সোমবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৫, ০১:৩৭:৪৬

‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা, জানেন না তদন্ত কর্মকর্তা’

‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা, জানেন না তদন্ত কর্মকর্তা’

জাহাঙ্গীর আলম : হরতাল অবরোধে ৪২ জনকে পুড়িয়ে হত্যা ও ধর্মীয় উস্কানীর অভিযোগে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করে আওয়ামী লীগপন্থী জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিকী। এই দুইটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন প্রায় এক বছরেও আদালতে দাখিল করতে পারেনি পুলিশের সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তারা। বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে, একটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এখনো মামলা সম্পর্কেই জানেন না! মামলা দু’টির বাদী জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিকী প্রতিবেদককে এ বিষয়ে বলেন, বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে করা দুই মামলায় মাসের পর মাস যাওয়ার পরও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করছে না পুলিশ। তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে বার বার প্রতিবেদন বিষয় বললেও তারা কোনো গুরুত্বই দিচ্ছেন না। তদন্ত কর্মকর্তারা মামলার প্রতিবেদন দাখিল না করায় ঝুলে আছে আলোচিত দুই মামলা। ৪২ জনকে পুড়িয়ে হত্যা মামলা : ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালত (সিএমএম) সূত্র থেকে জানা গেছে, সারাদেশে ৪২ জনকে পুড়িয়ে হত্যা এবং সরকারের কোটি কোটি টাকা ক্ষতির অভিযোগে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গত ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সিএমএম আদালতে মামলা করা হয়। মামলাটি দায়ের করেন জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী। অবশ্য, আদালতের নির্দেশে গত এক মার্চ এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের কথা থাকলেও তা দাখিল করা হয়নি। এরপর আরও ৫ বার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়ানো হয়। অথচ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফিরোজ কবীর এই মামলা সম্পর্কেই কিছু জানেন না! মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফিরোজ কবিরে এই প্রতিবেদককে বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা আমাদের থানাতে নেই। আমি এর তদন্ত কর্মকর্তা নয়। অন্যদিকে গুলশান থানার পরিদর্শক (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের কোনো মামলা আছে কি-না তা খুঁজে দেখতে হবে। এই হত্যা মামলার অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার গুলশান কার্যালয়ে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি বিকেল ৫টায় সারাদেশে অবরোধ পালনের ঘোষণা দেন এবং এরপর দফায় দফায় হরতালের আহ্বান করেন। এ কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ৪২ জন নিহত হন এবং সরকারের কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হয়। এই মামলার আসামীরা হলেন— বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শমসের মবিন চৌধুরী ও অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ। ধর্মীয় উস্কানীর অভিযোগে মামলা : ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালত (সিএমএম) থেকে জানা গেছে, ধর্মীয় উস্কানীর অভিযোগে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ২১ অক্টোবর ঢাকা সিএমএম আদালতে এই মামলাটি করেন জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী। ওইদিনই আদালতের নির্দেশে শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু জাফরকে এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের সময় ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। পরবর্তী সময়ে এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদালত থেকে আরও ৮ বার সময় দেওয়া হলেও তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। এই বিষয়ে শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু জাফর প্রতিবেদককে বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদার বিরুদ্ধে দায়ের করা ধর্মীয় উস্কানীর অভিযোগের মামলার তদন্ত শেষের পথে। খুব শীঘ্রই মামলার প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে। কী কারণে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে সময় লাগছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রয়োজন মতো সময়ের অভাব এবং মামলা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র সংগ্রহের কারণে সময় লাগছে। তা ছাড়া এটা একটি স্পর্শকাতর মামলা, তাই অধিক গুরুত্ব দিতে হচ্ছে। এই জন্য সময় বেশী লাগছে। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা ধর্মীয় উস্কানী প্রদানের মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে হিন্দু সম্প্রদায়ের শুভ বিজয়ার অনুষ্ঠানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ পরে আছে। আসলে দলটি ধর্মহীনতায় বিশ্বাসী। ওই অনুষ্ঠানে বেগম খালেদা জিয়া আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সব ধরনের মানুষের ওপর আঘাত করে। আর লোক-দেখানো ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দখল করে নেয়। ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ পরা এই জবরদখলকারী সরকারের হাতে কোনো ধর্মের মানুষই নিরাপদ নয়। বেগম খালেদা জিয়ার এই বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে ২০১৪ সালের ২১ অক্টোবর ঢাকা সিএমএম আদালতে নালিশী মামলাটি করেন জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী। এই মামলাটিতে কেবল খালেদা জিয়াকেই আসামী করা হয়।-দ্য রিপোর্ট ২৬ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে