বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৫, ০৫:০১:২৫

নতুন সংকটে বিএনপি

নতুন সংকটে বিএনপি

মজুমদার ইমরান : বিপদ যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না বিএনপির। একের পর এক ঘটনায় রাজনৈতিকভাবে দলটি ক্রমেই আরো কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। চিকিৎসার জন্য দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া লন্ডন গেলেও তার দেশে ফেরা নিয়ে ইতিমধ্যে নানা জল্পনা-কল্পনার সৃষ্টি হয়েছে। খালেদা জিয়া কবে দেশে ফিরবেন তা দলের নেতারাও বলতে পারছেন না। ২৭ অক্টোবর লন্ডনে যুক্তরাজ্য বিএনপি বিশ্বসমাবেশের আয়োজনের ঘোষণা দিয়েও তা বাতিল করা হয়েছে। ওই বিশ্বসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতারা বলছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের দেশে ফেরা দিনক্ষণও চূড়ান্ত হয়নি। তার পায়ের চিকিৎসার জন্য আমেরিকায় যেতে পারেন। ফলে তার দেশে ফিরতে আরো সময় লাগবে। এ অবস্থার মধ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকায় ইতালি নাগরিক তাভেল্লা ও রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও খুনের পেছনে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ইন্ধন থাকার স্পষ্ট অভিযোগ তুলেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ইতালির নাগরিক তাভেল্লা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বিএনপির এক নেতার সংশ্লিষ্টতার কথা গণমাধ্যমে তুলে ধরেন। তিনি জানিয়েছেন, বিএনপির ঢাকা মহানগরের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক কমিশনার এমএ কাইয়ুমের নির্দেশে ইতালির নাগরিক তাভেল্লাকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতারা জড়িত থাকতে পারে বলেও তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন। রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও খুনের পর স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের ভাইকে প্রথমে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায়ও হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের জড়িত থাকারও অভিযোগ উঠেছে। দুই বিদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বিএনপি দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায় বলে কয়েক দিন ধরেই আওয়ামী লীগ নেতারা সরাসরি অভিযোগ করছেন। বুধবার আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, দুই বিদেশিকে হত্যার নির্দেশ লন্ডন থেকে এসেছে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইতালির নাগরিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এমএ কাইয়ুমের জড়িত থাকার কথা জানানোর পর পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে। যদিও মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বিএনপি নেতা এমএ কাইয়ুম ইতালির নাগরিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। টেলিফোনে একটি গণমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, সরকার আমাকে বলির পাঠা বানাতে চায়। সরকার নাটক সাজাচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, ২০ অক্টোবর আমার ভাই এমএ মতিনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে যায়। যদিও পুলিশ এখন পর্যন্ত তা স্বীকার করেনি। দুই বিদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সঙ্গে বিএনপির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতারা। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে রাজনৈতিকভাবে ফায়দা লুটতেই সরকার এসব ঘটনার সঙ্গে বিএনপির নেতাদের নাম জড়াচ্ছে। প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করতেই সরকার এ কৌশল নিচ্ছে বলেও বিএনপির অভিযোগ। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সরকারের নির্দেশের বাইরে দেশে কিছুই ঘটে না। তিনি বলেন, প্রকৃত হত্যাকারীদের আড়াল করতে অনেক হত্যা মামলায় বিএনপির নেতাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। বিরোধী দল নির্মূল করার জন্যই এ ধরনের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা চিনাবাদাম খায়। যারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের গ্রেফতার করতে পারে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহাবুবুর রহমান প্রতিবেদককে বলেন, দেশে কিছু ঘটলেই সরকার প্রথমেই চোখ বন্ধ করে বিএনপির ওপর দায় চাপিয়ে দেয়। এটা নতুন নয়। আমরা দুই বিদেশি নাগরিকসহ যে কোনো নাশকতার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করি। সুষ্ঠু তদন্ত হলেই এই ঘটনার পেছনে কারা জড়িত তা বেরিয়ে আসবে। এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দেশে না ফেরায় দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে না। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে-পরে লাগাতার হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি চালিয়ে মামলা-মোকদ্দমায় দলের শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতাই কারাগারে। কেউ কেউ আত্মগোপনে। গত মার্চে আন্দোলন বন্ধ করে বিএনপি দল পুনর্গঠনের ঘোষণা দেয়। এ পরিস্থিতির মধ্যেই ১৭ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান বিএনপি চেয়ারপার্সন। লন্ডনে বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করে দল পুনর্গঠনসহ আগামীদিনের রাজনৈতিক কর্মসূচি নির্ধারণের কথা দলটির নেতারা জানিয়েছেন। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপার্সনের দেশে ফিরতে বিলম্ব হওয়ায় দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। দলের চেয়ারপার্সনের দেশে ফেরা নিয়ে নানা গুঞ্জনের মধ্যেই দুই বিদেশি নাগরিক হত্যার সঙ্গে বিএনপি নেতাদের নাম জড়িয়ে সরকারের বক্তব্য দলটির নেতাকর্মীদের আতঙ্কিত করে তুলেছে। বিএনপির হাতেগোনা দু’তিনজন স্থায়ী কমিটির সদস্য ছাড়া তেমন কাউকে গণমাধ্যমে কথা বলতেও দেখা যাচ্ছে না।-মানবকণ্ঠ ২৯ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে