বৃহস্পতিবার, ০১ জুন, ২০১৭, ১২:৩৪:১৪

বৃক্ষমানবকে চাকরি দিচ্ছে ঢাকা মেডিকেল

বৃক্ষমানবকে চাকরি দিচ্ছে ঢাকা মেডিকেল

শুভ্র দেব : বৃক্ষমানব আবুল বাজানদার এখন অনেকটা সুস্থ। হাত দিয়ে তিনি নিজের অনেক কাজকর্ম সারতে পারেন। চামচ ধরে ভাত খাওয়া, কাপড় পরা, মাথার চুল আঁচড়ানো, ছোটখাটো জিনিস নাড়াচাড়া করা।

ডাক্তার বলেছেন, তিনি এখন অনেকটা স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন। সময় যতো যাবে তার হাতের অবস্থা আরো ভালো হবে। একেবারে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরলে তাকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চাকরিও দেয়া হচ্ছে। হাসপাতাল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

গতকাল ঢাকা মেডিকেলের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ভবনের পাঁচ তলার ৫১৫ নাম্বার রুমে গিয়ে দেখা যায় আবুল বাজানদার তার স্ত্রী হালিমা আক্তার ও চার বছর বয়সী একমাত্র সন্তান জান্নাতুল ফেরদৌস তাহিরার সঙ্গে খুনসুটিতে ব্যস্ত।

স্মৃতিচারণ করে আবুল বাজানদার বলেন, বাবা-মা, চার বোন ও চার ভাইয়ের সংসার ছিল তাদের। বাবা ভ্যানচালক ছিলেন। তিন বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ষষ্ঠ। অন্যান্য ভাইদের সঙ্গে তিনিও ভ্যান চালাতেন। সময়টা ছিল আরো দশ বছর আগের। নিজের পরিবার এবং ভ্যান নিয়ে তিনি ব্যস্ত সময় পার করছিলেন। তখন হঠাৎ হাতের মধ্যে ছোট ছোট আচিল উঠে। সেই আচিলগুলো ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে।

তিনি বলেন, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে তিনি প্রথমে হোমিওপ্যাথি ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ সেবন করেন। কোনো উন্নতি না দেখে পরে হাসপাতালে যান। দেশে চিকিৎসা করে কোনো ফল না পেয়ে যান ভারতে। কলকাতায় ৬ থেকে ৭ বার গিয়েও এর কোনো সমাধান হয়নি। কলকাতার ডাক্তাররা মাদ্রাজে গিয়ে অপারেশন করার পরামর্শ দেন। এবং সেই সঙ্গে ৬-৭ লাখ টাকা খরচের কথা জানান।

তিনি আরো বলেন, এক পর্যায়ে কলকাতার আশা ছেড়ে দিয়ে তিনি আবার দেশে চলে আসেন। পরে গণমাধ্যম কর্মীদের সহায়তায় তিনি ভর্তি হন ঢাকা মেডিকেলে। প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ঢাকা বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকদের সহযোগিতায় তার যাবতীয় চিকিৎসার ব্যয়ভার সরকার গ্রহণ করে। গত বছরের ২০শে ফেব্রুয়ারি তার হাতে প্রথম অস্ত্রোপচার করা হয়। পরবর্তীতে গত ২১শে মার্চ অস্ত্রোপচার করে তার হাতের আচিল কেটে ফেলা হয়েছে।

আবুল বাজানদারের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়কারী ও উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, সে এখন ভালো আছে, সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছে। তবে এই সমস্যাটা আবার হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আমেরিকার এনালাইসিসে ধরা পড়েছে এটা তার জেনেটিক সমস্যা। আবারো যদি এই সমস্যাটা না হয় সেজন্য তাকে অবজারভেশনে রাখতে হবে। তাই আমরা তার পুনর্বাসনের চেষ্টা করছি।  

আবুল বাজানদার গতকাল বলেন, তিনি এখন পুরোপুরি সুস্থ। নিজের অনেক কাজ তিনি কারো সাহায্য ছাড়া করতে পারেন। তবে ভারী কোনো কাজ করতে পারেন না। কারণ এখনো হাতে একটু একটু ব্যথা অনুভব করেন। তিনি বলেন, বাড়িতে যাওয়ার জন্য মন ছটফট করে। কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ না হয়ে চিকিৎসকরা যেতে দেবেন না। মাঝে মধ্যে ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে স্ত্রী সন্তানের সঙ্গে শাহবাগ, টিএসসি, শহীদ মিনারসহ আশেপাশের এলাকায় ঘুরতে যান। মন খারাপ থাকলে বাইরে হাঁটাহাঁটি করেন।

আবুল বলেন, আমার বয়স এখন ২৬। গত ১০ বছর ধরে আমি হাতের এই সমস্যা নিয়ে ভুগতেছি। এরকম অবস্থায় আমি বিয়েও করেছি। স্ত্রী হালিমা আক্তারের প্রশংসা করে তিনি বলেন, সে আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। সে না থাকলে হয়তো এতোটুকু মানসিক সাপোর্ট পেতাম না।

হালিমা আক্তার বলেন, আমি তার এরকম অবস্থা দেখেই বিয়ে করেছি। কারণ আমি বিশ্বাস করতাম ভালো চিকিৎসা করলে হাতের এই সমস্যা ভালো হয়ে যাবে। এখন আমরা অনেক ভালো আছি। প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতার কারণে গত দেড় বছর ধরে আমরা এখানে আছি। থাকা-খাওয়া, চিকিৎসা খরচ সবকিছুই সরকারি ভাবে করা হয়েছে। আবুল বাজানদার এবং তার স্ত্রীর একটি মাত্র স্বপ্ন, একমাত্র মেয়েকে সবার দোয়া ও সহযোগিতা নিয়ে ডাক্তার বানাতে হবে। মেয়েকে ডাক্তার বানিয়ে গরিব অসহায় সুবিধাবঞ্চিত মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মো. আবুল কালাম  বলেন, আবুল বাজানদার এখন অনেক ভালো, শতভাগ সুস্থ হয়ে উঠেছে। এখনো সে আমাদের তত্ত্বাবধানে আছে। কারণ প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, সে সম্পূর্ণ সুস্থ হলে তার কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এছাড়া আরো একটি কারণে রেখেছি সেটা হচ্ছে ফলোআপের জন্য। এ জন্য আমরা আবুলের জন্য আমাদের ইনস্টিটিউটে একটি চাকরির কথা ভাবছি। কাছাকাছি রেখে তার চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার জন্য। আপাতত তেমন কোনো ঝুঁকি নেই। একটি ওষুধ নিয়মিত তাকে দেয়া হচ্ছে। এবং আমেরিকার এনালাইসিস রিপোর্টে দেখা গেছে পুনরায় এই সমস্যাটি হওয়ার সম্ভাবনা কম। এরপরেও যদি কিছু হয় সেজন্যই তাকে আমাদের কাছে রাখার চেষ্টা করছি। এমজমিন

১ জুন, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে