মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৫, ০৬:৩৩:৩৪

ইতালীয় হত্যায় গ্রেপ্তার ৪, নেপথ্যে ‘বড় ভাই’!

ইতালীয় হত্যায় গ্রেপ্তার ৪, নেপথ্যে ‘বড় ভাই’!

নিউজ ডেস্ক : ঘটনার ২৮ দিন পর ইতালির নাগরিক সিজার তাবেলা হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের কথা জানাল পুলিশ। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। সিজার হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের কথা জানিয়ে গতকাল সোমবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, কথিত বড় ভাইয়ের লক্ষ্য ছিল বিদেশি নাগরিক খুন করে দেশকে চাপের মধ্যে ফেলা। তাঁকে খোঁজা হচ্ছে। তবে তার পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত রোববার রাজধানীর গুলশান ও বাড্ডায় অভিযান চালিয়ে ইতালির নাগরিক সিজার হত্যায় জড়িত অভিযোগে মো. রাসেল চৌধুরী ওরফে চাক্কি রাসেল ওরফে বিদ্যুৎ রাসেল (৩৫), মিনহাজুল আরেফিন রাসেল ওরফে ভাগনে রাসেল ওরফে কালা রাসেল (৪০), তামজিদ আহম্মেদ ওরফে রুবেল ওরফে মোবাইল রুবেল ওরফে শুটার রুবেল (৩৫) ও মো. শাখাওয়াত হোসেন ওরফে শরিফকে (৩৫) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গুলশান থানায় দায়ের করা সিজার তাবেলা হত্যা মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তাদের মধ্যে রাসেল চৌধুরীকে গুলশান, মিনহাজুল আরেফিনকে বাড্ডার সাতারকুল, তামজিদ ও শাখাওয়াতকে মধ্য বাড্ডা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় গুলশান ২-এর ৯০ নম্বর সড়কের গভর্নর হাউসের সীমানাপ্রাচীরের বাইরের ফুটপাতে সিজারকে (৫১) গুলি করে হত্যা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, গ্রেপ্তার তামজিদ, রাসেল চৌধুরী ও শাখাওয়াত হোসেন হত্যায় সরাসরি অংশ নেন। মিনহাজুলের তথ্য ও দেখানো মতো হত্যায় ব্যবহৃত এফজেডএস সাদা রঙের মোটরসাইকেলটি মধ্য বাড্ডায় শাখাওয়াতের বাসার গ্যারেজ থেকে জব্দ করা হয়। এ সময় শাখাওয়াতকে গ্রেপ্তার করা হয়। মিনহাজুল ও রাসেল চৌধুরী মাদকাসক্ত। বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে এর আগেও তাঁরা কারাভোগ করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা আছে। পুলিশ কমিশনার বলেন, তামজিদ দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও ঠান্ডা মাথার খুনি। তাঁর অপরাধের খতিয়ান পুলিশের কাছে আছে। শাখাওয়াত ইয়াবা ব্যবসায়ী ও অস্ত্র সরবরাহে যুক্ত। আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে অপরাধের ধরন, প্রকৃতি বিশ্লেষণ, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিশ্বস্ত গুপ্তচর নিয়োগ করা হয়। একই সঙ্গে খুনিদের প্রযুক্তি, ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসি) ফুটেজের সহায়তা নিয়ে নিশ্চিতভাবে শনাক্ত করা হয়েছে। মোটরসাইকেলের মালিক শাখাওয়াত জিজ্ঞাসাবাদে বলেন, মিনহাজুল একটি অপারেশনে যাওয়ার কথা বলে অনুরোধ করে তার মোটরসাইকেলটি নিয়ে যান। মিনহাজুলের সঙ্গে শাখাওয়াতের সুসম্পর্ক। রাতে আবার মিনহাজুল তাঁকে মোটরসাইকেলটি ফেরতও দেন। ডিএমপি কমিশনার আসামিদের বরাত দিয়ে হত্যাকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরেন। জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা বলেছেন, ২৮ সেপ্টেম্বর হত্যাকাণ্ডের আগে রাসেল চৌধুরী গুলশান ২-এর ৯০ নম্বর সড়কের পূর্ব দিকে উত্তর সিটি করপোরেশনের একটি আঞ্চলিক কার্যালয়ের অফিসের সামনে অপেক্ষা করেন। পরে মিনহাজুল ও তামজিদ মোটরসাইকেলে এসে রাসেল চৌধুরীর সঙ্গে একত্র হন। ৯০ নম্বর সড়ক ধরে পূর্ব দিক দিয়ে সিজারকে পশ্চিমে যেতে দেখেন রাসেল চৌধুরী ও মিনহাজুল এই বিদেশি নাগরিককে হত্যার জন্য তামজিদকে দেখিয়ে দেন। পরে তারা তিনজনে মোটরসাইকেলে এই বিদেশিকে অনুসরণ করে ৯০ ও ৮৩ নম্বর সড়কের সংযোগস্থলে মোটরসাইকেলটি থামান। তখন তামজিদ সিজারকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এতে সিজার মাটিতে শুয়ে পড়েন। তখন তামজিদ দৌড়ে দুজনের পেছনে মোটরসাইকেলে উঠে পালিয়ে যান। সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির কমিশনার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা বলেন, একজন বড় ভাই বিদেশিকে খুন করার জন্য তাঁদের ভাড়ায় নিয়োগ করেন। খুনের আগে তাদের অর্ধেক টাকা দেওয়া হয়। বাকি টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও আর দেওয়া হয়নি। পুলিশের তৎপরতার কারণে তারা পালিয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, তাদের কাছ থেকে পাওয়া সেই তথ্য যাচাই-বাছাই করে বড় ভাইকে শনাক্ত ও অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন, ওই বড় ভাইয়ের পেছনে মদদদাতা ও লাভবান হচ্ছেন কারা, সেই বিষয়গুলো নিবিড় তদন্ত করে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটি উদ্ধারে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। বড় ভাইকে গ্রেপ্তার করতে পারলে এর পেছনে কারা আছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে। ২৬ অক্টোবর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে