সোমবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৫, ০৩:৫৯:০৬

বিশ্ব মিডিয়ায় তোলপাড়

বিশ্ব মিডিয়ায় তোলপাড়

নিউজ ডেস্ক : হোসনি দালানে বোমা হামলা নিয়ে বিশ্ব মিডিয়ায় তোলপাড় চলছে। এসআইটিই ইন্টেলিজেনস গ্রুপ বলছে, এরই মধ্যে এ হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস। তবে সরকার এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। বিদেশী মিডিয়ায় বলা হচ্ছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশে দৃশ্যত অবস্থান শক্ত করেছে আইএস। তারা সম্প্রতি বিদেশীদের হত্যার দায় স্বীকার করেছে। ডয়চে ভেলে লিখেছে, সন্ত্রাসী গ্রুপ আইএস শিয়াদের বার্ষিক র‌্যালিতে হামলার দায় স্বীকার করেছে। এ হামলায় কমপক্ষে একজন নিহত হয়েছে। কয়েক ডজন আহত হয়েছে। এসআইটিই ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ জানিয়েছে, এ হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসেনের মৃত্যু স্মরণে বার্ষিক আশুরা মিছিলে এ হামলা হয়। এতে এক কিশোর নিহত ও কমপক্ষে ৮০ জন আহত হয়েছে। পাকিস্তানে একই রকম হামলায় ১৮ জন নিহত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ঢাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে যে, আইএসের মতো সুন্নি জঙ্গি সংগঠন এ অঞ্চলের শিয়া ও অন্য গ্রুপগুলোকে টার্গেট করছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশে দৃশ্যত অবস্থান শক্ত করেছে আইএস। তারা সম্প্রতি বিদেশীদের হত্যার দায় স্বীকার করেছে। তারা হত্যা করেছে ইতালিয়ান এক এনজিওকর্মী ও জাপানের এক খামারিকে। দুটি হত্যার পরই এর দায় স্বীকার করে আইএস সমর্থকরা। বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, পুরান ঢাকায় শনিবার আশুরার সমাবেশে ধারাবাহিক বোমা হামলায় কমপক্ষে একজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অনেকে। এ হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস। পুলিশ ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে। এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছে, চার সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এ হামলায় কোন জঙ্গি (মিলিট্যান্টস) জড়িত নয়। পাকিস্তানে হামলায় ১৮ জন নিহত হওয়ার সঙ্গে এ হামলার যোগসূত্র নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, এটা কোন জঙ্গি হামলা নয় বরং এটা ছিল পরিকল্পিত, ধ্বংসাত্মক হামলা। এর একমাত্র লক্ষ্য হলো দেশের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করা। তিনি বলেন, পাকিস্তানে আত্মঘাতী বোমা হামলার কয়েক ঘণ্টা পরে এ হামলা হলেও আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বিশ্বাস করি, পরিস্থিতি মোটেও এক রকম নয়। কারণ, আমরা শিয়া সম্প্রদায়ের সঙ্গে শান্তিতে বসবাস করি। কিন্তু ঘটনার পর পরই জঙ্গিদের ওপর নজরদারি গ্রুপ এসআইটিই বলেছে, আইএস হামলার দায় স্বীকার করেছে। তারা বলেছে, ‘বাংলাদেশে খেলাফতের সৈনিকরা’ ঢাকায় বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ হামলায় নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন। জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমেদ বলেছেন, দেশে আইনশৃঙ্খলার অবনতির এটা একটি পরিষ্কার প্রমাণ। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তাতে তিনি বেদনা প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় সহনশীলতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দীর্ঘদিনের রীতি আছে। ওদিকে এ হামলার পর বাংলাদেশে তার নাগরিকদের জন্য তারা এর আগে যে পরামর্শ দিয়েছিল তা-ই বহাল থাকবে। তাদেরকে প্রকাশ্য সব জায়গায় উপস্থিতি কম রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বার্তা সংস্থা এপি বলেছে, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় শিয়া মুসলিমদের এক সমাবেশে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা বোমা নিক্ষেপ করেছে। এতে একটি কিশোর নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে শতাধিক। সুন্নি অধ্যুষিত দেশে শিয়াদের ওপর এ হামলা অপ্রত্যাশিত। এখানে এ বছর ইসলামপন্থি গ্রুপের সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ সন্দেহজনকভাবে দু’জনকে আটক করেছে। উদ্ধার করেছে অবিস্ফোরিত দুটি বোমা। এ হামলাকে দেশ অস্থিতিশীল করার চেষ্টা বলে আখ্যায়িত করা করেছে কর্তৃপক্ষ। এ হামলার দায় স্বীকার করে অনলাইনে বিবৃতি দিয়েছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। জিহাদি কর্মকাণ্ডের ওপর নজর রাখে এসআইটিই ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ। আইএসের দায় স্বীকারের কথা তারাই জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে সুন্নি কট্টরপন্থি ওই গ্রুপ বলেছে ‘বাংলাদেশে খেলাফতের সৈনিকেরা’ ওই বোমা হামলা করেছে। তবে নিরপেক্ষ কোন সূত্র থেকে এ দাবি যাচাই করা যায়নি। ঢাকা পুলিশের কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান মিয়া বলেন, হামলার প্রকৃতি দেখে আমি মনে করি দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য এটা করা হয়েছে। এটা সাবোটাজ। কিন্তু এটা পরিষ্কার যে, পরিকল্পিতভাবে এ হামলা করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, শুক্রবার দিবাগত রাত ২টায় প্রায় ২৫ হাজার মানুষ সমবেত হয় হোসনি দালান থেকে ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ র‌্যালি বের করার জন্য। সেই সমাবেশে ৫টি বোমা ছোড়া হয়। তার মধ্যে তিনটি বিস্ফোরিত হয়। এতে হাজার হাজার মানুষের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ সব দিক দিয়ে পালাতে থাকে। প্রিয়জনের সন্ধানে স্বজনরা রাতের অন্ধকারে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে যান। ঘটনাস্থলে পড়ে থাকে জুতা, স্যান্ডেলের স্তূপ। পড়ে থাকে রঙিন পতাকা, চেইন। আশুরার দিনে হযরত ইমাম হোসেন (র.) এর শহীদি স্মরণ করে তারা এসব নিয়ে র‌্যালি করে থাকেন। বোমা হামলায় মারাত্মক আহত হয় ১৫ বছর বয়সী একটি বালক। তাকে হাসপাতালে নেয়ার আগেই সে মারা যায়। তার লাশ রাখা হয় মর্গে। আহতদের বেশির ভাগের অবস্থাই স্থিতিশীল। তাদেরকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এ কথা বলেছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডা. নাজিমুন নেসা। ঢাকায় ওষুধের দোকান মালিক মোহাম্মদ সজীব তার পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে যোগ দিয়েছিলেন ওই র‌্যালিতে। তিনি বলেন, অকস্মাৎ আমার কাছে বোমা বিস্ফোরণ হয়। আমি দৌড়াতে থাকি। আমরা অনেককে হাসপাতালে নিয়ে যেতে থাকি। আমার হাত এ সময় রক্তে লাল হয়ে যায়। হামলা সত্ত্বেও ঢাকার রাজপথে হাজার হাজার শিয়া নেমে আসেন। কোন বিঘ্ন ছাড়াই তারা র‌্যালি বের করেন। পুলিশের মুখপাত্র মুনতাসিরুল ইসলাম বলেছেন, এ হামলা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বলেছেন, ক্লোজড সার্কিট ফুটেজ পরীক্ষা করে হামলাকারীদের আটক করার আশা করছে কর্তৃপক্ষ। হত্যা করা হয়েছে দুই বিদেশী নাগরিককে। দুই বিদেশীকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে আইএস, যদিও সরকার এমন দাবির সঙ্গে সঙ্গে তা প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলেছে, বাংলাদেশে এ গ্রুপটির উপস্থিতির পক্ষে কোন প্রমাণ নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন মধ্যপন্থি। তিনি জঙ্গি মৌলবাদী গ্রুপকে দমন করার প্রত্যয় ঘোষণা করেছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ডজন ডজন জঙ্গিকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ৬টি গ্রুপ নিষিদ্ধ করেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দমনপীড়নের ফলে দেশের কট্টরপন্থিরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ইসলামপন্থি গ্রুপগুলো জঙ্গি তৎপরতা সৃষ্টি করেছে। সহিংসতায় বিদেশীরা সোচ্চার হয়েছেন। সহিংসতায় দরিদ্র দেশটির অর্থনীতি হুমকিতে পড়েছে, যা বিদেশী সাহায্য ও ২৫০০ কোটি ডলারের গার্মেন্ট শিল্পের ওপর খুব বেশি নির্ভর করে চলে। ওদিকে পৃথক এক ঘটনায় পাকিস্তানে আশুরার তাজিয়া মিছিলে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী নিজেকে উড়িয়ে দিয়ে হত্যা করেছে কমপক্ষে ১৮ জনকে। এ ঘটনা ঘটেছে জ্যাকোবাবাদ শহরে। বার্তা সংস্থা পিটিআই বলেছে, আইএসের দাবি পুরোটাই ভিত্তিহীন বলে হামলার দায় স্বীকারকে রোববার প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ। শনিবার শিয়া সম্প্রদায়ের ওপর বোমা হামলার পর আইএস এর দায় স্বীকার করে। এ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পিটিআইকে বলেন, দায় স্বীকারের ঘটনা পুরোপুরি ভিত্তিহীন। এতে ইসলামি জঙ্গিরা জড়িত নয়। আমাদেরকে এক বা দুটি দিন সময় দিন। এ সময়ের মধ্যেই আমরা মূল অপরাধীকে বিচারের হাতে তুলে দিতে পারব বলে আশা করি। ওই হামলায় এক বালক নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৯০ জনের মতো মানুষ। ইতালির এনজিও কর্মী ও জাপানের এক নাগরিককে গুলি করে হত্যার পর এর দায় স্বীকার করে আইএস। এর মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শনিবারের ওই হামলা হলো। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল বলেন, শিয়া মুসলিমদের শোকের উৎসব আশুরা উপলক্ষে এ হামলা পরিকল্পনা করেছিল অপরাধীরা। যাতে এ ঘটনার সঙ্গে সুন্নি আইএস-এর সঙ্গে একে মিলিয়ে দেয়া যায়। তিনি বলেন, সংক্ষেপে বলতে পারি তিনটি দুর্ঘটনা- দুই বিদেশী হত্যা ও হোসেনি দালানে হামলার মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে। দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি ও আমাদের সরকারের সম্মানহানি করতেই একই গ্রুপের মূল হোতারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। পুলিশ বলেছে, ২০ হাজারেরও বেশি মানুষের সমাবেশে তিনটি বোমা ছোড়া হয় হোসেনি দালানে। তারা বলছেন, সুন্নি অধ্যুষিত বাংলাদেশে শিয়াদের ওপর এটাই প্রথম হামলা। বাংলাদেশে এ বছর সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব হামলার দায় স্বীকার করছে আইএস জঙ্গিরা। হোসেনি দালানে বোমা হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ বলেছে, এ হামলার জন্য দায় স্বীকার করেছে আইএস। এখানে উল্লেখ্য, সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ জঙ্গি সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ডের ওপর অনলাইনে নজরদারি করে। পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে একই রকম হামলায় কমপক্ষে ১২ জন নিহত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এ হামলা চালানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল বলেন, পাকিস্তানের হামলার সঙ্গে বাংলাদেশের হামলার উদ্দেশ্য ভিন্ন। হোসেনি দালানে বোমা হামলা করা হয়েছে যাতে শিয়া-সুন্নি সংঘাতের রূপ দেয়া যায়। জাপানের অনলাইন এনএইচকে বলেছে, গত মাসের শেষের দিক থেকে এ মাসের প্রথম দিক পর্যন্ত বাংলাদেশে ইতালি ও জাপানের নাগরিক নিহত হয়েছেন। এসব হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস। বাংলাদেশের অবনতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। শনিবার বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় শিয়াদের একটি ধর্মীয় সমাবেশে বোমা বিস্ফোরণে এক কিশোর নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে একশ জনেরও বেশি মানুষ।-এমজমিন ২৬ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে