বুধবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৫, ০৩:৩৮:২৩

জাপাতে টাকার বিনিময়ে পকেট কমিটি

জাপাতে টাকার বিনিময়ে পকেট কমিটি

সাগর আনোয়ার : জানুয়ারিতে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সম্মেলন। সম্মেলনের আগেই সারাদেশে চলছে পার্টির জেলা সম্মেলন। আর এই জেলা সম্মেলনকে ঘিরে নিজস্ব লোক ও টাকার বিনিময়ে পকেট কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে জাতীয় পার্টির (জাপা-র) শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে। জেলা কমিটির পদবঞ্চিত নেতাদের অভিযোগ, জাতীয় পার্টিকে সংগঠিত করার পরিবর্তে বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে জেলা সম্মেলন করা হচ্ছে। জেলাগুলোতে জাপার ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের একটি অংশের আস্থাভাজনদের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। অধিকাংশ জেলার সম্মেলনগুলোও নামকাওয়াস্তে হলেও এই কমিটি নিয়ে চাপা অসন্তোষ বিরাজ করছে সংগঠনগুলোতে। ২০১৩ সালের ৩০ মার্চ চট্টগ্রাম মহানগর জাপার ১৭ বছর পর অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে তিন বছরের জন্য সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠ। কিন্তু জাপার মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু নির্বাচিত হওয়ার পর কমিটি ভেঙে দেন। পরে চলতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করেন তিনি। নতুন কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য মেহজাবিন মোর্শেদ। এ বিষয়ে সোলায়মান আলম শেঠ সোমবার প্রতিবেদককে টেলিফোনে বলেন, চট্টগ্রামের ইতিহাসে সবচেয়ে জাঁকজমকভাবে আমাদের পার্টির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু কমিটির ১ বছর যেতে না যেতেই বাবলুর সঙ্গে দ্বন্দ্ব লাগল। অনেক গণ্ডগোল হল। এরপর আমাকে বহিষ্কার করা হল। কমিটি স্থগিতও করা হল। তিনি আরও বলেন, স্যার (হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ) সব জানেন। আস্তে আস্তে পার্টিকে ধ্বংস করা হচ্ছে। এরশাদ সাহেব পার্টির পিতা। পিতার সামনে কেউ যদি সন্তানকে হত্যা করে আর পিতা যদি কিছু না করেন, তাহলে আমরা কী করব? সোলায়মান শেঠের অভিযোগ, টাকার বিনিময়ে মেহজাবিনকে চট্টগ্রাম মহানগরের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের সভাপতি বানানো হয়েছে। যার একজন লোকও নেই। আমি কিছু বলিনি। শুনেছি, সম্প্রতি জাপা ও যুব সংহতির কমিটি গঠনে ১০-১৫ লাখ টাকাও নিয়েছেন এ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম, ফয়সাল চিশতী ও মেজর খালেদ গং। এ বছরের ৮ জুন বরিশাল মহানগর জাপার সম্মেলনেও দলের একটি বড় অংশকে বাদ দিয়ে সম্মেলন করে জাপার শীর্ষ নেতৃত্ব। সেখানে এরশাদের মধ্যস্থতায় সম্মেলন শেষ করে সবাইকে নিয়ে কমিটি গঠনের কথা থাকলেও ঢাকায় ফিরেই নতুন সভাপতির নাম ঘোষণা করা হয়। নতুন কমিটির ঘোষিত সভাপতি মুরতজা আবেদিন। তবে এখন পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক ও অন্যান্য নেতাদের নাম ঘোষণা হয়নি। এদিকে জাতীয় পার্টির ওই নতুন সভাপতিকে এখনো মেনে নেয়নি মহানগর জাপার আগের কমিটির নেতারা। বরিশাল মহানগর জাপার সদ্য সাবেক সভাপতি মহসীনুল আলম হাবুল এই প্রতিবেদককে বলেন, আমিই বরিশাল মহানগর জাপার সভাপতি। আর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোরশেদ চুন্নু। জাপার বর্তমান মহাসচিব ও সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব একটি ক্ষুদ্র অংশকে নিয়ে সম্মেলন করেছে। কিন্তু সেই সম্মেলন নামমাত্র। সম্মেলনে তারা ওয়াদা করেছিলেন সম্মেলন হওয়ার পর সবাইকে নিয়ে কমিটি করা হবে, কিন্তু তারা ওয়াদার বরখেলাপ করেছে। তিনি আরও বলেন, শুনেছি টাকার বিনিময়েও নাকি পদ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। জানি না, কী হচ্ছে। একই ঘটনার অভিযোগ পাওয়া গেছে রাজশাহী মহানগর জাপার কমিটি গঠনের ক্ষেত্রেও। গত বছর ১ সেপ্টেম্বর রাজশাহী মহানগর জাপার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলন গণ্ডগোল হলে এরশাদ সম্মেলনস্থল ত্যাগও করেন। পরে ঢাকা থেকে কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া রাজশাহী জেলার তিন বছরের জন্য নির্বাচিত সভাপতি হাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দীন বাচ্চুকে বাদ দিয়ে হঠাৎ করেই জেলা জাপার নতুন কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে। আর এর নেপথ্যে বড় অংকের টাকার লেনদেনের অভিযোগও করেছেন সাবেক নেতারা। রাজশাহী জেলা জাপার সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দীন বাচ্চু প্রতিবেদককে বলেন, রাজশাহী জাপার দুরবস্থা দেখে আমাদের কষ্ট হয়। এখন রাজশাহীতে জাপা বলতে কিছু নেই। বাবলু তার হাতকে শক্তিশালী করতেই ও আগামীতে পার্টিকে ঘিরে তার অবস্থান শক্তিশালী করতে তিনি ব্যক্তিগত নেতা তৈরীর এই প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। শুনেছি, এখন জাপা নিয়ন্ত্রণ করে রেজাউল ইসলাম। আমাদের প্রিয় স্যারকে এরা জিম্মি করে রেখেছেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শুধু চট্টগ্রাম মহানগর কিংবা রাজশাহীতেই নয়, একই অভিযোগ রয়েছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা, যশোর ও খুলনা জেলা জাপার কমিটি নিয়েও। টাকার বিনিময়ে ও ত্যাগীদের বাদ দিয়ে নিজস্ব লোকদের দিয়ে কমিটি গঠনের অভিযোগের বিষয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের এই প্রতিবেদককে বলেন, আমার কাছেও এমন অভিযোগ এসেছে। কোনো কোনো অভিযোগ সত্য বলেও মনে হচ্ছে। এখন তো আর পার্টির গঠনতন্ত্র মানা হচ্ছে না। যেভাবে কাউন্সিল করা হচ্ছে এমন করে কাউন্সিলর হয় না। অতীতে কখনই এমন প্রশ্ন আসত না। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছোটভাই জাপার প্রভাবশালী এই নেতা আরও বলেন, আগে কাউন্সিলে ইলেকশনের মাধ্যমে কমিটি করা হতো। এখন তো সিলেকশন হচ্ছে। পার্টির বর্তমান নেতৃত্ব নিয়ে এখন জনমনে প্রশ্ন উঠছে। বর্তমান কিছু নেতার নেতৃত্বে জাপাকে স্বাভাবিক পার্টি মনে করছে না জনগণ। যারা নতুন কমিটি করছে এ-সব কমিটি সো কলড কাউন্সিলের মাধ্যমে হচ্ছে। এর মাধ্যমে পার্টি শক্তিশালী হচ্ছে, নাকি শক্তিহীন হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তিনি আরও বলেন, এ-সব কাউন্সিল ও কমিটির মাধ্যমে পার্টিতে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব বাড়ছে। পার্টির চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে। তা ছাড়া এখন তো পার্টি সেভাবে চলছে না। এখন তো পার্টির সঙ্গে জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। কারা-কী উদ্দেশ্যে পার্টিকে ব্যবহার করছে সেটাই এখন দেখার বিষয়। অভিযোগের বিষয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু প্রতিবেদককে বলেন, এ-সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। সবার মতামতের ভিত্তিকে কাউন্সিলরদের ভোটে সম্মেলনের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করা হচ্ছে। যারা এ-সব অভিযোগ করছে তাদের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।-দ্য রিপোর্ট ২৮ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে