নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্টজয়ী মুসা ইব্রাহীম ও তার সহআরোহীদের নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার ভোর সোয়া ছয়টার দিকে দ্বিতীয়বারের মতো হেলিকপ্টার পাঠিয়ে ওশেনিয়ার সর্বোচ্চ পর্বত থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। মুসার দুই সহআরোহী হলেন, ভারতের এভারেস্টজয়ী পর্বতারোহী সত্যরূপ সিদ্ধান্ত ও নন্দিতা চন্দ্রশেখর। মুসা ইব্রাহীমের বোন নূর আয়েশা এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া ভাল থাকায় হেলিকপ্টারের মাধ্যমে তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। রোববার উদ্ধার করতে যাওয়া হেলিকপ্টারটির সমন্বয়কের দায়িত্ব পালনকারী ফাঙ্কি এদিনও সমন্বয় করেন।’ পরে অবশ্য মুসা ইব্রাহীম নিজেও ফেসবুক স্ট্যাটাসে উদ্ধার হওয়ার খবর জানান। তিনি লেখেন, ‘এই মাত্র টিমিকা এয়ারপোর্টে পৌঁছলাম। আল্লাহর রহমতে আমরা নিরাপদে আছি। ইনশাআল্লাহ খুব শিগগিরই দেখা হবে।’
এছাড়া পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলমও ভোরে তার ফেসবুকে মুসা ইব্রাহীমকে সফলভাবে উদ্ধারের একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি হেলিকপ্টার থেকে মুসা ও তার সঙ্গীদের পাঠানো বার্তা দিয়েছেন। তারা লিখেছেন, ‘অনেক গল্প হয়তো বলা হবে না। এগুলোর কোনো হদিসও থাকবে না। কিন্তু আমাদের হৃদয়ে চিরকাল তা রয়ে যাবে। কারস্টেনজ পর্বতের রোমাঞ্চকর গল্প।’
মুসা ও তার সহযোগীদের বার্তার পর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লিখেছেন, ‘এইবার আমি ঘুমাতে গেলাম। তাদের আর মিনিট দশেক লাগবে সমতলে পৌঁছাতে। সবাই ভালো থাকুন।’ বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত চার দিন ধরে মুসা ইব্রাহীমরা পাপুয়া নিউগিনির মাউন্ট কারস্টেনজের বেস ক্যাম্পে আটকা পড়েছিলেন।
গত ১৭ জুন সন্ধ্যা থেকে জানা যায়, মুসা ইব্রাহীম দুই সহআরোহীকে নিয়ে আটকে পড়েছেন। রোববার সন্ধ্যায় মুসার সহযাত্রী ভারতীয় নাগরিক সত্যরূপ সিদ্ধান্তের স্যাটেলাইট ফোন থেকে পাওয়া বার্তা বলছিল, তারা পরিত্যক্ত কিছু খাবারের সন্ধান পেয়েছেন। সেগুলোই তাদের অমৃতসমান।
এর আগে মুসাদের উদ্ধারের ব্যাপারে ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আজমল কবির গণমাধ্যমকে জানান, মুসা ইব্রাহীম এবং তার সহআরোহীরা আটকা পড়লেও সুস্থ আছেন। স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। সাত মহাদেশের সর্বোচ্চ সাত পর্বতশৃঙ্গ অভিযানের অংশ হিসেবে মুসা ইব্রাহীম অস্ট্রেলিয়া ও ওশেনিয়া মহাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কারস্টেনজ পিরামিড অভিযানে অংশ নেন।
মুসার এই অভিযানের পৃষ্ঠপোষক নীলসাগর গ্রুপ। ৪ হাজার ৪৮৪ মিটার (১৬ হাজার ২৩ ফুট) উচ্চতার এই পর্বতশৃঙ্গ অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে, ‘নীলসাগর গ্রুপ মাউন্ট কারস্টেনজ পিরামিড অভিযান’। অভিযানের আয়োজন করেছে এভারেস্ট একাডেমি ও নর্থ আলপাইন ক্লাব বাংলাদেশ।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪ হাজার ২৫৭ মিটার উচ্চতায় কারস্টেনজের পিরামিডের বেইজ ক্যাম্পে আটকা পড়েন পর্বাতোরোহী মুসা ইব্রাহীম। গত ২৯ মে ইন্দোনেশিয়ার বালি হয়ে পাপুয়ার নিউগিনির উদ্দেশে যাত্রা করেন মুসা ইব্রাহীম। বালিতে তার সঙ্গে যোগ দেন সত্যরূপ ও নন্দিতা। পরে পাপুয়ার নাবির থেকে শুরু হয় মূল অভিযান।
২০১০ সালের ২৩ মে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে মাউন্টি এভারেস্ট জয় করেন মুসা ইব্রাহীম। এরপর ২০১১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আফ্রিকার সর্বোচ্চ মাউন্ট কিলিমানজারো, ২০১৩ সালের ২৬ জুন ইউরোপের সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট এলব্রুস, ২০১৪ সালের ২৩ জুন উত্তর আমেরিকার সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট ডেনালি জয় করেন তিনি।
২০১২ সালের ফেব্রয়ারিতে দক্ষিণ আমেরিকার সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট অ্যাকঙ্কাগুয়া অভিযানে আবহাওয়া খারাপ থাকায় ২১ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে ফিরতে বাধ্য হয়েছিলেন মুসা।
এমটিনিউজ২৪/এম.জে