রবিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৫, ১২:৪৫:৪৫

সেই ইতিহাসকে পেছনে ফেলে নতুন রেকর্ড গড়েছে বিএনপি!

সেই ইতিহাসকে পেছনে ফেলে নতুন রেকর্ড গড়েছে বিএনপি!

নিউজ ডেস্ক : ক্ষমতার বাইরে থাকার আগের রেকর্ডকে পেছনে ফেলে নতুন রেকর্ড গড়েছে বিএনপি। এর আগে জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারিয়ে ৮ বছর ১১ মাস ২৪ দিন রাষ্ট্র পরিচালনার বাইরে ছিল বিএনপি। শুক্রবার সেই রেকর্ড অতিক্রম করে ৮ বছর ১১ মাস ২৫ দিন ক্ষমতার বাইরে আছে দলটি। নতুন এই নেতিবাচক রেকর্ডে দলে অস্বস্তি থাকলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অতীত রেকর্ড দলটিকে অনুপ্রাণিত করছে। ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকার পরও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দাপটের সঙ্গে ক্ষমতায় আসীন হয়েছিল বর্তমান ক্ষমতাসীনরা। তাই ৯০-র স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মতো সাংগঠনিক শক্তি না থাকলেও সংগঠনকে আন্দোলন সফলের উপযোগী করে আবারো খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে বিএনপি। ঐতিহাসিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের এক পটভূমিতে ৭ নভেম্বর ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন তৎকালীন সেনাপ্রধান ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। তার সামরিক শাসনামলে প্রথমে তিনি ১৯ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) নামে বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠীর একটি সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর তিনি বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। এর আগেই ১৯৭৭ সালের ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতি হন জিয়াউর রহমান। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান নিহত হলে তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার কিছু সময়ের জন্য সরকার ও দলের হাল ধরেন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ জেনারেল এরশাদ বিএনপিকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করন। এরপর ১৯৯১ সালের ২০ মার্চ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ক্ষমতা গ্রহণের আগ পর্যন্ত টানা ৮ বছর ১১ মাস ২৪ দিন ক্ষমতার বাইরে ছিল বিএনপি। ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতা হারালেও পরের সংসদ নির্বাচনে ২০০১ সালে আবারো রাষ্ট্রক্ষমতায় ফেরে দলটি। সর্বশেষ ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত টানা ৮ বছর ১১ মাস ২৬ দিন ক্ষমতার বাইরে রয়েছে তারা। এর মধ্যে ১৯৯৬ সালে এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে পরাজিত হয়ে দুই দফা সংসদে বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি সরকারি বা বিরোধী দলে কোনো স্থানেই নেই। তাদের পরিচয় এখন শুধুই রাজপথের বিরোধী দল। এই নির্বাচনের আগে ও পরে দুই দফা আন্দোলন করেও সফল হয়নি দলটি। দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতার বাইরে থাকার বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, পরিসংখ্যান ভুল বলা যাবে না। তবে এখানে আলোচনার বিষয়টি হচ্ছে, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতায় গিয়েছিল। সেই শাসন আমলকে অবৈধ বলার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে জোর করে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের বর্তমান শাসন আমলকে বৈধ বলা যাবে না। এই অবৈধ ক্ষমতাসীনদের এখনো ক্ষমতা থেকে নামানো সম্ভব হয়নি এটা বিএনপির এখন পর্যন্ত ব্যর্থতা তা অস্বীকার করারও উপায় নেই। তবে জোর করে ক্ষমতায় থাকাদের উচ্ছেদ করতে কিছু সময় যে লাগে তাও বিশ্ব রাজনীতির ঐতিহাসিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়। বর্তমান ক্ষমতাসীনদের হঠাতেও হয়তো আরা কিছু সময় লাগবে। দলের সিনিয়র এই নেতার মতে, ১৯৭৫ সালে ক্ষমতা হারিয়ে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ক্ষমতায় গিয়েছিল। সেই তুলনায় বিএনপি তার অর্ধেক সময়ও অতিক্রম করেনি। ক্ষমতা পরিবর্তনের গণতান্ত্রিক পদ্ধতি যখনই অবলম্বন করা হবে তখনই বিএনপি ক্ষমতায় যাবে বলেও দাবি করেন তিনি। বিএনপি সূত্রমতে, আবারো ক্ষমতায় যেতে আগামী বছরের শুরুতেই একটি নির্বাচন আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বিএনপি। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে তিন মাস টানা আন্দোলনে 'ব্যর্থ' হলেও আবারো ঘুরে দাঁড়াতে চলতি বছরের মধ্যেই দলকে আন্দোলন উপযোগী সংগঠনে রূপ দিতে কাজ করে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এজন্য তিনি চিকিৎসার জন্য বিদেশ গিয়েও একই সঙ্গে সাংগঠনিক পুনর্গঠনের কাজ করে যাচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দল পুনর্গঠনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে চলমান লন্ডন সফরে আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন খালেদা জিয়া। সঙ্গত কারণে তার সফরও অনেক দীর্ঘ হচ্ছে। পুনর্গঠনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে মধ্য নভেম্বরে খালেদা জিয়া দেশে ফিরতে পারেন। সূত্রমতে, খালেদা জিয়া তারেক রহমানের আলোচনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে, আগামী ডিসেম্বর নাগাদ বিএনপির কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করা, সাংগঠনিক কিছু পরিবর্তন, স্থায়ী কমিটি, নির্বাহী কমিটিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্বে পরিবর্তন, একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়তে নানা পরিকল্পনা। আর দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে পূর্ণ মহাসচিব করতে শীর্ষ দুই নেতা মতৈক্যে পেঁৗছেছেন। দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতার বাইরে থাকার বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান মনে করেন, এর পেছনে আন্তর্জাতিক চক্রান্ত ও বিএনপির নিজেদের কিছু বিষয়ে ব্যর্থতা দায়ী। তবে এই সমস্যা শিগগিরই কেটে যাবে। গণতান্ত্রিকভাবে বিএনপি বারবার ক্ষমতায় গেছে। আবারো গণতান্ত্রিক উপায়েই বিএনপি ক্ষমতায় যাবে। মনে রাখতে হবে আওয়ামী লীগও ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে ছিল। এই বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগ ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে ছিল, কিন্তু তারা জনগণের পাশে ছিল। ক্ষমতা দখলকারীদের কারণে আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বাইরে ছিল। আর বিএনপি জনগণের পাশে না থেকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চায়। তাই তাদের এই পরিণতি। দুটি দলের অবস্থান ও পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।-যাযাদিন ২৫ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে