ডা. ইমরান এইচ সরকার : রাজাকার-মৌলবাদী গোষ্ঠীসহ সমাজের সকল অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার কারনে প্রতিদিন ইনবক্সে কিংবা কমেন্টে অসংখ্যবার মৃত্যুর হুমকি পাওয়াটা এতোই ডালভাত হয়ে গেছে যে, ছাত্রলীগের 'কয়েকজন ছাত্রনেতা'র 'পেটানোর হুমকি'কে আলাদা ভাবে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে চাচ্ছিলাম না।
গণজাগরণ মঞ্চ একটি অহিংস সংগঠন, সুতরাং গণজাগরণ মঞ্চের লোকজনকে মারা সবচাইতে সহজ ব্যাপার, এটার জন্য এতো বড় হম্বিতম্বির কোনো প্রয়োজন নেই। তবে মজার ব্যাপার হলো, যে মিছিলের কথা বলা হচ্ছে সেই মিছিলটি হয়েছে শুক্রবার সন্ধ্যায়। শুক্রবার-শনিবার-রবিবারে কোনো প্রতিক্রিয়া কোনো ছাত্রলীগ থেকে পাওয়া গেল না।
রবিবার রাতে একটি টিভি চ্যানেলে হেফাজতের এক নেতাকে আমি তুলোধুনো করার পরেই পরদিন হুট করে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার খেয়াল হলো যে আমাকে পেটানো দরকার এবং সেই পেটানোর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কটূক্তির অভিযোগ নিয়ে আস্ফালন শুরু হলো! -এর মাঝে কোনো ইঙ্গিত আছে কী না সেটাই দেখার বিষয়।
সম্প্রতি হেফাজতের একটা বিবৃতির ভাষা দেখে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন যে হেফাজতিদেরকে আসলে পর্দার আড়াল থেকে কারা পরিচালিত করছে। ছাত্রলীগের কিছু নেতার হঠাৎ করে এই তোড়জোর দেখে সেই প্রশ্নটি আমারও মনে জেগেছে।
মোদ্দা কথা হচ্ছে কারো হুমকিতেই আমি ভীত নই। আমার জীবন সবসময়ই হুমকির মুখে- সেই হুমকি উগ্রবাদীদের নামে আসুক কি ছাত্রলীগের নেতার নাম হয়ে আসুক, তাতে হুমকির গুরুত্ব তো আর কমছে না!
কিন্তু সেটার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে কটুক্তি করা হয়েছে বলে যে অজুহাত তারা দিচ্ছে সেটি সত্যের অপলাপ। গণজাগরণ মঞ্চ কোনো নেতানেত্রীর বিরুদ্ধে কোনো বক্তৃতা বিবৃতিতে অশোভন ভাষা ব্যবহার করে না। জাতীয় নেতৃবৃন্দ তো দূরের কথা, কোনো বৈধ রাজনৈতিক দলের আঞ্চলিক অথবা মাঝারি সারির কোনো নেতার সম্পর্কে কথা বলার সময়ও আমরা অসৌজন্যমূলক কিছু বলি না।
কারন রাজনীতিতে পরষ্পরের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের রীতি এই দেশ থেকে উঠে যাচ্ছে, একে অপরের প্রতি বিষোদগার আর খেয়োখেয়ি আচরণের কারনে সবসময় একটি উত্তেজনা তৈরি হয়ে থাকে- এই রাজনীতিকে আমরা লালন করি না। আমরা সম্মান ও সৌহার্দপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করার পক্ষে।
যার প্রসঙ্গ এসেছে তিনি প্রথমত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, দ্বিতীয়ত বয়সে প্রবীণ ও একজন নারী। তার সম্বন্ধে কটূক্তি করার এই অভিযোগটি স্পষ্টতই বানোয়াট ও হাস্যকর। সমালোচনার সাথে কটূক্তিকে গুলিয়ে ফেলার এই অপচেষ্টা মানসিক দৈন্যতারই প্রকাশ।
কিছু ছাত্রনেতা নিজেদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি কিংবা হেফাজতী কোনো কানেকশনের কারনে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কটূক্তির অজুহাত তুলে মাঠ গরম করতেই পারে, সেটা নিয়ে আমার আলাদা কোনো মাথাব্যথা নেই। এগুলো নিতান্তই তাদের ব্যক্তিগত লাভালাভের বিষয়।
সাম্প্রদায়িক অপশক্তিসহ সকল অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যে সংগ্রাম অব্যাহত আছে, কোনো হুমকিই সেই সংগ্রাম থেকে আমাদের বিচ্যুত করতে পারবে না।
লেখক : গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র।
৩০ মে, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এসএস