শুক্রবার, ০৪ আগস্ট, ২০১৭, ০৮:২৭:৫৫

আতঙ্কে রয়েছেন বাংলাদেশে বসবাসরত তুর্কি নাগরিকরা

আতঙ্কে রয়েছেন বাংলাদেশে বসবাসরত তুর্কি নাগরিকরা

নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসরত তুর্কি নাগরিকরা আতঙ্কে রয়েছেন। সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত তুর্কি রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের পরই এই আতঙ্ক বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ থাকা তুর্কিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেশটির রাষ্ট্রদূত ডেভরিম অজতুর্ক অনুরোধ করেন।

তার দাবি, বাংলাদেশে বসবাসরত অনেক তুর্কিই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। যারা এক বছর আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের পতনের  চেষ্টার সঙ্গে জড়িত ছিল। এরই মধ্যে পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ায় অনেক তুর্কি নাগরিককে বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল।

২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের বিরুদ্ধে ওই ব্যর্থ অভ্যুত্থান চেষ্টার পর তুরস্ক সরকার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের সহায়তায় তারা কাজটি করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তুর্কি নাগরিকের দাবি, ঢাকার তুর্কি দূতাবাস জোর করে তার পাসপোর্টের মেয়াদ বাতিল করে দিয়েছে। বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া অনেক তুর্কি শিশুর জাতীয়তার কোনও বৈধ কাগজপত্র নেই এবং কনস্যুলেট কাগজপত্রও দিতে চাইছে না।

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত অজতুর্ক দাবি করেন, ঢাকায় বসবাসরত অনেক তুর্কি বিশেষ করে যারা তুর্কি হোপ স্কুলে কাজ করছেন তারা ‘গুলেনিস্ট সন্ত্রাসী সংগঠন’ এর সঙ্গে জড়িত। তুর্কি-বাংলাদেশি চেম্বার অব কমার্সও এর সঙ্গে জড়িত। তাদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

তবে এই আহ্বান কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক। তিনি বলেন,‘এই বক্তব্যের জন্য তুরস্কের দূতাবাসের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

ঢাকায় বসবাস করা তুর্কিরা জানিয়েছেন, তারা নিজ দেশের রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামাতে চান না। বাংলাদেশ পাঁচ বছর ধরে বসবাস করা এক তুর্কি নারী জানান, তারা বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের চেষ্টা করছেন। তারা জানেন না তুরস্কে কী হচ্ছে। শুধু খবরে দেখেছেন।

ওই নারীর দাবি, তাদের সন্তানদের কোনও জন্মনিবন্ধন দেওয়া হয়নি। সারা বিশ্বেই তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। তুর্কি রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যের তারা খুবই অবাক হয়েছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা বন্ধু ও আত্মীয়দের কাছ থেকে জানতে পারছেন যে সবাই এমন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন।   

ঢাকাস্থ একটি তুর্কি রেস্টুরেন্টের মালিক জানান, তুর্কি সরকার এমন নিষ্পাপ মানুষদের দায়ী করছেন যারা দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একদমই সচেতন নন। তুরস্কে থাকা আমার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষকসহ সব পেশার মানুষদেরই গ্রেফতার করা হচ্ছে।

তুর্কিপার্জ ডটকম নামে একটি ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ওই ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৪৫ হাজার তুর্কি নাগরিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে, ১ লাখ ২২ হাজার ৭৫৬ জনকে। আর ২৭৪ সাংবাদিকসহ গ্রেফতার হয়েছেন ৫৬ হাজার ৯৮৭ জন।

এছাড়া ৮ হাজার ৫৭৩ জন শিক্ষাবিদ, ৪ হাজার ৪২৪ জন বিচারক ও আই্নজীবী তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ২ হাজার ৯৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে।

ওই রেস্টুরেন্টর মালিক বলেন, ‘তুরস্ক তাদের নিজেদের জনগণকেই দায়ী করছে যেটা খুবই দুঃখজনক। শুধু সন্দেহের বশেই এত মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সরকারের কাছে কোনও প্রমাণ নেই।’

১৩ বছর ধরে বাংলাদেশে বসবাস করা এই তুর্কি নাগরিক বলেন, এর আগে কখনওই এত উদ্বিগ্ন ছিলেন। তিনি বলেন,‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশ। কিন্তু আমি তুরস্কে থাকলে খুবই চিন্তিত থাকতাম। গত রমজান মাসে তুরস্কে আমি মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যাই। এখন আমি চিন্তিত যে তুরস্কে আরেকবার গেলে বাংলাদেশে ফিরে আসতে পারবো কিনা।’

তার দুই ছেলে ও এক মেয়ের বাংলাদেশেই থাকে এবং তাদের তুর্কস্কের পাসপোর্ট রয়েছে। প্রবাসী নাগরিকদের গ্রেফতার করতে হলে সরকারকে অবশ্যই প্রমাণের ভিত্তিতে করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি তুর্কি রাষ্ট্রদূতের উদ্দেশে বলেন, সন্ত্রাসী বলার আগে ভালোভাবে চিহ্নিত করে বলা উচিত। কারণ বাংলাদেশে থাকা বেশিরভাগ তুর্কিই জানে না গতবছর কিভাবে অভ্যুত্থান হয়েছিল।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অসন্তুষ্ট : গত কয়েক বছর ধরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে তুরস্কের অবস্থান এবং গোলাম আজম ও মতিউর রহমান নিজামীকে সমর্থন করায় তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক টানাপড়েন চলছে।

গত বছর মে মাসে নিজামীর ফাঁসির পর তুরস্ক তাদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নেয়। তবে তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর নতুন সরকারকে সমর্থন দেয় বাংলাদেশ। এরপর রাষ্ট্রদূত পুনঃনিয়োগ করে তুরস্ক।

তবে সম্প্রতি তুর্কি রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য নিয়ে ফের দুইদেশের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি ভালো লাগেনি। আমরা তার এমন মন্তব্যে খুবই হতাশ।’

১ জুন দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করে দেয় তুরস্ক। খুব শিগগিরই এটা হবে এবং সেখানেই এই বিষয় নিয়ে আলোচনা বলে আশা প্রকাশ করেন ওই কর্মকর্তা।

পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক বলেছেন,‘যেহেতু তারা কূটনৈতিক শিষ্টাচার ভঙ্গ করেছে, তাই আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। তবে কী ব্যবস্থা নিয়েছি সেই বিষয়ে এখনই বলছি না।’ -ঢাকা ট্রিবিউন থেকে অনুদিত

এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে