বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৫, ১২:৪৩:১১

যুব সংগঠনগুলোর বয়সের সীমা নেই

যুব সংগঠনগুলোর বয়সের সীমা নেই

আমানউল্লাহ আমান : একটি নির্দিষ্ট বয়সী জনগোষ্ঠীকে যুবক বলা হলেও বয়সের সীমা নেই দেশের কোনো যুব সংগঠনের। সংগঠনগুলোর ভাষ্য মতে, সৃষ্টিশীল মানুষই যুবক। বয়সের সীমায় যৌবনকে বাঁধা যায় না। যুব সংগঠন জাতীয় রাজনীতিতে ভূমিকার জন্য প্রয়োজন পরিপক্ক নেতৃত্ব। সেক্ষেত্রে বয়সের ধরাবাঁধা নিয়ম মানা সম্ভব নয়। ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় যুব উন্নয়ন অধিদফতরের জাতীয় যুব নীতিমালা অনুযায়ী বাংলাদেশের ১৮-৩৫ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীকে যুব হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় সদস্য গিয়াস উদ্দিন মামুন প্রতিবেদককে বলেন, যুব দলের গঠনতন্ত্রে বয়সসীমা নেই। তবে সাধারণত যুবকদেরই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে। বাংলাদেশ যুব মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক সাব্বাহ আলী খান কলিন্স এই প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের সংগঠনে যে কেউ সদস্য হতে পারে। আমাদের গঠনতন্ত্র এখনো কোনো বয়সের সীমা রাখা হয়নি। আমরা আশা করছি আগামী জাতীয় কংগ্রেসেই আমরা বয়সের বিষয়টি যুক্ত করতে পারব। আমি মনে করি অবশ্যই বয়সের একটা টাইম ফ্রেম থাকা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ৪৫ থেকে ৫০ ঊর্ধ্বে যুব সংগঠনের বয়সসীমা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। যুব সংহতির সাধারণ সম্পাদক মো. বেলাল হোসেন প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের দেশের কনভেনশন অনুযায়ী ৪৫ বছর পর্যন্ত যুবক। যুব সংহতির গঠনতন্ত্রে ৪৫ বছর পর্যন্ত যুবক নির্ধারণ করা আছে। আমরা সেই বিধান মেনে চলছি। ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে শহীদ শেখ ফজলুল হক মনি বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র গণতন্ত্র, শোষণমুক্ত সমাজ তথা সামাজিক ন্যায়বিচার, জাতীয়তাবাদ, ধর্ম নিরপেক্ষতা অর্থাৎ সকল ধর্মের মানুষের স্ব-স্ব ধর্ম স্বাধীনভাবে পালনের অধিকার তথা জাতীয় চার মূলনীতিকে সামনে রেখে এই যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠাকালে জানানো হয়— বেকারত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা সম্প্রসারণ, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ও আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি গড়ে তোলা এবং যুবসমাজের ন্যায্য অধিকারসমূহ প্রতিষ্ঠা করাই সংগঠনটির লক্ষ্য। তৎকালীন সময়ে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতার বয়স ছিল ৩৩ বছর। সংগঠনটির ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৭৪ সালের প্রথম জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। সেই কংগ্রেসে শেখ ফজলুল হক মনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সংগঠনটির এ পর্যন্ত ৬টি জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৭৮ সালের দ্বিতীয় জাতীয় কংগ্রেসে ৩৮ বছর বয়সে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন আমির হোসেন আমু। যুবলীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে জানান, প্রতিষ্ঠাকালীন ৪০ বছর বয়সীরা যুবলীগের নেতৃত্ব দিতে পারবেন এমন বিধান ছিল গঠনতন্ত্রে। কিন্তু ১৯৭৮ সালের দ্বিতীয় কংগ্রেসের পর এই বিধানটি বিলুপ্ত করা হয়। কারণ তখন দেখা গিয়েছিল বয়সের ধরাবাঁধা নিয়ম থাকলেও অধিকাংশ নেতাই ছিলেন অধিক বয়সী। এমনকি প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যানের চেয়ে অধিক বয়সী নেতাও তৎকালীন কমিটিতে ছিলেন। সেই থেকেই যুবলীগ সদস্য বা নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে বয়সের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। পঞ্চম জাতীয় কংগ্রেসেও যুবলীগের গঠনতন্ত্র সংশোধন হয়েছিল। নতুন করে আবারও গঠনতন্ত্র সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে বয়সের বিষয়ে কোনো সীমাবদ্ধতার বিষয়টি আমলে নেওয়া হবে না বলে জানা গেছে। ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় কংগ্রেসে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন ৩৭ বছর বয়সী মোস্তফা মহসীন মন্টু। ১৯৯৬ সালের চতুর্থ জাতীয় কংগ্রেসে ৪৭ বছর বয়সে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন শেখ ফজলুল করিম সেলিম। ২০০৩ সালের পঞ্চম জাতীয় কংগ্রেসে ৪৯ বছর বয়সে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর কবির নানক। এই কমিটি ২০০৯ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে। ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত হয় সংগঠনটির ষষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেস। এই কংগ্রেসে ৬৪ বছর বয়সে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী। ষষ্ঠ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদের বয়স ৫৮ বছর। ২০১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় ৫০ শতাংশ রয়েছে ৫০ ঊর্ধ্বে। এ প্রসঙ্গে যুবলীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী প্রতিবেদককে বলেন, সৃষ্টিশীলতা কোনো বয়স দিয়ে নির্ধারণ হয় না। যিনি সৃষ্টি করতে পারেন, তিনিই যুবক। যুবকদের কোনো বয়স নেই। যার মধ্যে সৃষ্টিশীলতা আছে, সেই যুবক। এ বিষয়ে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শহীদ সেরনিয়াবাত এই প্রতিবেদককে বলেন, যারা ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগ করে না— সে রকম যেকোনো বাংলাদেশী নাগরিক যুবলীগের সদস্য হতে পারেন। আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের মাঝখানে যুবলীগ। ছাত্র রাজনীতি হয় শিক্ষাঙ্গনে। ছাত্রত্ব চলে গেলে তার ছাত্র রাজনীতি করার সুযোগ নেই। কিন্তু যুবকরা জাতীয় রাজনীতিতে ভূমিকা রাখে। সমাজের এমন কোনো সমস্যা নেই যেটা নিয়ে যুবকরা সোচ্চার ভূমিকা পালন না করে। সেক্ষেত্রে যুবসমাজের নেতৃত্বের জন্য ম্যাচুরিটির দরকার। বয়সের সীমায় বাঁধলে নেতৃত্বের ম্যাচুরিটি থাকে না। অভিজ্ঞতা ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার প্রয়োজন। বয়স এখানে কোনো বিষয় নয়। ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যুবকদের ভূমিকা পরিপক্ক নেতৃত্বের জন্যই সম্ভব হয়েছিল। যুবলীগের নেতৃত্ব প্রসঙ্গে সংগঠনটির অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুর রহমান মুজিব প্রতিবেদককে বলেন, অতীতে মানুষের গড় আয়ু কম ছিল। এখন মানুষের গড় আয়ু ৭০ ঊর্ধ্বে। আগে যুবলীগের সদস্য হওয়া কিংবা নেতৃত্বে প্রশ্নে বয়সের সময়সীমা ছিল। কিন্তু বর্তমানে তা রাখা হয়নি। আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বিভিন্ন সেমিনারে অংশ নিয়ে দেখেছি, সেখানে যারা যুব সংগঠনগুলোকে নেতৃত্বে দেয় তাদের বয়স আমাদের চেয়েও অনেক বেশি।-দ্য রিপোর্ট ২৯ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে