সোমবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৫, ০৩:৫২:১৯

মশায় অতিষ্ঠ নগরবাসী, ঘুমিয়ে আছে ডিসিসি

মশায় অতিষ্ঠ নগরবাসী, ঘুমিয়ে আছে ডিসিসি

নিউজ ডেস্ক : মশার হুল থেকে কোনোভাবেই নিস্তার পাচ্ছে না রাজধানীবাসী। ব্যাপক হারে বেড়েছে মশার উপদ্রব। পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে অভিজাত এলাকার বাসাবাড়ি, অফিস, স্কুল-কলেজ, দোকানপাট সবখানে মশককুল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে স্বমহিমায়। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে মশার উৎপাত যেন বেড়ে যায় কয়েকগুণ। দিনেও মশার যন্ত্রণা কম-বেশি থাকে। ওষুধ, স্প্রে, মশারি, ইলেকট্রিক ব্যাট কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। মশার যন্ত্রণায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা থেকে শুরু করে ঘরের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে অনেকাংশে। পরিচ্ছন্নতার অভাব এবং মশা নিধন কার্যক্রম না থাকায় উৎপাত বেড়েছে কয়েকগুণ। এরই মধ্যে নগরীর বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, ম্যালেরিয়া এবং ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভুগছেন অনেকেই। কষ্ট আর ভোগান্তির চরমে থাকে ডেঙ্গু রোগীর শারীরিক অবস্থা। রাজধানীর মগবাজার, মৌচাক, মালিবাগ, কমলাপুর, মিরপুর, গাবতলী, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, রায়েরবাজার, ধানমন্ডি, ঝিগাতলা, কামরাঙ্গীরচর, সূত্রাপুর, আরমানিটোলা, আরামবাগ, যাত্রাবাড়ী, সায়দাবাদ, খিলগাঁও, শ্যামপুর, জুরাইন, রামপুরা, বনশ্রী, বাড্ডা, কুড়িল, গুলশান, তেজগাঁওসহ সারা ঢাকা শহরে মশার উপদ্রব ব্যাপক হারে লক্ষ্য করা যায়। উপদ্রব বাড়লেও মশা নিধনের বিষয়ে ডিসিসির কোনো ভ্রক্ষেপ নেই। নিয়মিত ও সঠিকভাবে মশার ওষুধ ছিটানো হয় না বলেও জানা যায়। আর যা ছিটানো হয়, তাও মানসম্পন্ন নয়। বর্তমানে অনেকটা থমকে আছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম। কিছু ভিআইপি এলাকা ছাড়া রাজধানীর অধিকাংশ এলাকার মানুষ মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। অথচ মশা তাড়াতে বছরে ১৯ কোটি টাকা ব্যয় করছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। দুই ডিসিসিতে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে প্রায় ৭০০ কর্মী নিয়মিত কাজ করে আসছেন। ডিসিসির নিজস্ব জনবলও চার শতাধিক। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আদেশবলে ২৯২ কর্মী মশক নিয়ন্ত্রণ শাখায় কাজ করছেন। ডিসিসির হস্তচালিত মেশিন রয়েছে ৬১৭টি, হুইল ব্যারো মেশিন ২০টি এবং ১০টি নেফসেস স্প্রেয়ার মেশিন রয়েছে। সিটি করপোরেশনের বাজেট পর্যালোচনা থেকে দেখা যায়, উভয় সিটি করপোরেশনে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে (মনিটরিং ও সার্ভিল্যান্সসহ) মশক ওষুধ কেনা, কচুরিপানা পরিষ্কার ও পরিচর্যা, ফগার, হুইল ও স্প্রে মেশিন পরিবহন এবং বিবিধ কার্যক্রমের জন্য প্রতিবছর প্রায় ১৯ কোটি টাকা খরচ করা হয়। সব মিলিয়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রায় ছয়জন করে মশক নিধনের কাজ করছেন। তবে মশক নিধন ওষুধের মানও প্রশ্নবিদ্ধ! মিরপুর ১৪ নম্বর এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার ছোট একটা মেয়ে আছে। বয়স দেড় বছর। মশার যন্ত্রণায় মেয়েকে নিয়ে পড়েছি দারুণ বিপাকে। প্রায় সারাদিন বাসার মধ্যে স্প্রে করতে হয়। তারপরও মশা কমছে না। বাসায় ছোট বাচ্চা থাকায় মশার কয়েলও ধরাতে পারি না। মিরপুরের আরেক বাসিন্দা জিয়াউল হক বলেন, মশার উৎপাতে গত মাসে বাসা বদল করে দোতলা থেকে চারতলায় উঠেছি। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি। জানা গেছে, চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল মেয়র নির্বাচনের পর দুই মেয়র কিছু পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি হাতে নিলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা পর্যাপ্ত ছিল না। ফলে দিন দিন বেড়েছে মশার বিস্তার। মশা নিধনের বিষয়ে তৎপর রয়েছে ডিসিসি এমন দাবি করলেও বাস্তবতা পুরোপুরি উল্টো। নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সন্ধ্যা হতেই ঢাকা চলে যায় মশার দখলে। মশার জ্বালায় ত্রাহি অবস্থায় রাত কাটাচ্ছে রাজধানীবাসী। বস্তি থেকে শুরু করে অভিজাত এলাকা পর্যন্ত সর্বত্রই মশার আক্রমণে ভোগান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. একেএম মাসুদ হাসান এ প্রতিবেদককে বলেন, মশা নিধনে সিটি করপোরেশন তৎপর রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা নিয়মিত কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছি। মশা নিধনে আমাদের পর্যাপ্ত বরাদ্দও রয়েছে। শীত ও বর্ষা মৌসুমে মশার প্রকোপ কিছুটা বাড়ে। নগরীর বিভিন্ন ডোবা, খাল এবং লেকে কচুরিপানার কারণে মশার উৎপাত বেশি হয়। এরপরও আমরা সতর্কতার সঙ্গে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি বলে জানান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই। মশা নিধনে আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ নগরবাসী মনে করে, এভাবে বেশিদিন চলতে থাকলে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়াসহ নানাবিধ মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্য সমস্যা আরও ভয়াবহ এবং প্রকট আকারে ধারণ করবে। এ ব্যাপারে ডিসিসি অতি দ্রুত ব্যবস্থা এবং কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলেও প্রত্যাশা নগরবাসীর।-ভোরের পাতা ২৬ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে