নিউজ ডেস্ক : সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিজের অবস্থানের কারণে আওয়ামী লীগের সমালোচনার জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘শুধু আমার একার যুক্তি ছিল না, আরও সাতজন সিনিয়র ল ইয়ার আমার সঙ্গে একমত হয়েছেন, সাতজন জাজ পুরো একমত হয়ে রায়টি দিয়েছেন। আমরা তো সবাই পাগল হয়ে যাইনি।’
গতকাল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন অন্যতম সংবিধানপ্রণেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় আপিল বিভাগে বহাল রাখার পর এ নিয়ে সংসদ অধিবেশনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্যরা।
তারা ড. কামালের ভূমিকারও কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কামাল হোসেন বলেন, তার যুক্তি তিনি লিখিতভাবে আদালতে উপস্থাপন করেছেন। আওয়ামী লীগের নেতারা তার অপরিচিত কেউ নন। তারা চাইলে এই বক্তব্যের অনুলিপি তিনি তাদের কাছে পাঠিয়ে দেবেন।
গণফোরাম-প্রধান বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর সরকার বলেছিল, “সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় রাষ্ট্রের প্রয়োজনে এ নির্বাচন করতে হচ্ছে। পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে আমরা খুব শিগগিরই আলোচনা করব। সবার সঙ্গে আলোচনা করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করব। ” সংবাদপত্রে এসব খবর প্রকাশিত হয়েছে। সে নির্বাচন নিয়ে আদালতেও প্রশ্ন উঠেছিল।’
তিনি বলেন, ‘তখন আমি পত্রিকায় প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত বক্তব্য আদালতে উপস্থাপন করে বলেছি, যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন সরকার যেহেতু বলছে, সবার সঙ্গে আলোচনা করে নতুন নির্বাচন দেবে; সেহেতু তাকে সুযোগ দেওয়া উচিত। এরপর সাড়ে তিন বছর পেরিয়ে গেছে। আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অপেক্ষায় আছি আলোচনার। কবে তারা আলোচনার উদ্যোগ নেবেন, ডাক দেবেন, আমরা সেই অপেক্ষায় আছি। আশা করি সরকার আলোচনার উদ্যোগ নেবে।’
ড. কামাল বলেন, ‘বর্ধিত সভায় সবাই বলেছেন দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মানুষ উদ্বিগ্ন। মানুষ বিরাজমান এ অবস্থার পরিবর্তন চায়। গণতান্ত্রিকভাবে এই পরিবর্তনের জন্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজন। এ ছাড়া দলের সবাই গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের পক্ষে একটি জাতীয় ঐক্য চায়। ’
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের বিষয়ে কার্যকর গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। জনগণ ক্ষমতার মালিক, এ বিষয়ে কোনো বিতর্ক নেই। সেই জনগণকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ দিতে হবে। নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। সংসদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিত্ব না থাকলে জবাবদিহিতা থাকে না। গণতন্ত্র ও জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক থাকে না। ভুয়া জনপ্রতিনিধি হলে রাষ্ট্রে জনগণের মালিকানা থাকে না। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে রাষ্ট্র কার মালিকানায় থাকবে? জনগণ কার মালিকানায় থাকবে? সংবিধান মোতাবেক রাষ্ট্র জনগণের মালিকানায় থাকবে। অন্য কারও অধীনে থাকলে তা হবে অবৈধ।’
বর্তমান সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব কিনা— জানতে চাইলে ড. কামাল বলেন, ‘যে কোনো সরকারের অধীনেই তা সম্ভব যদি নিরপেক্ষতা থাকে। নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক ব্যাপার। যারা নির্বাচন তদারকি করবে, তাদের নিরপেক্ষ থাকতে হবে। ’
এমটিনিউজ/এসবি