নিউজ ডেস্ক : পারিবারিক সিদ্ধান্তে মেডিকেলের শিক্ষার্থী স্বপ্নার (ছদ্মনাম) বিয়ের দিন ধার্য হয় গত ৩০ মে। মে মাসের শুরুতে আপন জুয়েলার্সের ডিসিসি মার্কেটের শো-রুম থেকে মোট ১২ ভরি স্বর্ণালঙ্কারের অর্ডার দেন। অগ্রিম টাকাও জমা দেন দুই লাখ ৬৫ হাজার টাকা।
তবে গত ১৪ ও ১৫ মে হঠাৎ শুল্ক গোয়েন্দারা আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি শো-রুম থেকে মোট সাড়ে ১৩ মণ স্বর্ণ ও ৪২৭ গ্রাম ডায়মন্ড ব্যাখ্যাহীনভাবে সাময়িকভাবে জব্দ করে। এতে বিপদে পড়েন স্বপ্না। এরপর অনেক দেনদরবার করেও স্বর্ণের অলঙ্কার কিংবা টাকা কোনোটাই ফেরত পাননি তিনি।
রোববার আপন জুয়েলার্সের গুলশান সিটি কর্পোরেশন মার্কেটের (ডিসিসি) শো-রুম থেকে ৬৮ কেজি স্বর্ণ ও ৩৩৮টি ডায়মন্ডের ছোট নাকফুল আনুষ্ঠানিকভাবে জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। সকাল সাড়ে ৯টায় কাস্টমস হাউজ ঢাকা, কাস্টমস এক্সসাইজ ও ভ্যাট উত্তরের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এ জব্দ প্রক্রিয়া শুরু হয়।
খবর পেয়ে আপন জুয়েলার্স ডিসিসি মার্কেট শো-রুমে মাসহ এক আত্মীয়কে নিয়ে হাজির হন নোয়াখালী মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের ওই ছাত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাকে স্বর্ণ দিতে না পারলে টাকা ফেরত দিক। কিন্তু তারা টাকাও দিচ্ছে না, স্বর্ণও দিচ্ছে না। স্বর্ণ কিংবা টাকা ফেরত না পাওয়ায় প্রথম ধাপে বিয়ে পিছিয়েছে। দুই লাখ ৬৫ হাজার টাকার স্বর্ণ তো রাতারাতি কেনা আমার পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়। যে কারণে বিপাকে আছি। বিয়ে ভাঙার ভয়ে প্রকাশ্যে কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারছি না।’
ওই তরুণীর মা বলেন, মোট পাঁচ লাখ ৬০ হাজার টাকার স্বর্ণের মধ্যে আমরা এক লাখ ৬৫ হাজার টাকার স্বর্ণ জমা দিয়েছি। এর বাইরে নগদ আরও এক লাখ টাকা দিয়েছি। মোট অগ্রিম দাঁড়ায় দুই লাখ ৬৫ হাজার টাকা। বাকি দুই লাখ ৯৫ হাজার টাকা নিয়ে গত ১৫ দিন ধরে ঘুরছি কিন্তু স্বর্ণ দিতে পারেনি আপন জুয়েলার্স কর্তৃপক্ষ।
তিনি আরও বলেন, স্বর্ণ না দিতে পারলে টাকা ফেরত চেয়েছি কিন্তু তাও দিচ্ছে না। তারা (আপন জুয়েলার্স) শুল্ক গোয়েন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলছেন। আর শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের কিছুই করার নেই। আপন জুয়েলার্স থেকে স্বর্ণ কেনার সিদ্ধান্ত এখন আমাদের সামাজিক মান-সম্মানহানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিসিসি মার্কেটের আপন জুয়েলার্স শো-রুমের ম্যানেজার মো. নান্নু বলেন, ‘আমরা কোনো গ্রাহককে হয়রানি করতে চাই না। কিন্তু শুল্ক গোয়েন্দারা সব স্বর্ণ ও অলঙ্কার জব্দ করায় আমরা কোনো অগ্রিম ক্রেতাকে স্বর্ণ দিতে পারছি না। টাকা ফেরত দিতে গেলেও একটি প্রক্রিয়া রয়েছে। বিষয়টি সরাসরি মালিকপক্ষ দেখভাল করে।’
শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (এডি) আরজিনা খাতুন বলেন, ‘যারা রিপেয়ারিং করতে স্বর্ণের অলঙ্কার আপন জুয়েলার্সের শো-রুমগুলোতে দিয়েছিলেন আমরা শুধু তাদের নোটিশ করে এবং কল করে ডেকে বুঝিয়ে দিয়েছি। আমরা দুই পর্বে কাজটি করেছি, যাতে কোনো গ্রাহক হয়রানির শিকার না হন।’
‘কিন্তু যারা ক্রয় করেছেন বা অগ্রিম টাকা জমা দিয়েছেন তাদের জন্য আমাদের আইনি বাধ্যবাধকতা আছে। কারণ সব স্বর্ণের কাগজপত্র নেই আপন জুয়েলার্স মালিকপক্ষের কাছে। যে কারণে জেনে-বুঝে তো আমরা স্বর্ণ হস্তান্তর করতে পারি না।’ তবে আপন জুয়েলার্স কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে টাকা ফেরতের ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন এ শুল্ক কর্মকর্তা।
৪ জুন, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এসএস