ্ধোধন করেন তৎকালীন আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার। কূটনৈতিক জোনসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থানে ইলেক্ট্রনিক চেকপোস্ট স্থাপন করা হলেও সেগুলোর বেশিরভাগই বর্তমানে অকেজো। ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মোস্তাক আহমেদ জানান, চেকপোস্টে তল্লাশির সময় পুলিশ সদস্যদের বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিহিত ও অনগার্ড অবস্থায় থাকতে বলা হয়। কিছু ক্ষেত্রে গরমের কারণে হয়তো তারা জ্যাকেট পরেন না। তিনি বলেন, গাবতলীর ঘটনায় আটক মাসুদ রানার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে বোমা ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। এদিকে, গোয়েন্দারা জানান, আটক মাসুদ রানার সঙ্গে থাকা শিবির নেতা এনামুল হক কামালের এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতেই পুলিশ সদস্য ইব্রাহিম মোল্লা নিহত হয়েছেন। তাকে গ্রেফতারে বিশেষ অভিযান চলছে। বিদেশি নাগরিক হত্যায় ইন্ধনদাতারাই পুলিশের মনোবল ভাঙতে পরিকল্পিতভাবে পুলিশ সদস্যকে হত্যা করিয়েছে বলে ধারণা তাদের। গাবতলীর ঘটনার পর রাজধানীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে।-বাংলা ট্রিবিউন ২৫ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে