সোমবার, ১২ জুন, ২০১৭, ০৮:৩৯:৩৮

নিজের পায়ে দাঁড়াই তারপর বিয়ে

নিজের পায়ে দাঁড়াই তারপর বিয়ে

সায়েম সাবু: চারতলার মধ্য বারান্দা, সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠতেই নজর কাড়ল বৃষ্টি নামে এক কিশোরীর স্নিগ্ধ চেহারা। মাথাভর্তি চুল বেণি করা। সেই বেণি এসে পড়েছে মুখের ওপর। দূর থেকেই চোখে পড়ছে কানের দুলজোড়া।

ফ্যাক্টরির মাঝখানে প্রায় অন্ধকার বারান্দার কোন দিক থেকে আলো এসে তার দুলের রূপ বাড়িয়েছে তা বোঝা যাচ্ছিল না। লাল ওড়না কোমরে গুঁজে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেলাই করা শার্টগুলো উল্টে-পাল্টে দেখছে। সেগুলো পরে ওয়াশে (ধৌত) যাবে। তাই শেষ বেলায় দেখভালের দায়িত্ব পড়েছে বৃষ্টির ওপর।

সম্ভবত ঈদের বাজার বলে ঘরের ভেতরে জায়গা হয়নি ওর। বাইরেই একটি টুলের ওপর রাখা শার্টগুলোর ত্রুটি দেখছে এবং অন্যজন এসে সেগুলো নিয়ে যাচ্ছে।

কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই লজ্জায় মুখ ঢাকার চেষ্টা। হাতের ফাঁক দিয়ে নির্মল হাসি যেন তখন লুটে পড়ল। গ্রামের রূপ ওর বদনজুড়ে। ঘন কুচকুচে ভ্রূ যুগলেও লজ্জামিশ্রিত হাসি প্রকাশ পাচ্ছিল। ফটোগ্রাফার ছবি তুলতে চাইলে বাধা দিল না। তবে কিছুটা সংযত হলো সে।

বৃষ্টির বাড়ি মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুর উপজেলার নওপাড়ায়। বাবা মারা গেছেন বছর দশেক আগে, আর মা গত হয়েছেন আট মাস হয়েছে। বাবার মৃত্যুর পর জনম দুঃখী মায়ের হাত ধরে কেরানীগঞ্জে পাড়ি জমায় বৃষ্টি। তবে মাও বেশি দিন রইলেন না। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে বৃষ্টিই বড়। মায়ের মৃত্যুর পর ছোট বোন আর ভাই মামার বাড়িতে ঠাঁই পেলেও ওর আর জায়গা হয়নি সেখানে।

মায়ের সঙ্গে কাজ করা এক নারী শ্রমিকের পরিচয়ে শোরুমে কাজ করেছে কিছুদিন। এখনও কেরানীগঞ্জে ওই শ্রমিকের সঙ্গেই থাকে বৃষ্টি। শোরুমে মাসিক মাইনে পেত সাড়ে চার হাজার টাকা। কোনো এক কারণে শোরুমের চাকরি ছেড়ে দিতে হয়েছে। এরপর সপ্তাহ খানেক আগে সে যোগ দিয়েছে কেরানীগঞ্জের ফারুক গার্মেন্টসে। তবে কাজ শিখছে বলে এখনও মাইনে ঠিক হয়নি।

শৈশবে বাবা আর তারুণ্যে মাকে হারিয়ে দুঃখের সাগরে ভাসলেও হাল ছাড়ার লোক নন বৃষ্টি। গত মাসে ১৯ বছরে পা রেখেছে। বিয়ের প্রস্তাব এসেছে আরও চার বছর আগে থেকেই। মামারা চাপ দিলেও বয়স হয়নি বলে বিয়ে দেননি মা।

মায়ের সেই ‘সচেতনতা’ আগলে রেখেছে বৃষ্টি। জাগো নিউজকে বলেন, ‘মামারা বিয়ে দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। যাদের সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাব আসছে, আমার পছন্দ না। তাই চলে এসেছি। দুই হাত থাকতে ভয় কিসের? কাজ জানলে অভাব থাকবে না। আগে নিজের পায়ে দাঁড়াই, তবেই তো বিয়ে। বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে বলে ঈদে মামার বাড়িতেও যাব না। কেরানীগঞ্জেই ঈদ করব।-জাগোনিউজ
১২ জুন ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/আ শি/এএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে