শুক্রবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৫, ০১:৪৪:২৯

আওয়ামী লীগ নেতার ‘বিশাল মতবিনিময় সভা, তাই স্কুল বন্ধ

আওয়ামী লীগ নেতার ‘বিশাল মতবিনিময় সভা, তাই স্কুল বন্ধ

আনোয়ার পারভেজ, বগুড়া: কাহালু পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের ফটক থেকে শুরু করে বিদ্যালয়ের চারপাশজুড়ে বেশ কয়েকটি ডিজিটাল ব্যানার। কাহালুর পৌর মেয়র হেলাল উদ্দিন কবিরাজের ছবিসংবলিত সেসব ব্যানারে মেয়রের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি। সঙ্গে আছে আগামী নির্বাচনে তাঁকে আবার ভোট দেওয়ার আহ্বান। বিদ্যালয়ের মাঠের পূর্ব প্রান্তে ডেকোরেটরের কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছে একসঙ্গে ১২ হাজার মানুষ বসে খেতে পারে—এমন প্যান্ডেল। দক্ষিণ দিকের আরেক প্যান্ডেলের মঞ্চে নেতা-কর্মীদের নিয়ে বসে আছেন হেলাল উদ্দিন। গতকাল বৃহস্পতিবার, সকাল ১০টা। মাইকে বক্তব্য চলছে। মঞ্চে টাঙানো ব্যানারে লেখা রয়েছে ‘পৌর নির্বাচন উপলক্ষে পৌরবাসীর সঙ্গে বিশাল মতবিনিময় সভা’। মাঠের উত্তর দিকের শ্রেণিকক্ষের ভবনের বারান্দা ঘেঁষে একসঙ্গে জ্বলছে ২১টি চুলা। এসব চুলায় রান্নায় ব্যস্ত বাবুর্চিরা। মাঠের আরেক প্রান্তে কাহালু মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ভবনের সামনে ডেকোরেটরের রঙিন কাপড় দিয়ে ঘিরে তৈরি করা হয়েছে আরেক প্যান্ডেল। সেখানে বসানো তিনটি চুলায় চলছে হিন্দু নেতা-কর্মীদের জন্য আলাদা রান্না। এই ‘বিশাল মতবিনিময় সভার’ কারণে কাহালু পাইলট উচ্চবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে। আর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রাখা না হলেও শ্রেণিকক্ষের সামনে রান্না চলায় শিশুদের পাঠদান কার্যত বন্ধ হয়ে পড়ে। মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলাল উদ্দিন কাহালু মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি। অন্যদিকে কাহালু পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের সভাপতি তাঁর ভাই ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি কামাল উদ্দিন কবিরাজ। কাহালু পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফকির মোহাম্মদ আবদুস সালাম বলেন, ‘মেয়রের নির্বাচনী অনুষ্ঠানের জন্য নয়, ১ নভেম্বর থেকে অনুষ্ঠেয় জেএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের সিট বসানো ও প্রস্তুতির জন্য নোটিশ দিয়ে বৃহস্পতিবার পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’ তবে কাহালু উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মকবুল হোসেন বলেন, ‘পাবলিক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কোনো বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা যাবে না। কাহালু পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার পাঠদান বন্ধ ঘোষণার ব্যাপারে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি।’ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্-প্রাথমিক ক্লাসে ৭৮ জন শিশুর মধ্যে গতকাল উপস্থিত ছিল মাত্র ৫ জন। অন্য ক্লাসেও উপস্থিতি ছিল খুবই কম। তৃতীয় শ্রেণির কুমারী সুম্মিতা রানী বলে, ‘মাইকের শব্দে ম্যাডাম ক্লাসে কী বলছেন কিছুই শুনতে পাচ্ছি না।’ এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ কে এম শামছুল আলম বলেন, ‘মাঠ উচ্চবিদ্যালয়ের। শ্রেণিকক্ষের সামনে প্যান্ডেল করলেও আমার করার কিছুই ছিল না।’ এই রান্নার জন্য আনা হয়েছে ৬০ জন পেশাদার বাবুর্চি। বাবুর্চিদের গায়ে পৌর মেয়র হেলাল উদ্দিনের ছবিসহ কালো টি-শার্ট। বাবুর্চি দলের প্রধান শাহজাহান আলী বললেন, ১৫ হাজার লোকের খাবার রান্না হচ্ছে। জবাই দেওয়া হয়েছে ১০টি গরু-খাসি। প্রায় ২০ মণ মাংসের সঙ্গে ৫০ মণ আলু দিয়ে চলছে রান্না। গতকাল এই মতবিনিময় সভার আয়োজনস্থলে হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সামনে পৌরসভা নির্বাচন। জনমত যাচাইয়ের জন্যই পৌরবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছি। এতে ১৫ হাজার কর্মী-সমর্থক যোগদান করবেন। জনগণ মত দিলে নির্বাচনে প্রার্থী হব। মতবিনিময় সভা শেষে নেতা-কর্মীদের দুপুরে খাওয়ার দাওয়াত করেছি। এতে কত খরচ হবে সেটা বলতে পারব না।’ পৌর মেয়রের এই আয়োজন খোদ কাহালু উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যেই ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে এভাবে ভোটারদের খাওয়ানো একেবারে নৈতিকতাবিরোধী কাজ। তা ছাড়া দলীয়-সমর্থনে এবার নির্বাচন হবে। দলের সিদ্ধান্তের আগেই কোনো নেতা প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিলে তা হবে গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী।-প্রথম আলো ৩০ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/মাহমুদ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে