বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৫, ১২:২৪:১৩

রিয়াদ হত্যার ভিডিও ফুটেজ পুলিশের হাতে

রিয়াদ হত্যার ভিডিও ফুটেজ পুলিশের হাতে

আমানুর রহমান রনি : মতিঝিলের ঘরোয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের কর্মচারী রিয়াদ (১৭) হত্যার ভিডিও ফুটেজ এখন ওয়ারী থানা পুলিশের কাছে। প্রজন্ম লীগের নেতাকর্মীরা এই ফুটেজ জমা দিয়েছেন। ভিডিও ফুটেজটি দেখে হোটেলের মালিক আরিফুল ইসলাম সোহেলসহ ছয়জনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। ওয়ারী থানা ও স্থানীয় সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগের ঢাকা মহানগরের সভাপতি মো. আবু হানিফ সেতু প্রতিবেদককে বলেন, রিয়াদকে ৭৬, স্বামীবাগের যে নয়তলা নির্মাণাধীন ভবনে হত্যা করা হয়, সেটি হোটেল মালিক আরিফুল ইসলাম সোহেলের চাচা শওকতের। ভবনটির নির্মাণ কাজ চলছে। নির্মাণাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলার পেছনের অংশে টিন দিয়ে কক্ষ বানিয়ে সেখানে হোটেলের কর্মচারীদের থাকার ব্যবস্থা করেছেন সোহেল। সামনের অংশে প্রজন্ম লীগের একটি অফিস রয়েছে। সেখানে ঢাকা মহানগরের সভাপতি আবু হানিফ সেতু ও তার কর্মীরা নিয়মিত বসেন। ওই অফিসটির নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা বসিয়েছেন প্রজন্ম লীগের নেতাকর্মীরা। বুধবার সকালেই সেই ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পুলিশ নিয়ে গেছে। বুধবার বিকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, স্বামীবাগের মিতালী স্কুলের পাশেই ৭৬ নম্বর নির্মাণাধীন নয় তলা ভবনটি। সেখানে গিয়েই এই প্রতিবেদকের সঙ্গে প্রজন্ম লীগের ঢাকা মহানগরের সভাপতি মো. আবু হানিফ সেতুর সঙ্গে দেখা হয়। তিনি ঘটনার বর্ণনা দিতে-দিতে হত্যাকাণ্ডের স্থানে নিয়ে যায়। দ্বিতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায়, টিন দিয়ে তৈরি করা দুটি কক্ষ। প্রথম কক্ষটি দিয়েই দ্বিতীয় কক্ষটিতে প্রবেশ করতে হয়। দ্বিতীয় কক্ষে কর্মচারীদের এলোমেলো কাপড়, বিছানা এবং একটি কাঠের তৈরি চৌকি কাত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া দেয়ালে তাজা রক্তের ছোপ ছোপ দাগও ছিল। এই বাড়িতেই রিয়াদকে গুলি করে হত্যা করা হয়, ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মো. আবু হানিফ সেতু বলেন, রাত ১২ টা ৪৪ মিনিটের দিকে টিকাটুলির দিক দিয়ে একটি কালোপাজেরো গাড়ি এসে ভবনের সামনে দাঁড়ায়। এরপর গাড়ি থেকে সোহেলসহ ছয় জন নামে। এরপর গাড়িটি ভবনটির ফটক ছেড়ে মিতালী স্কুলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে নেমে সোহেল একা ভবনের দ্বিতীয় তলায় যায়। অন্য কয়েকজন যুবক গাড়ির সামনেই দাঁড়িয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পর সোহেল আবার নিচে নেমে আসে। সাদা গেঞ্জি পড়া এক যুবকের কোমর থেকে সিলভার রংয়ের একটি বস্তু নিয়ে সে আবার ওপরের দিকে ওঠে। এ সময় তার সঙ্গে অন্য যুবকরাও ওপরে ওঠে। রাত ১ টা ৭ মিনিটের দিকে রিয়াদকে চ্যাংদোলা করে চার জন যুবক স্কুলের সামনে রাখা পাজেরো গাড়িটিতে তোলে। এরপর তারা গোপীবাগের দিকে চলে যায়। এ সময় হোটেলের ম্যানেজার শফিকুল ইসলামও তার সঙ্গে ছিল। এরপর রিয়াদের খালাতো ভাই মাইনউদ্দিন তাকে বিষয়টি জানালে সে ওয়ারী থানার এসআই আব্দুল খালেককে মোবাইলে ফোন করে ঘটনাটি তিনি জানায়। সেতু বলেন, রিয়াদকে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর ম্যানেজার শফিকুলের মোবাইলে ফোন দেয় হোটেল মালিক সোহেল। সে আমার সঙ্গে কথা বলতে চায়। আমি রিয়াদের কথা জানতে চাইলে সোহেল আমাকে বলে, তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রিয়াদ এখন ঘুমাচ্ছে। এরপর পুলিশ এসে ম্যানেজার শফিকুল ও নিহত রিয়াদের খালাতো ভাই মাইন উদ্দিনকে থানায় নিয়ে যায়। তবে থানা পুলিশকে কিছুই জানাননি ম্যানেজার। সেতু আরও বলেন, সকালের দিকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে আমার কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে গেছেন। সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ তাতে রয়েছে। গত পাঁচ বছর ধরে তিনি ওই ভবনটির দ্বিতীয় তলায় অফিস নিয়ে আছেন বলেও জানান সেতু। এর আগে তিনি সুত্রাপুর থানার ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ভবনটির নবম তলায় তাকে একটি ফ্ল্যাট দেওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে, ভবনের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তারক্ষী ইসমাইল হোসেন এই প্রতিবেদককে বলেন, ১০/১২ দিন আগে আমি এখানে কাজ পেয়েছি। দ্বিতীয় তলায় অনেক ছেলেপেলে থাকে। আমি তাদের সবাইকে চিনি না। নিহত রিয়াদের বাবার নাম মফিজ উদ্দিন। গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থানার হাতিল এলাকায়। সে গত দুই বছর ধরে ঘরোয়া হোটেলে কাজ করত। তার খালাতো ভাই মাইন উদ্দিনও সেখানে কাজ করে। তারা এক সঙ্গে স্বামীবাগের ওই বাড়িটিতে থাকত। মাইন উদ্দিনের সামনেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। এদিকে, অন্য কর্মচারীরা পুলিশকে জানিয়েছে, ওই ভবন থেকে রিয়াদকে নিয়ে আসার পর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে এসে একটি সিএনজিতে করে তাকে জসীম ও রাজু নামে অন্য দুই কর্মচারীকে দিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতালে গিয়ে তারা পুলিশকে জানায়, শাপলা চত্বরে তারা ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছে। সোহেল তাদের এই কথা শিখিয়ে দিয়েছিল। ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ বক্সের ইনচার্জ মোজাম্মেল হক প্রতিবেদককে জানান, রাতে জসীম ও রাজু তাদের জানান তারা সিএনজি যোগে শান্তিনগর তাদের মালিক সোহেলের বাসায় টাকা নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় শাপলা চত্বরে কয়েক জন যুবক তাদের সিএনজি থামাতে বলে। তারা সিএনজি না থামালে ছিনতাইকারীরা গুলি করে। এতে রিয়াদ আহত হয়। এরপর তাদের আর পাওয়া যায়নি। নিহতের ভাই রিপন অভিযোগ করেন, এক কর্মচারীর একটি মোবাইল ফোন এবং ১৫ শ টাকা চুরি হওয়ার কারণে আমার ভাইকে সোহেল হত্যা করেছে। সে আমাকেও হত্যা করতে চেয়েছিল। এই ঘটনায় ওয়ারী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহতের ভাই রিপন। মামলায় ঘরোয়া হোটেলের মালিক, ম্যানেজার শফিকুল ইসলামসহ আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। ওয়ারী থানার এসআই আব্দুল খালেক এই প্রতিবেদককে জানান, ইতোমধ্যে দুজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। আরও ২০/২২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। সোহেলের শান্তিনগরের বাসায় পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। তবে, তাকে সেখানে পাওয়া যায়নি। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি। এদিকে, মতিঝিলের ঘরোয়া হোটেলের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, হোটেলটি বন্ধ রয়েছে। সেখানে কয়েক কর্মচারী দাঁড়িয়ে আছেন। তবে তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে, তারা কথা বলতে রাজি হয়নি।-বাংলা ট্রিবিউন ২৯ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে