শুক্রবার, ০৭ জুলাই, ২০১৭, ১২:৫৮:৪৪

শার্ট-প্যান্ট পরতে চান না নার্সরা

শার্ট-প্যান্ট পরতে চান না নার্সরা

নিউজ ডেস্ক : নার্সদের কথা মনে হলেই আপদমস্তক শ্বেতশুভ্র পোশাক পরা কারও ছবি ভেসে ওঠে। কিন্তু নার্সদের সাদা পোশাক আর থাকছে না। নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর (ডিজিএনএম) নার্সদের জন্য নতুন ইউনিফর্ম নির্বাচন করেছে। তবে নতুন পোশাকের রং, নকশা ও ধরন নিয়ে নার্সরা সন্তুষ্ট নন। দুবার আদেশ জারির পরেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই নতুন ইউনিফর্ম কেউ পরা শুরু করেননি।

২০১৫ সালের অক্টোবরে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নার্সদের পোশাকের রং ও ধরনের কয়েকটি বিকল্প দেখাতে স্বাস্থ্যসচিবকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় গত বছরের ২১ নভেম্বর নার্সদের জাতীয় ইউনিফর্ম পরিবর্তনের জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়।

সেখানে ইউনিফর্মের রং জলপাই ও কালো বলা আছে। নারী সিনিয়র স্টাফ নার্স ও সহকারী নার্সদের জন্য জলপাই রঙের শার্ট, কালো প্যান্ট ও জুতা। মাথার টুপিও জলপাই রঙের। পুরুষদের জন্য জলপাই রঙের শার্ট বা সাফারি, কালো রঙের জুতা ও প্যান্ট।

নারী নার্সিং সুপারভাইজার, নার্সিং কলেজ ও ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ও লেকচারার, সেবা ও উপসেবা তত্ত্বাবধায়কেরা জলপাই রঙের শার্ট বা শাড়ি পরতে পারবেন। তবে জেলা পাবলিক হেলথ নার্স পুরুষ ও নারীদের ইউনিফর্মের রং হালকা বেগুনি। এ ছাড়া ডিপ্লোমা মিডওয়াইফদের জন্য হালকা গোলাপি রং।

অনুমোদনের পর এ বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি ডিজিএনএম নতুন পোশাক পরিধানের জন্য আদেশ জারি করে। তবে তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় মে মাসের ৩ তারিখে আবারও আদেশ দেয়। দেশের কিছু কিছু নার্সিং কলেজ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা নতুন ইউনিফর্ম পরা শুরু করেছেন। তবে কোনো মেডিকেল কলেজ বা হাসপাতালের নার্সরা এখনো শুরু করেননি।

একাধিক নার্স বলেন, প্রশাসন তাঁদের মতামত নেয়নি। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স নাজমা খাতুন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। তিনি পোশাক পরিবর্তনের জন্য প্রশাসনের মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে আলোচনার কথা বললেও আমলারা তা করেননি।

আমরা বিরোধিতা করছি না, কালারটা সমস্যা। আর সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে শার্ট-প্যান্ট সবাই পরতে চাইবে না।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাঁদের বক্তব্য পৌঁছালে তিনি বিষয়টি বুঝতে পারবেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার নাজনীন খানম  বলেন, ‘আমাদের অনেকেরই বয়স ৫০-এর ওপরে। শার্ট-প্যান্ট পরে কাজ করতে অস্বস্তি বোধ করবেন। আনসারদের পোশাকের রঙের সঙ্গে আমাদের পোশাকের রং মিলে যায়। মানুষ আলাদা করতে পারবে না।

এখন তো সাদা পোশাক দেখে রোগীরা দূর থেকে দৌড়ে আসে।’ তিনি আরও বলেন, নার্সরা সাদা সালোয়ার-কামিজ হলেও পরতে রাজি আছেন। বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএনএ) মহাসচিব জালাল উদ্দিন বাদশা বলেন, সাধারণ নার্সরা মেনে নিতে চাইছেন না।

নার্সদের সাদা রঙের পরিচিত বিশ্বব্যাপী। তিনি আরও বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান শুরু করেছে, সেখানে রঙের ভিন্নতা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না বলেও জানালেন। পুরুষ নার্সদের জন্যও জলপাই রঙের শার্ট বা সাফারি, কালো রঙের প্যান্ট ও জুতা পরার জন্য আদেশ জারি করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ডিপ্লোমা নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএনএ) সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘নতুন ইউনিফর্ম নিয়ে নার্সদের মধ্যে অসন্তোষ আছে। দুবার আদেশ জারি হলেও কেউ পরছেন না। সাদা পোশাক একটু নোংরা হলেই বোঝা যায়, ফলে সবারই তাগিদ থাকে ড্রেসটি পরিষ্কার রাখার। কিন্তু অন্য যে রং দেওয়া হয়েছে, তা নোংরা হলেও সহজে বোঝা যাবে না। এখানে পরিচ্ছন্নতার একটা ব্যাপার আছে।’

নার্সদের এই নেতা জানান, ২০১৫ সালে তাঁরা মন্ত্রণালয়ে বৈঠকের পরেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ডিজিএনএমে ইউনিফর্ম বিষয়ে একটি প্রস্তাব পাঠান। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর কাছে তা পৌঁছানো হয়নি।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়; শার্ট-প্যান্ট পরতে চান না নার্সরা, সেখানেও কেউ নতুন ইউনিফর্ম পরা শুরু করেননি। বিএনএ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক ময়েজ উদ্দিন  বলেন, আনসারদের সঙ্গে রং মিলে যাওয়ায় মানুষ নার্সদের আলাদা করতে পারবে না।

এ ছাড়া নারী নার্সদের মধ্যে পোশাকটি নিয়ে আপত্তি আছে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও একই অবস্থা। ডিজিএনএম মহাপরিচালক তন্দ্রা শিকদার নতুন ইউনিফর্মের বিষয়ে বলেন, নতুনটাই থাকছে।

দুবার আদেশ জারির পরেও কারও পরিধান না করা প্রসঙ্গে বলেন, সময় শেষ হয়নি।  তবে বললেন, কোনো সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি। কিন্তু দ্রুতই কার্যকর হবে।-প্রথম আলো
এমটিনিউজ২৪/এম,জে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে