বুধবার, ২১ জুন, ২০১৭, ০২:০৪:২৯

ভোটের মিশনে কোমর বেঁধে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ

ভোটের মিশনে কোমর বেঁধে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি : ঈদের পর অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন, নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করা এবং সরকারের উন্নয়নগুলো জনগণের কাছে তুলে ধরতে কোমর বেঁধে মাঠে নামছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি বর্তমান সংসদ সদস্যরা নিজ এলাকায় ‘জনতার মুখোমুখি’ হয়ে জনগণের বিভিন্ন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেবেন।

কোনো কোনো এমপি জনগণের কাছে গিয়ে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন তা জানতে চাইবেন এবং ভোটারদের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করবেন। দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তৃণমূলে নিয়মিত গণসংযোগ করবেন। উঠান-বৈঠকের মাধ্যমে নৌকা মার্কায় ভোট চাইবেন তারা। জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে জেলা সফর শুরু হবে। আগস্ট মাসে থাকবে মাসব্যাপী শোকের সিরিজ কর্মসূচি।

সেপ্টেম্বর থেকে পুরোদমে শুরু হবে নতুন সদস্য সংগ্রহ, সদস্যপদ নবায়নের কাজ। এর পাশাপাশি প্রশিক্ষণ, জেলা নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক মতবিনিময়সহ বিভিন্ন দিবসভিত্তিক কর্মসূচি পালন করা হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের মিশন নিয়ে মাঠে থাকবেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সহায়ক সরকারের দাবি এবং দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ওপর হামলার জের ধরে বিএনপি ঈদের পর জনমত সৃষ্টিতে রাজপথে নামতে পারে। বিএনপি মাঠে নামলেও তাতে জনগণ সাড়া দেবে না বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।

কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বিগত দিনে নির্বাচন বানচাল করার নামে বিএনপির জ্বালাও-পোড়াও, আগুনসন্ত্রাস মানুষ ভুলে যায়নি। এ ছাড়া তারা দফায় দফায় রাজপথে নামলেও আন্দোলন জমাতে পারেনি। ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে বিএনপির আন্দোলন মাঠে মারা গেছে। ঈদের পর বিএনপি যাতে নতুন ইস্যু তৈরি করতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকবে আওয়ামী লীগ।

জানা গেছে, ঈদের পর জুলাই মাসে কেন্দ্রীয় নেতারা জেলায় জেলায় সফর করবেন। এতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন, যেসব এমপির সঙ্গে জেলা-উপজেলা নেতাদের দূরত্ব রয়েছে, সেসব সমস্যা নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ৭৮ জেলার মধ্যে প্রায় অর্ধশত জেলায় কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে। এমপিদের সঙ্গে নেতাদের, নেতাদের সঙ্গে কর্মীদের দূরত্ব ক্রমেই বাড়ছে। নির্বাচনের দেড় বছর বাকি থাকলেও এখনই এ কোন্দল নিরসন চান দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘তৃণমূলে নানা সমস্যা রয়েছে। নেতা-কর্মীদের মধ্যে চাওয়া-পাওয়া, ক্ষোভ-হতাশা রয়েছে। সেগুলো নিরসন করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী যেন আগামীতে ক্ষমতায় আসতে না পারে সে জন্য জনগণকে সচেতন করব।’

তিনি বলেন, মূলত ঈদের পর দলের কর্মকাণ্ড জোরদার করা হবে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘আগামী ৯ জুলাই খুলনা বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভা থেকেই শুরু হবে গ্রামগঞ্জে উঠান-বৈঠক। এতে করে সরকারের উন্নয়নগুলো যেমন তুলে ধরব, তেমনি নির্বাচন সামনে রেখে মানুষের মনোভাবও বোঝার চেষ্টা করব।’ এ জন্য সাবেক ছাত্রনেতাদের বিভিন্নভাবে কাজে লাগানো হবে বলেও জানান তিনি।

দলীয় সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলের এমপিদের জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলীয় প্রধানের কড়া নির্দেশের পর এমপিরা এলাকামুখী হওয়া শুরু করেছেন। কেউ কেউ গণসংযোগ করছেন, আবার কেউ কেউ এলাকাভিত্তিক ‘জনতার মুখোমুখি’ অনুষ্ঠান করছেন।

ঈদের পর এ কাজ আরও জোরদার করবেন এমপিরা। এ কারণে এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেছেন তারা। এ জন্য এমপিরা কেউ কেউ ঈদের পর ‘জনতার মুখোমুখি’ অনুষ্ঠান করার কর্মসূচি রেখেছেন। দলের একাধিক নীতিনির্ধারক জানিয়েছেন, জুলাই মাসে দলের সদস্য সংগ্রহ ও সদস্যপদ নবায়নের কাজ করা হবে। আগস্ট মাস শোকের কর্মসূচি ছাড়া অন্য কোনো কর্মসূচি রাখা হবে না। সেপ্টেম্বর থেকে পুরোদমে চলবে সদস্য সংগ্রহ অভিযান।

জেলায় জেলায় জনসভা, কর্মিসভা, বর্ধিত সভা, মতবিনিময় করা হবে। এ ছাড়া ২০২১ সালের মধ্যে মানুষ বাংলাদেশকে কোন অবস্থায় দেখতে চায় এবং বিগত দিনে বিএনপি-জামায়াত সরকারের তুলনামূলক উন্নয়নের চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে। এ জন্য দলের প্রচার ও প্রকাশনা কমিটির পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে জেলা-উপজেলা নেতাদের হাতে বুকলেট তুলে দেওয়া হয়েছে।

এগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরার পাশাপাশি সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড করার চিন্তাভাবনা করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। দলীয় সূত্রমতে, শোকের মাস আগস্টে আওয়ামী লীগ মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করলেও সম্মেলন ও কমিটি গঠনের কাজ করে না।

৭ আগস্ট কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুবার্ষিকী, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে হত্যা দিবস, ২৭ আগস্ট বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া ১ থেকে ৩১ আগস্ট বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। আওয়ামী লীগ ও দলের সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। রাজধানীসহ প্রতিটি জেলা-উপজেলায় অনুরূপ কমসূচি পালন করা হবে।

কাজে লাগানো হচ্ছে সাবেক ছাত্রনেতাদের : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সাবেক ছাত্রনেতাদের কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে দলের কোন্দল ও ভোটারদের মনোভাব জানতে এবং উন্নয়ন প্রচার-প্রচারণায় যুক্ত হবেন তারা। ঈদের পরই তাদের পুরোদমে মাঠে নামানো হচ্ছে।

গতকাল বিকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে খুলনা বিভাগের সাবেক ছাত্রনেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ও কেন্দ্রীয় সদস্য এস এম কামাল হোসেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আগামী ৯ জুলাই খুলনা বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় সাবেক ছাত্রনেতারা নিজ নিজ উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলে আলাদা একটি রিপোর্ট দেবেন।

বৈঠকে সাবেক ও বর্তমান ছাত্রনেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অসিত বরণ বিশ্বাস, আ হ ম তারেক উদ্দীন, নাসিমুল রুপক, জয়দেব নন্দী, মোস্তাক আহমেদ, শারমীন সুলতানা লিলি, তরিকুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, চৈতালি হালদার, শেখ ফয়সল আমীন, রেজাউল ইসলাম রেজা, শাহীন আহমেদ, মোতাহার হোসেন পিন্স প্রমুখ। বিডি প্রতিদিন

জুন, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে