নিউজ ডেস্ক : বেসরকারি শিক্ষার ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে কয়েক দিন অচল হয়ে পড়েছিল রাজধানী। অবশেষে সেই আন্দোলনের সফলতাও পেল শিক্ষার্থীরা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ওপর থেকে গতকাল ভ্যাট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় সরকার। কিন্তু ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় ভ্যাট রয়েই গেল। টিউশন ফির ওপর এই মাধ্যমের স্কুল শিক্ষার্থীদের গত বছর পর্যন্ত ভ্যাট ছিল ৪.৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছর থেকে তা ৭.৫ শতাংশ করা হয়েছে।
জানা যায়, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো সরকারি নীতিমালায় চলে না। তাদের এমনিতেই দিতে হয় উচ্চহারে সেশন চার্জ, বেতনসহ নানা ফি। এরপর ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট অভিভাবকদের ওপর বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এসব বিষয়ে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অভিভাবকদের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট আমিনা রত্না প্রতিবেদককে বলেন, 'শিক্ষায় ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন কিন্তু আমরাই শুরু করেছিলাম। কিন্তু আমরা সংখ্যায় কম আর একতাবদ্ধও নই। আর স্কুলের বাচ্চাদের তো রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া যায় না। তাই আমাদের কথা খেয়াল রাখছে না সরকার। তবে শুধু উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরাই যে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে না সেটা সরকারের জানা উচিত। কষ্ট হলেও আমার দুই বাচ্চাকে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াচ্ছি। উচ্চহারে বেতন, ফির পর ভ্যাট দেওয়াটা আমার জন্য বিরাট চাপ।'
নাম প্রকাশ না করে ম্যাপললিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের এক অভিভাবক বলেন, আমার দুটি বাচ্চা পড়ে এই স্কুলে। প্রতি মাসে শুধু ভ্যাট বাবদ ৮০০ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। সরকারের নিয়ম সবার জন্যই সমান হওয়া উচিত। সে ক্ষেত্রে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকেও ভ্যাট প্রত্যাহার করা উচিত।
সানিডেল স্কুলের আরেকজন অভিভাবক বলেন, 'আমার দুই বাচ্চার জন্য ভ্যাট বাবদ এক হাজার ৮০০ টাকা বেশি দিতে হয়। সরকারের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ব্যাপারেও ভাবা উচিত। বাচ্চাদের পড়ালেখার পেছনে এই ভ্যাট আসলেই একটি বোঝা।'
জানা যায়, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবরই উদাসীন। প্রতিবছর জুলাই মাসে ইংলিশ মিডিয়ামের সেশন শুরু হলে অভিভাবকদের চাপে মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে কয়েকটি সভা করে। এরপর সারা বছর চুপ। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে সম্প্রতি একটি পৃথক নীতিমালা তৈরি হলেও সে ব্যাপারে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি মন্ত্রণালয়।
কাগজে-কলমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি শাখা থাকলেও বাস্তবে এর কোনো অস্তিত্ব নেই। নানা কৌশলে বছর বছর বেতন ও নানা ধরনের ফি বৃদ্ধি যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোতে। অতিরিক্ত ফির চাপে চিঁড়ে চ্যাপ্টা অভিভাবকরা। এর ওপর সরকারের আরোপ করা এই ভ্যাট গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের আরেকজন অভিভাবক জাবেদ ফারুক এই প্রতিবেদককে বলেন, 'এমনিতেই স্কুলের বেতন বেশি। এরপর আবার ভ্যাট। আমরা খুবই খারাপ অবস্থায় আছি। সরকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করল। আর ইংলিশ মিডিয়ামে যারা পড়ে তারাও তো এ দেশেরই সন্তান। তাহলে তাদের ওপর থেকে কেন ভ্যাট প্রত্যাহার হবে না? যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সফলতা পেয়েছে তাই আমরাও সামনে আন্দোলনে যাব বলে ঠিক করেছি।'
সম্প্রতি ব্যানবেইসের করা এক জরিপে জানা যায়, দেশে এখন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের সংখ্যা ১৫৯টি। তাতে লেখাপড়া করছে ৬৪ হাজার ৫০৭ জন শিক্ষার্থী।-কালের কন্ঠ
১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে