বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৫, ১২:৩৮:৫৪

অস্ট্রেলিয়ার সিদ্ধান্ত ও জঙ্গিবাদ সম্পর্কে যা বললেন জয়

অস্ট্রেলিয়ার সিদ্ধান্ত ও জঙ্গিবাদ সম্পর্কে যা বললেন জয়

নিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের লেখা একটি বিশেষ নিবন্ধ বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ভিত্তিক সংবাদপত্র ‘দা এজ’ এ প্রকাশিত হয়েছে। এতে সজীব ওয়াজেদ জয় অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর বাতিল জঙ্গিবাদকেই বিজয়ী বলে মন্তব্য করেছেন। এমটি নিউজের পাঠকদের জন্য নিবন্ধটির অনুবাদ প্রকাশ করা হলো : যে কোনো হাইস্কুল পড়ুয়া ছেলেই বলতে পারবে, খেলাধুলার তাৎপর্য হলো দলগতভাবে অংশগ্রহন, নিরপেক্ষতার চর্চা, শৃংখলার সন্নিবেশ এবং অপরকে সম্মান করা। আন্তর্জাতিক খেলাধুলাও অব্যাহত আলোচনা ও পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ ও দেশের মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করতে পারে। একারণেই অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের অনির্দিষ্টকালের জন্য বাংলাদেশ সফর স্থগিত শুধুমাত্র খেলোয়াড় ও দর্শকদের জন্যই হতাশাজনক নয় বরং আন্তর্জাতিক সৌজন্যতা দেখানোরও একটি সুযোগ হাতছাড়া হলো বাংলাদেশের। ৯ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশের বিপক্ষে ২ টেস্টের সিরিজ খেলার কথা ছিল অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের। কিন্তু নিরাপত্তাহীনতার অজুহাত দেখিয়ে ক্রিকেট দলের সফর বাতিল করে অস্ট্রেলিয়া সরকার। ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার এখন পর্যন্ত কোনোরকম অঘটন ছাড়াই টেস্ট ও ওয়ানডে আসরের আয়োজন করে আসছে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার উদ্বেগের কথা জানার পর বাংলাদেশ সরকার তাদের খেলোয়াড়দের অতিরিক্ত নিরাপত্তা দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, যেমনটা রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানদের দেওয়া হয়ে থাকে। তারপরও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া তাদের সফর বাতিল করে। আর এই ঘোষণার দিন যদি কেউ বিজয়ী হয়ে থাকে, তা শুধুই জঙ্গিবাদ। ক্রিকেটপ্রেমী ও বাংলাদেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে আমি অস্ট্রেলিয়ার এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছি। আমি বলতে চাই, তাদের খেলতে দেওয়া হোক। সহিংসতার হুমকিদাতাদের সামনে আমাদের কিছুতেই মাথানত করা উচিত নয়। আমাদের উচিত, ক্রীড়ার শক্তিকে দেশ ও সংস্কৃতির মেলবন্ধনের সেতু হিসাবে ব্যবহার করা। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া, উভয় দেশের জন্যই হতাশার। বাতিল হওয়া এ সিরিজ বড় আসরে গুরুত্বপূর্ণ একটা স্থান করে নিয়েছিল। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ক্রমেই বড় হচ্ছে। প্রতিদিনই এর শক্তিবৃদ্ধি হচ্ছে। নিজের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এ মুখোমুখি লড়াই প্রতিযোগিতামূলক ও আনন্দদায়ক হয়ে উঠতো। সিরিজটা অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত ছিল। এ বক্তব্য শুধু আমার একার নয়। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার দলপতি স্টিভ স্মিথও একই মত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তিনি ও তার সহকর্মীরা বাংলাদেশের সঙ্গে খেলার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন। এই সিরিজেই স্মিথ প্রথম কোনো পূর্ণ সিরিজে নেতৃত্ব দিতেন। কাজেই তার বিরক্তি ও হতাশা দুই দেশের বহু ক্রিকেটপ্রেমীকেই ছুঁয়ে গেছে। ‘অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তী ইয়ান চ্যাপেলও স্মিথের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন, যদি ভারত সফরের সময় একই পরিস্থিতির উদ্ভব হতো, তাহলে কি করা হতো? উত্তরটা খুব সম্ভবত হতো, সিরিজ চলবে।’ ‘এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক কারণও রয়েছে। তবে এ সিদ্ধান্ত ছিল খুবই নিম্নমানের পছন্দ। যখন সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছিল, তখন এমনভাবে সফর বাতিল জঙ্গিবাদকেই বিজয়ী করে। আর তা অস্ট্রেলিয়া ও আমার দেশের জন্য পরাজয়। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ এটাই চেয়েছিল।’ বিভিন্ন সময়েই রাজনৈতিক স্বার্থে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করেছে ক্রীড়া এবং বিভিন্ন জাতিকে পরস্পরের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। লড়াইয়ের বিপরীতে অলিম্পিকের কি আর কোনো বিকল্প আছে? জাতিসংঘেরও ক্রীড়ায় অর্থায়নের পেছনে কারণ রয়েছে। আর তা হলো, সম্পর্কোন্নয়েনর মাধ্যমে শান্তির দরজা খোলা। এ নীতি কাজও দিয়েছে। দীর্ঘ নয় বছর পর অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা দুই দেশের দ্বৈরথ দেখতে চলেছিল। তরুণ অস্ট্রেলীয় দলের সঙ্গে নিজের দল কেমন করে, তা দেখতে বাংলাদেশের খেলোয়াড় ও সমর্থকরা মুখিয়ে ছিল। কিন্তু সফর বাতিলের এ সিদ্ধান্ত শুধু দুই দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের দুঃখ দেয়নি, খেলোয়াড় ও কোচদেরও হতাশ করেছে। এটা সত্যিই দুঃখজনক, ক্রীড়া রাজনীতির কাছে পরাজিত হলো। সর্বোপরি, জঙ্গিবাদের কাছে শান্তির সবচেয়ে বড় বাহন মাথানত করলো। এ ঘটনা বা এর পুনরাবৃত্তি কিছুতেই কাম্য নয়। ২৯ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএম/ডিআরএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে