বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৫, ০২:৪৯:৩২

চতুর্মুখী চাপে বিএনপি

চতুর্মুখী চাপে বিএনপি

মোশাররফ বাবলু : দিনে দিনে বিএনপির কোমর ভেঙে যাচ্ছে। দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ বিভিন্নভাবে চতুর্মুখী চাপে পড়েছে দলটি। না পারছে সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে আবার না পারছে দলকে পুনর্গঠন করতে। দেশি-বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে সম্পর্ক করেও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না দলটি। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দল পুনর্গঠনের পর পর্যায়ক্রমে আন্দোলনের কথা বলেছেন। কিন্তু সেই পরিকল্পনাও ভেস্তে যাচ্ছে। ক্রমান্বয়ে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ছে। দলের নেতাকর্মীরা পড়েছেন হতাশায়। খালেদা জিয়া প্রায় দেড় মাস ধরে চিকিৎসার কথা বলে লন্ডনে অবস্থান করছেন। দেশে ফিরবেন কবে এখনও চূড়ান্ত হয়নি। গত ১৫ সেপ্টেম্বর তিনি লন্ডন যান। সেখানে তিনি পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করেন। তার লন্ডন যাওয়ার পেছনে উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক সমর্থন তথা পশ্চিমাদের সঙ্গে আলোচনা করে দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তুলে ধরা, যাতে পশ্চিমা দেশগুলো সব দলের অংশগ্রহণে নতুন নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে বাধ্য করে। কিন্তু খালেদা জিয়া পশ্চিমা দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। এমনকি তিনি প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গেও সুসম্পর্ক রাখার ব্যাপারে তৎপরতা চালিয়েছেন। সব তৎপরতা ব্যর্থতার মধ্যেই হাবুডুবু খাচ্ছেন। লন্ডন যাওয়া সফল হয়নি। ফলে দেশে ফিরতে বিলম্ব হচ্ছে। এ দিকে দেশে বিএনপির সিনিয়র নেতারাও দলকে কিভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নেবেন তা কৌশল নির্ধারণ করতে পারছে না। স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হবে। মন্ত্রিসভায় নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কিনা তা এখনও স্পস্ট করতে পারেনি। অন্যদিকে ২০ দলীয় জোটের শরীক দলগুলো কিভাবে নির্বাচনের ব্যাপারে প্রস্তুতি নেবে সেই দিকনিদের্শনাও বিএনপি দিতে পারছে না। একমাত্র কারণ খালেদা জিয়ার নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন নেতারা। লন্ডন থেকে কবে আসবেন খালেদা জিয়া। এ দিকে বিএনপির দাবির প্রতিও কোনো ধরনের গুরুত্ব দিচ্ছে না সরকার। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে গত জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত টানা ৯০ দিন অবরোধ ও হরতাল দিয়ে সারাদেশে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল বিএনপি। এই আন্দোলনে দুই শতাধিক নিরীহ মানুষের প্রাণ দিতে হয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শত শত বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীর নামে মামলা দেওয়া হয়। গ্রেফতার করাও হয় অসংখ্য নেতাকর্মীকে। এরপরও সরকার খালেদা জিয়ার দাবিকে পাত্তা দেয়নি। এরপর থেকে খালেদা জিয়াসহ দলের নেতারা কূটনীতিকদের মাধ্যমে সরকারকে চাপে রাখার কৌশল নিয়ে সামনে এগোতে চেষ্টা চালায়। কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলার জন্য দলের কয়েকজন নেতাকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু সবাই ব্যর্থ হন। চিকিৎসার উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়া দেশের বাইরে লন্ডন যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি লন্ডনে অবস্থানরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে যান। দেশ থেকে লন্ডন যাওয়ার পর থেকে ঘটে যাচ্ছে একের পর এক ঘটনা। পাঁচ দিনের ব্যবধানে খুন হলেন দুই বিদেশি। এরপর সাদেক হোসেন খোকার ১৩ বছরের সাজার রায়, চেকপোস্টে পুলিশ হত্যা, হোসেনি দালানে বোমাহামলা, দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সিদ্ধান্ত। সম্প্রতি দেশে দুজন বিদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনার সন্দেহের তীর বিএনপির দিকে। এ ঘটনায় ভেসে যাচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগরীর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এমএ কাইয়ুম। ইতালির নাগরিক হত্যাকাণ্ডে এই নেতাকে সন্দেহ করা হচ্ছে। এ ঘটনায় বিএনপি আরও ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছে। বিএনপিনেতাদের ধরপাকড়, মামলা-হামলা, বিএনপির কমিটি পুনর্গঠন, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকে নেতাদের ওপর হামলা, নিজেদের ঘরোয়া কোন্দল, সব মিলিয়ে চতুর্মুখী চাপের মধ্যে রয়েছে বিএনপি। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান এ প্রতিবেদকে বলেন, আপাতত বিএনপির ক্রান্তিকাল চলছে। কৌশলগত কারণে বিএনপিকে বিভিন্নভাবে চাপে রেখেছে সরকার। বিএনপি পুনর্গঠন করে শিগগিরই আবার সাংগঠনিকভাবে চাঙ্গা হবে। তিনি বলেন, দলের শত শত নেতাকর্মীর নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ম্যাডাম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডন গেছেন। কবে আসবেন জানি না। স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়েও দলের ভিতরে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আসম হান্নান শাহ এ প্রতিবেদককে বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপিকে বাইরে রেখেছে সরকার। আগামীতে যেন বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিতে পারে সেই কৌশল ঠিক করে সরকার বিএনপিকে নানামুখী চাপে রাখছে। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিতে পারছি না। যে কোনো ঘটনা তদন্তের আগেই সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা সব দোষ বিএনপির ওপর চাপাতে চান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ এ প্রতিবেদককে বলেন, নেতাকর্মীর নামে শত শত মামলা দিয়ে সরকার বিএনপিকে একের পর এক চাপে রাখছে। তিনি বলেন, সরকার যত ষড়যন্ত্রই করুক না কেন বিএনপিকে নিশেষ করে দিতে পারবে না। আপাতত কঠিন সময় চললেও বিএনপি আবার মাথা তুলে দাঁড়াবে।-আমাদেরসময় ২৯ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে