বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৫, ০৩:২৮:২০

কাইয়ুমের পরে কে? তা নিয়ে দেশে-বিদেশে তোলপাড়

কাইয়ুমের পরে কে? তা নিয়ে দেশে-বিদেশে তোলপাড়

নিউজ ডেস্ক : ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে কাইয়ূম কমিশনারের পর এবার কার নাম আসছে তা নিয়ে দেশে-বিদেশে তোলপাড় শুরু হয়েছে। অনেকের ধারণা, এ খুনের ঘটনায় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অনেকেই ফেঁসে যেতে পারেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ক্ষমতাসীন দলের প্রথম সারির একাধিক নেতার বক্তব্যেও তারই ইঙ্গিত মিলেছে। এ নিয়ে বিরোধী শিবিরে আতঙ্ক ও কূটনৈতিক মহলও সরগরম হয়ে উঠেছে। এদিকে এ ঘটনাকে সরকারের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বলে অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের দাবি, সম্প্রতি দুই বিদেশি নাগরিক হত্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা প্রমাণ করতেই বিএনপি নেতাদের নাম জড়ানো হচ্ছে। বিএনপির জনপ্রিয় নেতাদের মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে তাদের নির্বাচনের অযোগ্য করে মধ্যবর্তী নির্বাচন দেয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার বলেও দাবি করেন তিনি। যদিও ঢাকায় বিদেশি খুনের 'নির্দেশদাতা' হিসেবে মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমএ কাইয়ূমকে শনাক্তের কথা বললেও এরই মধ্যে সুর পাল্টেছেন তিনি। বুধবার আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর তিনি জানান, ওই বিএনপি নেতাকে তারা সন্দেহের তালিকায় রেখেছেন। তাকে (কাইয়ূম) ছাড়া আরো অনেকজনকে সন্দেহ করেছেন, তারাও সন্দেহের তালিকায় আছেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত জোট আগে এক-দুটো বোমা মেরে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে পারেনি। এখন তারা বিদেশি হত্যা শুরু করেছে। তারা এখন নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতেই বিদেশিদের ওপর বিএনপি-জামায়াত জোট হামলা চালিয়েছে। বুধবার হোটেল সোনারগাঁওয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের পানি শোধনাগার উদ্বোধন শেষে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ তাবেলা হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এর নির্দেশ লন্ডন থেকে এসেছে বলে দাবি করেছেন। হানিফ বলেন, বিদেশি হত্যাকাণ্ডে যে বড় ভাইয়ের নাম প্রকাশ হয়েছে তার ওপরেও ভাই আছে। সেই ভাইকে খুঁজে বের করতে হবে। তিনি আরো বলেন, 'বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যখন লন্ডনে যান, তখন তার যাওয়া নিয়ে অনেকেই সন্দেহ করেছিলেন। সেই সন্দেহই সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে। লন্ডনে বসে খালেদা ও তারেক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন।' এদিকে তদন্তে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দারা বলছেন, এসব বক্তব্য স্রেফ রাজনৈতিক। কারো বক্তব্য অনুযায়ী তদন্ত চলছে না। বরং এর অগ্রগতি হচ্ছে নিজস্ব গতিতে। যদিও তারাও তাবেলা সিজার হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রাজনৈতিক নেতাদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছেন। তবে তাদের নাম-ধাম-পরিচয়, এমনকি কোন দলের কোন পর্যায়ের তা জানাতে চাননি। গোয়েন্দাদের ভাষ্য, গ্রেপ্তারকৃতদের দুই কিলারসহ তিনজনকে রিমান্ডে নিয়ে তারা জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তাদের কাছ থেকে এরই মধ্যে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এর সূত্র ধরেই খুনের মূল পরিকল্পনাকারী চক্রকে খোঁজা হচ্ছে। তবে তদন্তে সংশ্লিষ্ট অপর একটি সূত্র জানায়, কিলিং মিশনে অংশ নেয়া খুনিদের দেয়া তথ্য পর্যালোচনায় কাইয়ূম কমিশনারই যে তাদের কথিত বড়ভাই তা তারা নিশ্চিত হয়েছে। তাকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনতে দু-একদিনের মধ্যে পুলিশ সদর দপ্তরের আবেদন করা হচ্ছে। এ ছাড়া লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির প্রথম সারির কয়েকজন নেতার বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে বলে জানায় তদন্তে সংশ্লিষ্ট ওই সূত্রটি। এদিকে এ ঘটনায় রিমান্ডে থাকা চাক্কী রাসেল ও ভাগনে রাসেল এবং কিলিং মিশনে মোটরসাইকেল সরবরাহকারী সাখাওয়াত হোসেন শরীফ জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের দেয়া তথ্যমতে গোয়েন্দারা এ ঘটনার নেপথ্যে থাকা কাইয়ূম কমিশনারের ছোটভাই এমএ মতিনের সঙ্গে তাবেলা হত্যার আগে-পরে বিএনপির আর কোনো নেতার যোগাযোগ ছিল তা খতিয়ে দেখছে। একই সঙ্গে গোয়েন্দারা মতিনকেও খুঁজছে। যদিও তার পরিবারের অভিযোগ, কয়েকদিন আগেই ডিবি পরিচয়ে কয়েকজন যুবক তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে। তদন্তে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিদেশে অবস্থানরত কাইয়ুমের নির্দেশে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় চাক্কী রাসেল, ভাগনে রাসেল ও শুটার রুবেল। খুনিদের টাকা-পয়সা সরবরাহ করেন কাইয়ুমের ছোটভাই গার্মেন্ট ব্যবসায়ী এমএ মতিন। রিমান্ডে থাকা তিনজন একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন বলে জানান তদন্তের তদারকি এক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, হত্যাকাণ্ড ঘটাতে কাইয়ূম কমিশনারকে বিএনপির বড় মাপের কোনো নেতা নির্দেশ দিয়েছিল কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি কাইয়ুমের ছোটভাই এমএ মতিনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, মোবাইল ফোনের কললিস্ট ও ভাইবার রেকর্ড পর্যবেক্ষণ চলছে। হত্যাকাণ্ডের আগে ও পরে মতিনের সঙ্গে বিদেশে আত্মগোপনে থাকা বড়ভাই কাইয়ুমের কয়েক দফা কথোপকথনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া মতিনের অ্যাকাউন্ট থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেনের তথ্য মিলেছে। এ অর্থ কিলারদের দেয়া হয়েছে, নাকি তা ব্যবসায়িক ট্রানজেকশন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা। সূত্র জানায়, কাইয়ুমের ভাইবার নাম্বার পরীক্ষা করে বিএনপির আরো কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে আলাপচারিতার প্রমাণও পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় তাদের মধ্যে কথোপকথনের ভয়েজ রেকর্ড সংগ্রহ করার চেষ্টা চলছে। ওই রেকর্ড হাতে পাওয়ার পর এ বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। কিছু রেকর্ড ইতোমধ্যে সংগ্রহও করা হয়েছে বলে সূত্রটি দাবি করেছে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে অস্ট্রেলীয় হাইকমিশনের মাত্র ৫-৬শ গজ দূরে ৯০ নাম্বার সড়কে দুর্বৃত্তের গুলিতে তাবেলা সিজার নামে এক ইতালীয় নাগরিক খুন হন। তিনি নেদারল্যান্ডসভিত্তিক এনজিও আইসিসিওবিডির প্রজেক্ট ম্যানেজার এবং বারিধারায় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সদস্য ছিলেন। এ ঘটনায় তাবেলার কর্মস্থলের পক্ষ থেকে বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলায় চাক্কী রাসেল ও ভাগনে রাসেল, শুটার রুবেল এবং কিলিং মিশনে মোটরসাইকেল সরবরাহকারী সাখাওয়াত হোসেন শরীফকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে ইতোমধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন শুটার রুবেল। এদিকে দুই বিদেশি হত্যায় বিএনপি নেতাদের জড়িয়ে সরকারের তরফ থেকে দেয়া বক্তব্যে দলের তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত সর্বস্তরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সরকার তাদের পরিকল্পনামাফিক যে কাউকে ফাঁসিয়ে দিতে পারে এমন আতঙ্কে অনেকেই গা-ঢাকা দেয়ার চেষ্টায় রয়েছেন। যদিও বিএনপির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপনের দাবি, নেতাদের বিরুদ্ধে এর সবই প্রোপাগান্ডা; আজগুবি, কাল্পনিক ও অসত্য। এতে প্রকৃত অপরাধীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে এবং হত্যাকাণ্ডের মোটিভ ও খুনিদের বিচার করাও সম্ভব হবে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, 'আমাদের পূর্বে জানানো আশঙ্কাই প্রমাণিত হলো যে, সরকার বিদেশি খুনে বিএনপির কোন কোন নেতার নাম জড়িয়ে দলটিকে হয়রানি করবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের পর সেটি আরো স্পষ্ট হলো।-যায়যায়দিন ২৯ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে