নিউজ ডেস্ক : ফুটবলে কোচ বা ম্যানেজারই শেষ কথা। মাঠের বাইরে থেকে তিনিই সিদ্ধান্ত নেন। পরিবর্ত ফুটবলার থেকে কোন স্ট্র্যাটেজি নেওয়া হবে, তা ঠিক করেন কোচই। কিন্তু ক্রিকেটে কোচের ভূমিকা সীমাবদ্ধ। মাঠের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়কই।
তবে মাঠের বাইরে কোচ-অধিনায়ক মিলেই স্ট্র্যাটেজি ঠিক করেন। দুজনের সম্পর্ক সুস্থ না হলে মাঠে তার প্রভাব পড়ে। তাই প্রশ্ন উঠছে, কুম্বলে-বিরাটের সম্পর্কের প্রভাব কী তাহলে ক্রিকেটে পড়েছে?
এমনটা মনে হওয়ার কারণ কী? চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে থেকে কোহলির সঙ্গে কুম্বলের সম্পর্ক অবনতি হতে শুরু করে। দুজনে কথা বলাও বন্ধ করে দিয়েছিলেন। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্র্যাকটিসের সময়ও লক্ষ্য করা গিয়েছিল, কুম্বলে ব্যাটসম্যানদের নেটের ধারে কাছে যাচ্ছেন না। কোহলির সঙ্গেও দূরত্ব বজায় রাখছিলেন।
কোহলিদের বক্তব্য, কুম্বলে শক্ত কোচ। কুম্বলে চিঠিতে জানিয়েছেন, তিনি ক্রিকেটারদের আয়না দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন। মানে কোহলিদের খেলার ভুল ধরেছিলেন। সেটাই কী না পছন্দ হল বিরাটের! শোনা যাচ্ছে, ভারতীয় দলের অন্তত ৬ জন কুম্বলের পাশে ছিলেন। কোন ৬ জন তা জানা যায়নি।
কোচ-অধিনায়কের সম্পর্ক মধুর না হলে খেলায় তার প্রভাব ফেলে। ভারতীয়দের খেলাতেও স্ট্র্যাটেজির অভাব চোখে পড়েছে। কী রকম? শ্রীলঙ্কা ম্যাচের পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে নামানো হয়েছিল অশ্বিনকে। দক্ষিণ আফ্রিকানরা স্পিন খেলতে পারেন না, সেজন্য এই সিদ্ধান্ত সঠিক। কিন্তু বাংলাদেশ বা পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা স্পিন ভাল খেলেন, সেখানে অশ্বিনকে নেওয়া কতখানি সঠিক সিদ্ধান্ত?
সেই জায়গায় কেন সামি বা উমেশকে খেলানো হল না। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ফাইনালে চোখে পড়েছে স্ট্র্যাটেজির অভাব। প্রথম থেকেই পায়ে পায়ে বল করে গিয়েছেন ভারতীয় বোলাররা। ভারতের নেতিবাচক বোলিংয়ের পাল্টা পাকিস্তানের মোহাম্মদ আমির ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের বল খেলতে বাধ্য করেছেন।
কোহলিকে দেখা গিয়েছে প্রায় প্রতিটা ওভারের শেষে ছুটে গিয়েছেন ধোনির দিকে। কেন আগে থেকে স্ট্র্যাটেজি ছিল না? ফাইনাল ম্যাচে একটা সময়ে হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন অধিনায়ক। অথচ দলে যুবরাজ বল করতে পারেন। আগেরদিন সফল হয়েছেন কেদার যাদব। আইপিএল-এ হ্যাটট্রিক করেছিলেন রোহিত শর্মা। অধিনায়ক নিজেও বল করতে পারেন। কেন অন্যরকম কিছু ভাবা হল না? ৩৭ তম ওভারে আনা হল কেদারকে। জাডেজা-অশ্বিন মার খাওয়ার পরেও বোলার পরিবর্তন হল না। কেন ব্যাটসম্যানরা এভাবে আত্মসমর্পণ করলেন আমিরের কাছে?
এখানেও স্ট্র্যাটেজির অভাব চোখে পড়েছে। পাকিস্তানের কোন বোলারকে কীভাবে খেলা হবে, তা নিয়ে কৌশলই ছিল না ভারতের কাছে। খেলা চলাকালীন কুম্বলেকে শুকনো মুখে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে। কুম্বলের চিঠি থেকেও পরিস্কার, তার কথাই শোনা হয়নি। কোহলি নিজেকেই ‘সুপ্রিম বস’ ভেবে ফেলেছেন। প্ল্যান এ না খাটলে ভারতের কাছে যে প্ল্যান বি ছিল না, তা গোটা ম্যাচটা দেখলে বাচ্চা ছেলেও বুঝবে। ফিল্ডিং সাজানোতেও কোহলির ভুল খালি চোখে ধরা পড়েছে।
কোচের সঙ্গে ঝামেলা করে কী দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিলেন বিরাট কোহলি? এই প্রশ্ন কিন্তু বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। কুম্বলের বক্তব্য জানা গিয়েছে। এবার কোহলি মুখ খুললেই গোটা ব্যাপারটা পরিস্কার হবে। ইতিমধ্যে কুম্বলের পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রাক্তন ক্রিকেটাররা।
দলের স্বার্থপরতাও সামনে এসেছে। টিম ইন্ডিয়ায় যে এখন এককাট্টা হয়ে লড়ার কেউ নেই, সেটাও বোঝা গিয়েছে। হার্দিক পান্ডেকে রান আউট করালেন জাডেজা। অথচ এরকম পরিস্থিতিতে সেরা ব্যাটসম্যানকে জায়গা ছেড়ে দেওয়াই কর্তব্য। সেটা রবীন্দ্র জাডেজা করেননি।
কোটলায় অনিল কুম্বলে দশ উইকেট নিয়ে রেকর্ড করেছিলেন। সেই ম্যাচে অনিলের ৮ উইকেট পাওয়ার পর থেকে বাইরে বাইরে বল করছিলেন শ্রীনাথ। তিনি চেয়েছিলেন, অনিল যাতে রেকর্ডটা গড়তে পারেন। কিন্তু এখন ভারতীয় ক্রিকেটে এটা কেউ ভাবতেও পারবে না। -ইন্ডিয়া.কম এর প্রতিবেদন।
জুন, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এসএস